আব্দুল করিমের মেজাজটা আজ বেশ ফুরফুরে। ছুটির দিন। আজ ১৬ ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। সকালে নাস্তার পর বাসার সামনে রাস্তায় একটু হাঁটতে বেরিয়েছে।
শীতের আমেজ, রাস্তায় তেমন একটা যানযট নেই। কেমন একটা নিরিরিলি, ঠান্ডা শান্ত পরিবেশ চতুর্দিকে। আব্দুল করিম পরিবেশটা বেশ উপভোগ করে।
রাস্তায় যাদের দেখা যাচ্ছে তারা অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। ধনি ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ঘুম এখনো ভাঙেনি।
তারা বিজয় দিবসের ছুটির সকাল উপভোগ করছে বিছানায়।
আব্দুল করিম নিজেকে কোন দলে ফেলবে ঠিক বুঝতে পারেনা। সে কি নিম্নবিত্ত নাকি নিম্নমধ্যবিত্ত? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে চলে আব্দুল করিম।
হঠাৎ চোখে পড়ে, একজন মধ্য-বয়সী ফেরীওয়ালা কাঁধে একঝাঁক বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বিক্রির উদ্দেশ্যে। আব্দুল করিম তার সামনে দাঁড়ায় এবং একটা পতাকা নির্বাচন করে জিজ্ঞেস করে, ওই মিয়া পতাকা কত? মিয়া বলে, দশ ট্যাকা।
করিম: পাঁচ টাকা দিবা?
মিয়া: না, স্যার, একদাম।
মেয়েটা কয়েকদিন আগে একটা পতাকার জন্য বায়না করছিল। আব্দুল করিম আর কিছু না ভেবে পকেট থেকে একটা দশ টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে, পতাকাটি নিয়ে নেয়। পতাকাটি একটি প্লাস্টিকের স্ট্রতে লাগানো, কাজেই ভাঁজ করে পকেটে নেয়া যাবেনা। হাতে নিয়েই আব্দুল করিম এগিয়ে চললো।
সে লক্ষ করলো, ফেরিওয়ালার মুখের অভিব্যাক্তিতে কোন পরিবর্তন আসলো না। মনে হয় তার কাঁধের সবগুলো পতাকা বিক্রি করতে না পারলে এই পাথর-মুখে কোন মানবিয় অভিব্যাক্তি ফোটা সম্ভব নয়। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে বাসার দিকে এগিয়ে চলে। অন্যমনস্কতার কারণে, ফুটপাথের পাশে বসে থাকা এক ভিক্ষুকের ভিক্ষার থালার উপর পা পড়তে পড়তে সে কোনমতে সামলে নেয়। সে শুনতে পায় পিছন থেকে ভিক্ষুকটি বলে ওঠে, জয়বাংলা।
ভ্রুক্ষেপ না করে সে এগিয়ে যায়। তালা চাবি মেরামতওয়ালা, মুরগী ওয়ালা, সব্জিওয়ালাকে পাশ কাটিয়ে সে এগিয়ে যায়। তার কাছে মনে হয় এরা সবাই আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে। যেন সে কোন এক আজানা বস্তু হাতে নিয়ে চলেছে। কোথ্থেকে এক আড়ষ্টতা এসে তাকে ভর করে।
এরা কি ভাবছে, পতাকা বহন করার অধিকার কি তার নেই? এরা কি মনে করে স্বাধীনতার সুফল সে একাই ভোগ করছে, এরা তা করতে পারছে না? এইসব এলোমেলো ভাবনা ভাবতে ভাবতে সে বাসার কাছাকাছি পাড়ার দোকানটার কাছে এসে পড়ে। দোকানের সামনে পাড়ার ক'য়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আব্দুল করিমের মনে হয় ছেলেগুলো বিদ্রুপাত্মক কিছু বলবে। আব্দুল করিম আড়ষ্টভাবে এগিয়ে যেতে থাকে। ছেলেগুলো ক্রিকেট নিয়ে তুমুল তর্কে মত্ত, তারা আব্দুল করিমকে খেয়ালই করলো না।
বাসায় ঢুকে গেলো আব্দুল করিম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।