আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বালক কাল - ১

আমি আমার নিজেকেই খুঁজে বেড়াই, আমার মাঝে, তোমার মাঝে, আমাদের মাঝে :) শেষ পর্যন্ত ফিরে এলাম নিজের চিরচেনা রাজত্বে । আমার গ্রামে । নতুন স্কুল , নতুন বন্ধু, নতুন বই, নতুন শিক্ষক মজাই আলাদা । আর সবচেয়ে বেশি আনন্দের সংবাদ ছিল মামার হাত থেকে মুক্তি মিলেছে শুরু করলাম নতুন জীবন । প্রাইমারি পাশ করেছি, এখন ক্লাশ সিক্সে , রুখবে আমায় কে ????? ইয়াহু উ উ উ উ হাই স্কুলের প্রথম দিনেই প্রথম ক্লাশ ছিল বাংলা ব্যকরন, শিক্ষক ছিলেন আমার গ্রামের এক চাচা ।

শুরুতেই সবার পরিচয় নিলেন । সেখানে পেলাম নতুন কিছু বন্ধু যাদের আগে কখনো দেখিনি । পাশের গ্রাম থেকে এসেছিল । আর পেয়েছিলাম ‘বনি ইস্রাইল’ নামের এক শিক্ষক কে । যাঁর ভয়ে আমরা সবাই তটস্থ থাকতাম ।

স্কুলের ত্রাস নামে পরিচিত ছিলেন । আমরা আর কারো পড়া করে যাই কি না যাই সেই স্যার এর পড়া মিস হতনা। কিন্তু যথারীতি ক্লাশে গিয়ে স্যার যখন জিজ্ঞেস করতেন বেমালুম ভুলে বসতাম । ফলাফল স্যারের হাতের লাঠির সম্পুর্ন প্রয়োগ । আমি বরাবর অঙ্কে কাঁচা ছিলাম ।

আব্বু এক স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাবস্থা করলেন । প্রতিদিন সকালে স্কুলে গিয়ে প্রাইভেট পড়তাম এক ঘন্টা তারপর স্কুলের এ্যাসেম্বলিতে জয়েন করতাম । একদিন আমি একটু আগে গেলাম, গিয়ে দেখি স্কুলের বারান্দায় একটা মৌমাছির চাক । দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপলো। হাতের কলম আস্তে আস্তে করে ঢুকিয়ে দিলাম চাকের ভেতর ।

দেখলাম মৌমাছিগুলো আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে । মজা পেয়ে গেলাম । পরেরদিন কলম না দিয়ে আঙ্গুল দিলাম এগিয়ে । দেখলাম আগের মতই সবাই সরে যাচ্ছে । দেখে আরো মজা পেলাম ।

এর পর প্রতিদিন একই কাজ করতাম। ৩-৪ দিন এমন করার পর একদিন সকালে গিয়ে যেই আঙ্গুল দিয়েছি সাথে সাথে ৫টা মৌমাছি একযোগে হুল ফুটিয়ে দিল সেকি ব্যথারে ভাই । সেদিন একটা ক্লাশ টেস্ট ছিল দিতে চাইনি লিখতে পারবোনা বলে। এখন তো বলতে হবে কি জন্যে লিখতে পারবোনা । সেটাও বলা যাবেনা কারন লজ্জার কথা ।

হুল খেয়েছি শুনলে ক্লাশের মেয়েরা হাঁসবে । তাই মিথ্যা কথা বললাম ‘পড়ে আসিনি’ সাথে সাথে শাস্তিও পেয়ে গেলাম । আগের মতই, আমার পশ্চাতদেশের সাথে স্যারের হাতের বেতের মোলাকাত কি আর করা স্কুল শেষে দুই যায়গায় ব্যাথা নিয়ে বাসায় ফিরলাম তারপর থেকে মৌমাছি দেখলেই সাবধান হয়ে যাই আরেকদিন আমাদের গ্রামের এক রাস্তার পাশে একটা বোলতার চাক দেখতে পেলো গ্রামের বান্দর পোলাপাইন গুলা । আর সেদিন পাশের গ্রামের এক দুর্ভাগা লোক অই রাস্তা ধরে যাচ্ছিল । তার কিছুক্ষন আগেই অই বান্দরগুলা বোলতার চাকে ঢিল মেরে চাক গরম করে রেখেছিল ।

তো সেই লোক সেই চাকের কাছে পৌছা মাত্র আর যায় কোথায় , ঝাঁকে ঝাঁকে বোলতা এসে হুল ফুটাতে লাগল । বেচারার চিৎকার শুনে আমার বড়চাচা আর গ্রামের কিছুলোক দৌড় দিয়ে গিয়ে বস্তা পেঁচিয়ে উদ্ধার করে আনলো । সেই বেচারার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। খালি প্রলাপ বকছিল “বেয়াই ডাক্তার আনো টাকা দিব, ডাক্তার আনো টাকা দিব” যাই হোক পাশের গ্রাম থেকে ডাক্তার এনে তাকে সেবা-শশ্রুষা করে ভালো করে পাঠানো হল। অনেকদিন অই লোকের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল ।

