শক্তের ভক্ত, নরমের জম। জেনে গ্যাছে এবার কানা আজম। আকাশ জয়ের স্বপ্ন অনেক দিনের। এই স্বপ্ন পূরণ করতেই একের পর এক নভোযান পাঠানো হয়েছে। চাঁদের পর মঙ্গলগ্রহেও পৌঁছে গেছে মানুষের তৈরি যন্ত্র।
অন্যান্য গ্রহেও পাঠানো হচ্ছে নানা ধরনের রোবট। দারুণ দারুণ সব খবর নিয়ে আসছে এসব যান। আমাদের জ্ঞান-ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে। তবে এটা করতে গিয়ে কিছু সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। সব রোবট বা মহাকাশ যান লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না - কোনো কোনোটি মাঝপথেই ভেঙে পড়ছে, কোনোটি পথ হারিয়ে ফেলছে।
আর এখানেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন একটি জটিলতা। মহাকাশও জঞ্জালে ভরে যাচ্ছে।
ব্যবহৃত রকেট, বিধ্বস্ত উপগ্রহ, সবই আছে মহাকাশে। বেশির ভাগের আয়তন এক সেন্টিমিটারেরও কম। একটার সঙ্গে আরেকটা সংঘাতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
মাঝে মাঝে এসব বস্তু পৃথিবীতেও আছড়ে পড়ে। সেপ্টেম্বরে ২০ বছরের পুরনো পরিত্যক্ত একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে স্কাইল্যাব নিয়ে মারাত্মক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
এসব জঞ্জাল কিন্তু স্থির নেই। এগুলো যেকোনো সময় মহাকাশযানে আঘাত হেনে মারাত্মক য়তি ঘটাতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, এসব জঞ্জাল যেকোনো সময় কোনো মহাকাশযানে ছিদ্র সৃষ্টি করার পাশাপাশি কৃত্রিম উপগ্রহকে তিগ্রস্ত করতে পারে।
ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের চৌম্বক জাল ও বৃহৎ ছাতা আকৃতির যন্ত্রাংশ মহাকাশে পাঠানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নীতিমালা এবং এসবের উপযুক্ত ব্যবহারের বিষয়ে আরো গবেষণা চালানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
এসব জঞ্জালের মধ্যে রয়েছে মহাকাশে ফেলে আসা অতি ুদ্র যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে পুরনো রকেটের বুস্টার ও কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) পর্যন্ত বিভিন্ন আকার ও আকৃতির বস্তু।
সংস্থাটি জানায়, কম্পিউটারের মাধ্যমে পাওয়া কিছু চিত্রে দেখা গেছে যে, কপথে এসব জঞ্জাল এত বেশি পরিমাণে জমেছে যে, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে তারা আরো খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে ‘মহাকাশে জঞ্জাল’ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা শুরু হলেও তা সফল না হওয়ার পেছনে দুটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০০৭ সালে চীন একটি ‘অ্যান্টি-স্যাটেলাইট’ অস্ত্রের পরীা চালায়। এতে একটি আবহাওয়া স্যাটেলাইট বিধ্বস্ত হয়ে লম্বা অন্তত দেড় লাখ খণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি খণ্ডের আকার ১ সেন্টিমিটার বা তার কাছাকাছি।
এর দুই বছর পর মহাকাশে একটি সচল এবং অপর একটি অচল স্যাটেলাইট বিধ্বস্ত হয়। এতে জঞ্জালের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।
এ গবেষণার প্রধান ডোনাল্ড কেসলার বলেন, এ দুটি ঘটনাতেই কপথে গত ২৫ বছরে যা জঞ্জাল জমেছিল তা দ্বিগুণ হয়েছে।
কপথে প্রায় ২২ হাজার বৃহৎ আকারের জঞ্জাল ছড়িয়ে আছে, তবে ুদ্র কোনো অংশ থেকেও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনকেও মাঝে মাঝে কিছু জঞ্জালের সাথে সংঘর্ষ হওয়া থেকে রা করতে হয়। এগুলোর গতি কখনো কখনো ঘণ্টায় ২৮ হাজার ১৬৪ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গত জুনে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন এ ধরনের কিছু জঞ্জালের সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ওই সময় স্টেশনটিতে অবস্থানরত ৬ মহাকাশচারী পৃথিবীতে জরুরি অবতরণের জন্য প্রস্তুতি পর্যন্ত নিয়ে ফেলেন।
কেসলার বলেন, পরিস্থিতি খুবই সঙ্কটজনক। কারণ সংঘর্ষের ফলে জঞ্জালের সংখ্যা আরো বাড়তে থাকে। এতে আমরা সেখানকার পরিবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি।
অবশ্য এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টাও চলছে।
ইতালির গবেষকরা মহাকাশ জঞ্জাল পরিষ্কার করার এক পরিকল্পনা করেছেন। পরিকল্পনা অনুসারে, গবেষকরা এমন একটি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাবেন যেটি মহাকাশের জঞ্জালগুলোকে একত্র করবে এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পাঠিয়ে ধ্বংস করে ফেলবে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর কম খরচেই ৫ থেকে ১০টি জঞ্জাল সরিয়ে ফেলা যাবে।
মহাকাশ কল্পনাতীত বিশাল বলে এখনো আমরা স্বস্তিতে আছি। তা ছাড়া বিষয়টা গুটিকতক দেশের হাতে সীমিত।
আরো বেশি বেশি দেশ যখন মহাকাশ জয়ে নামবে, তখন পরিস্থিতি কত ভয়াবহ হতে পারে, তা ভেবে বিজ্ঞানীরা এখনই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। আর এ কারণেই তারা এখনই এ ব্যাপারে সবাইকে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।