বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] কয়েকদিন আগে ভারতে "বিষাক্ত মদ" পান করে প্রায় দেড়শর মত মদখোর ইহলোক ত্যাগ করেছে। আরো কয়েকশ মদখোর হাসপাতালে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। খবরটি শোনার সাথে সাথেই এইসব মদখোরদের পরিবারগুলোর কথা চিন্তা করছিলাম।
ভেবে দেখুনতো সেইসব ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কথা যাদের বাবা মদ খেয়ে মারা গেছে। ভেবে দেখুনতো সেই বিধবার কথা যার স্বামী অথবা সেই বোনের কথা যার ভাই অথবা সেই বাবা মার কথা যার সন্তান এই কুকর্ম করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। এ মদখোরগুলো তো মরে গিয়ে বেঁচে গেল কিন্তু একইসাথে তারা তাদের পরিবারকে সমাজের কাছে ছোট করে গেল।
"বিষাক্ত মদ" খেয়ে এইসব কুলাঙ্গার মদখোরগুলো তো শাস্তি পেল কিন্তু আমাদের সমাজে যারা "ভালো মদ" খায়, বিভিন্ন নামী দামী ব্র্যান্ডের "বিশুদ্ধ ও ভালো মদ" খায় তাদের কি হবে? তারা কি কোন শাস্তিই ভোগ করবে না? অবশ্যই করবে। আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বইয়ে একটি হাদীস পড়েছিলাম যেটাতে উল্লেখ ছিল মদের সাথে জড়িত দশ প্রকার ব্যক্তি নরকে যাবে।
এ হাদীসটি আমার মনে একবারে গেঁথে গিয়েছিল। আমি কখনো কল্পনাই করি নাই যে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশেও মদখোর মাতালদের কালো থাবা এভাবে বিস্তার করবে। ক্লাস নাইন টেনে থাকতেই কিছু ফ্রেন্ডের কাছে তাদের মদ খাওয়ার "রোমাঞ্চকর কাহিণী" শুনতাম আর আমি খুবই অবাক হতাম। স্কুল কলেজের গন্ডি পার হয়ে যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হই তখন বুঝতে পারি যে, আমাদের দেশের যুব সমাজের অস্বাভাবিক রকমের আসক্তি মদের প্রতি। ভার্সিটির ছেলেপেলেরা মদ ছাড়া কোন পার্টিই করতে পারেনা, ডিজে পার্টিগুলো মদ, বিয়ার ও অশ্লীলতায় ভরপুর।
কোথাও ঘুরতে গেলেও তাদের মদ চায়, এমনকি আমাদের ভার্সিটির মেয়েরাও পিছিয়ে ছিল না। এখানেও তারা তাদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এক মেয়ে ক্লাসমেটের বাবার তো মদ ও বারের ব্যবসা ছিল। এইসূত্রে সে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ টেস্ট করেও দেখেছে আর সেই গল্প আমাদের কাছে এসে বলতো।
আমর মাঝে এক চরম বিস্ময় কাজ করতো।
এসব কুকীর্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। মদ খেয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় মাতলামী করছে এমন দৃশ্যও আমি দেখেছি। আমার প্রিয় ব্লগার ভাই ও বোনেরা, আপানাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, মানবতার মুক্তির সনদ, সর্বশেষ ঐশী বিধান পবিত্র কুরআনে মদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে অত্যন্ত কঠোরভাবে। পবিত্র কুরআন বলে, তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ।
আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। [সূরা নং ২ আল বাকারা : আয়াত নং ২১৯ পবিত্র কুরআন]
পবিত্র কুরআন আরো বলে, হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? [সূরা নং ৫ আল মায়েদা : আয়াত নং ৯০ পবিত্র কুরআন]
ইসলামে মদ হারাম, হারাম এবং হারাম। মদ্যপায়ী শুধুমাত্র তার নিজেরই ক্ষতি করে না সে একই সাথে তার পরিবার ও সমাজের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। আমি সরকারে প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, সরকার যেন মদের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়। মদকে সমাজের সকল স্তরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
সকল বার গুলো বন্ধ করে দেয়। যারা মদের উৎপাদন, বিপনন ও মদ্যপানের সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়। বিজয়ের এই মাসে আমি এই আশাবাদ ব্যক্ত করি যে, আমার প্রাণ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যেই মদ, মাদক ও ধুমপানমুক্ত হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।