পরে যখন নিজের দেশের বাড়ি চলে গেল তখন আর যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি (মোবাইল ছিলনা তাই সম্ভবত)। আমাদের গ্রামের বাড়িটা মাটির তৈরি ছিল । অনেকদিন আগের তৈরি ছিল তাই দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল । একদিন আমি আবিস্কার করলাম সেই ফাটলে একদল বোলতা বাসা বেঁধেছে । আমার আগের সেই ঘটনা মনে পড়লো, ভাবলাম আর কেউ যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হয় তাই কাদা দিয়ে সেই ফাটল বন্ধের অভিযানে নামলাম ।

আমার পিছু পিছু আমার ছোট ভাই আসলো দেখতে আমার কর্মকান্ড । আমি অনেক নিষেধ করা সত্বেও সে আমার পিছু ছাড়লোনা । তো আমি প্রথম কাদার গোলা ছুঁড়লাম যায়গা মত গেলনা । দ্বিতীয় গোলা ছুঁড়লাম গর্তটার অর্ধেক বন্ধ হল বাকি অর্ধেক দিয়ে ভুর ভুর করে সব বোলতা বেরিয়ে এল । আমি তো দৌড়ে পালালাম কিন্তু বেচারি আমার ছোটভাই ধরা পড়ে গেল ।

পুচ্চিটা ঠিকমত দৌড়াতে পারেনি । ফলাফল ৪ টা হুল খেয়ে গেল । বাসায় ফিরে আম্মুর মাইর খাইলাম কেন ওকে নিয়ে গেছি বলে । আর আমার জন্য বেচারা ভাইটা হুল খেল চিন্তা করে অনুতপ্ত হলাম । তাই মৌমাছির মত বোলতার পেছনে লাগাও ছেড়ে দিলাম সেদিন থেকে আমি রাতে যে ঘরে ঘুমাতাম সে ঘরের দুইটা দরজা ছিল ।

আসলে সেটা ছিল গেস্ট রুম ধরনের । বাইরের কেউ আসলে সেই ঘরে বসতে দেয়া হত। সেই বাইরের দরজার সু্যোগে কত্তকিছু যে করেছি !!! আমদের বাসায় যে কাজের ছেলে ছিল তার নাম ছিল ম্যানুয়েল মার্ডি (আমরা ডাকতাম ‘মানি’ বলে) আর সে ছিল সাঁওতাল । আমার সমবয়সি হওয়াতে আমার সকল প্রকার দুষ্টুমিতে সাথে পেয়েছি । কারো গাছের আম চুরি করা, রাতে দূর গ্রামে গিয়ে ভিসিআরে বাংলা ছায়াছবি দেখা, তাল কুড়ানো, শীতের রাতে খেজুরের রস চুরি করা ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আমাদের গ্রাম থেকে ৩-৪ কি.মি. দূরে ছিল আমার মায়ের চাচাতো বোন মানে আমার খালার বাসা । তো সেই খালুর আবার ভিসিআর ছিল । প্রতি বৃহঃবার টিকিট দিয়ে ছবি দেখানো হত । আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম বেড়াতে তাই সবাইকে আমার চেনা ছিল, আমাকেও সবাই চিনত । এক বৃহঃবার মানি এসে বলল “আজকে জব্বর ছবি দিছে, দেখতে যাবি ???” আমিও রাজি হয়ে গেলাম ।

রাতে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম । ঘরের ভেতরের দরজা লাগিয়ে দিলাম । আব্বু একবার এসে চেক করল আমি ঘুমিয়েছি কিনা । আব্বু চলে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম । আমরা দুইজন সেই রাতে গিয়ে ছবি দেখে ফিরে আসার সময় গ্রামে এসে কিছু তাল কুড়িয়ে বাসায় ফিরলাম ।

আমরা রাতে ছিলামনা টের পেয়ে যদি আব্বু-আম্মু জিজ্ঞেস করে তাইলে যেন বলতে পারি তাল কুড়াতে গিয়েছিলাম এই জন্যে । তাল কুড়ানো নিয়ে আরেকটা কাহিনি আছে। আমরা মাঝে মাঝে তাল কুড়ানোর জন্য পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে অন্যরাও আসতো কিন্তু তারা বসে থাকত একটু দূরে । একদিন ইচ্ছা হলো মজা করব ।

যেই ভাবা সেই কাজ । মানির হাতে দিলাম ঢিল আর আমি নিলাম মাটির বড় দলা । পকুর পাড়ে গিয়ে মানি তাল গাছের পাতায় ঢিল মারল তাতে সড়াত করে আওয়াজ হলো । আর আমি কিছুক্ষন পরে মাটির দলাটা পুকুরে ফেলে দিলাম তাতে ঝপাত করে আওয়াজ হলো। সবাই ভাবলো তাল পড়েছে, সবাই দৌড়ে আসল।

আমাদের আর হাসি থামায় কে ? যদি আপনাদের হাসি পায় তাহলে আপনারাও হাঁসতে থাকুন । আমি একটু ঘুরে আসি অফিস থেকে । আমার বাল্যকাল ৩ আমার বাল্যকাল ২ আমার বাল্যকাল ১ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।