আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের আব্দুল

এসো, গল্প শোনাই।

ভার্সিটি জীবনের কিছু কিছু গল্প ব্লগে লিখব বলে ঠিক করলাম। শুরুতে আমার বন্ধু আব্দুলকে নিয়ে না লিখলে অন্যায় হয়ে যাবে। গল্পটা ভার্সিটির থার্ড ইয়ার এর। পরিক্ষা চলছে।

কোর্স ড্রপ দিতে দিতে এমন অবস্থা আমাদের, শুধু একটা খাতাই লাগে হিসাব রাখতে। এর মধ্যে আব্দুল আবার বাই ডিফল্ট প্রতিটা কোর্সের ড্রপার। স্ট্যাট পরিক্ষা পরের দিন। গত বছর আব্দুল ফেল মারছিল। সেই বার পরিক্ষা দিয়া আব্দুল ডিক্লেয়ার দিছিল কমছে কম A- পাবে, যেহেতু নন-ডিপার্টমেন্টাল সাবজেক্ট; একটু পিছলা খাইলে B+ পাবে।

বরাবরের মত আমি আশাবাদী ছিলাম ফেল মারবে। ঘটনা দেখা গেলো আসলেই তাই। কিন্তু আকামে আব্দুল হাল ছাড়ার লোক না। কয়েক দিন খুব হম্বি তম্বি করল খাতা তদন্ত করাবে। এর পর আর খবর নাই।

এই বার সে আরও সিরিয়াস। Hall- এ চলে গেল পরিক্ষার আগের রাতে। মেসে নাকি পরার পরিবেশ নাই। সাথে বাকি ড্রপার গুলারে নিয়া গেল, হাসান, সারওয়ার, বখতিয়ার, সিহান। যেহেতু গতবারের মত এইবারও সে বই কিনে নাই,দুই ঘন্টা সময় নিয়া বইটারে যত্ন করে খন্ড খন্ড করল।

এর মধ্যে তার ধার্মিক সত্ত্বা চাড়া দিয়া উঠলো। সুন্নাত, ফরজ, নফল সহ দুই ঘন্টা ধরে এশার নামায পরল। অত:পর অধ্যয়নের পালা। এক পাতাও পড়া শেষ হয় নাই, আব্দুল হাসানের সাথে একটা Theory নিয়া বিষম তর্ক শুরু করলো। হালে পানি না পেয়ে কিছুক্ষণ পর অফ মেরে গেল।

কিছুক্ষণ পর আবার, এইবার সিহান এর সাথে। সারওয়ার হাত জোর করে আব্দুলরে থামাইল। এরপর সে বখতিয়ারকে বলে, উমুক চ্যাপ্টার তুমুক টপিক পরছে নাকি এবং না পড়া থাকলে সে নাকি সহজ পদ্ধতিতে বুঝানোর ক্ষমতা রাখে। কোনো উত্তর না দিয়া বখতিয়ার গম্ভীর মুখে নিজের পড়া চালায় গেলো। এই করতে করতে রাত দুইটা বাজলো।

বাকি পোলাপান পাশ করার আশা ছেড়ে দিলো। আব্দুলের তুমুল আপত্তি সত্ত্বেও বাকি চারজন সিদ্ধান্ত নিলো আগামীবার পরিক্ষা দিবে এবং শুরু করলো তাশ খেলা। আব্দুল তার সিদ্ধান্তে অটল। পরিক্ষা সে দিবেই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়া শুরু করলো এবং পাচ মিনিটের মধ্যে হা করে ঘুম।

ভোর ছয়টা পর্যন্ত বাকি চারটা তাশ খেলা শেষ করে ঘুমাইতে গেলো। এই দিকে সাতটা বাজতে না বাজতে আব্দুলের ঘুম শেষ; উঠে কাজা নামাজ পড়ল এবং মনোযোগ সহকারে বই এর Preface খুলে বসলো। কি কি প্রশ্ন এই বছর আসতে পারে এই নিয়ে বিগত বছরের পেপার গুলা সকাল আটটা পর্যন্ত গবেষণা করে বাকি গুলারে ঘুম থেকে ডাকা শুরু করলো। আধা ঘন্টা ধরে হাউ কাউ করে ঘুম থেকে জাগাইলো এবং পরিক্ষা হলে গেলো। ড্রপারদের আলাদা কোনো ফিক্সড সিট নাই।

পরিক্ষার সময় পাচটা একসাথে পাশাপাশি বসলো। স্বভাবসুলভ মতো প্রথম থেকেই বখতিয়ার সবাইকে ফুসলানো শুরু করলো ড্রপ দেবার জন্য। কিন্তু আব্দুল নানা ভাবে council ling করতে লাগলো এবং কথা দিলো, তার দুই পার্ট খাতার একটা কিছুক্ষণ পর সাপ্লাই করবে। শুধু তাই না, ডিক্লেয়ার দিলো পেপার স্মরণকালের সহজতম। তার এই সব কর্মকান্ডে সবাই স্ট্যাট পরিক্ষা শেষ করে বের হইতে বাধ্য হলো।

ফেরার পথে কোন্ প্রশ্নের কী উত্তর, কোনটা tricky প্রশ্ন এই নিয়া লেকচার দিতে ফিরলো। চার মাস পর রেজাল্ট বাইর হইলো। চারটাই পাশ, শুধু আব্দুল ফেল্।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.