আমার আছে জল
মাত্র তিন বছর নয় মাস বয়সী এক শিশু। কম্পিউটারের জটিল জটিল সব সফটওয়্যারে তার দখল। না দেখে পেশাদার কম্পোজারদের মতো তার আঙুল খেলা করে কিবোর্ডে। বিস্ময়কর বোদ্ধার মতো এই সাইবার শিশুর প্রযুক্তিগত আচরণ। ইন্টারনেটের বেশ কয়েকটি সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটেও তার অবাধ বিচরণ।
বিস্তারিত জানিয়েছেন মিনহাজ মোর্শেদ রুমন
প্রকৃতিকে জয় করার ব্রত নিয়েই প্রযুক্তির আবির্ভাব যুগান্তরে। মানব মস্তিষ্ক বনাম যন্ত্রÑ কার ক্ষমতা বেশি, এ নিয়ে বিতর্ক অন্তহীন। এ বিষয়ে বিশ্লেষকদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যন্ত্র নির্দেশনাধীন আর মানব মস্তিষ্ক এক্ষেত্রে স্বাধীন। যন্ত্র যেখানে সীমাবদ্ধ, মস্তিষ্ক সেখানে নবায়নযোগ্য। তবে মস্তিষ্কেরও সময়ের সমান্তরালে রয়েছে ধারণক্ষমতা।
সে ক্ষমতাকে অতিক্রম করার সমাধানহীন সমীকরণই অকল্পনীয় কিছু। বাংলাদেশেও যে এর প্রমাণ রয়েছে তা রূপকথা নয়, কল্পলোকের চেয়েও সত্য।
তিন বছর নয় মাস বয়সের রূপকথা। প্রকৃতির সংজ্ঞায় এখনও সে শৈশবের সড়কে। স্কুলে নয়, মা-বাবার কাছেও নয়, শুধু ইংরেজি বর্ণমালা ও আধোবোলে উচ্চারণও নয়, প্রায় দু’হাজার নির্ভুল ইংরেজি শব্দ রয়েছে তার মননে।
সবই শেখা কম্পিউটারের কাছ থেকে। কিবোর্ডে কোমল আঙুলের ছোঁয়ায় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে টাইপ করছে সে। তাও আবার না দেখে।
ঘুম থেকে উঠেই রূপকথাকে দেখা যায় কম্পিউটারের সামনে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে থাকে তার ক্লিক।
জšে§র মাত্র কয়েক মাস থেকেই কম্পিউটারের প্রতি তার বিশেষ কৌতূহল। মাত্র এক বছর বয়সেই সে গেমসের সিডিগুলো ইন্সটল এবং আনইন্সটল করতে পারত। ক্রমেই বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে তার নেটওয়ার্ক তৈরি হতে থাকে। প্রায় দেড় শতাধিক গেইমসের গুরু হওয়া ছাড়াও বর্তমানে সে কম্পিউটারের বেসিক কোর্সগুলো নিয়ে কাজ করছে। এমএস ওয়ার্ডের ফাইল মেইক, টেক্সট ডিজাইন, পিকচার অ্যাড, গ্রাফ ও টেবিল ওয়ার্ক, এক্সেল দিয়ে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ, পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে পিকচার মুভিং অ্যানিমেশন, স্লাইড শো, সাউন্ড ও মিউজিক অ্যাড তার কাছে কয়েক মিনিট মাত্র।
কম্পিউটার নিয়ে এখানেই রূপকথার শেষ নয়। আপনার ড্রাইভ নেইম ও ডেস্কটপের আইকন পরিবর্তন করে দেবে সেকেন্ডেই। কিটক্যাট অফার করে সখ্য গড়ে তুলে তবেই আপনি তা রিকভার করিয়ে নিতে পারবেন। খুশি হয়ে সে হয়তো থিম, রেজ্যুলেশন ও বিট পরিবর্তন করে দেবে আপনার
কথামতো। ফোল্ডার ম্যানেজমেন্টেও তার রয়েছে অসম্ভব দক্ষতা।
খেলনা নিয়ে যখন অন্য শিশুদের প্রহর কাটছে, রূপকথা তখন বিরামহীনভাবে কম্পিউটারের সঙ্গে কথা বলছে। মাঝে মাঝে তার কম্পিউটারকে রিফরমেট করতে হয়। সেটআপ সে নিজেই দেয়। কথা বলে জানা যায়, শুধু উইনডোজ সেটআপ নয়, ভিসতা ও ওরাকল সেটআপও সে করতে পারে। ডিস্ক ক্লিন আপ ও ডিফ্রাগমেন্টেশন করে নিয়মিত।
বাড়তি সতর্কতা হিসেবে প্রতিদিন সে ভাইরাস স্ক্যানও করে। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের ডেট এক্সপায়ার করলে নিজেই ইন্টারনেট থেকে আপডেটেড ভার্সনটি ডাউনলোড করে নেয়। যদি আপনার সিডি রাইটার নষ্ট হয়ে যায়, চোখ বন্ধ করে চলে আসবেন রূপকথার বাসায় নিকেতনে। সিডি রাইট করে দেবে সে। শিখে আসা যাবে ফটোশপ ও ফ্লাশ ফাইভের নানা ডিজিটাল কারুশিল্প।
কম্পিউটারের এমন কিছু নেই যা তার কাছে অজানা।
রূপকথা নয়, সত্যি। ফেসবুক ও মাইস্পেসে পেয়ে যাবেন আপনি তাকে। ওয়াসিক ফারহান রূপকথা নামে সার্চ করতে হবে। শুধু কম্পিউটারের খুঁটিনাটি বিষয়ই নয়, আপনাকে সে শিখিয়ে দিতে পারে একই সাংখ্যমানের যে কোনও দুই ডিজিটের মুখে মুখে যোগফলের কৌশল।
লাখ পর্যন্ত হিসাব করা যাবে মাত্র কয়েক মিলি সেকেন্ডে। মহাকাশের নানা বিস্ময়কর ও অজানা তথ্যও পাওয়া যাবে এ বিস্ময় শিশু বালকের কাছ থেকে। দিনে বার থেকে তের ঘণ্টা কাটে কম্পিউটারে এ সাইবার বেবির। ওপারের বিশ্ব তাকে দেখছে একটি উচ্চ কনফিগারেশনের প্রোগ্রাম হিসেবে। অসম্ভব প্রতিভাধর রূপকথাকে পাওয়া যাবে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবেও।
সার্চ করতে হবে ‘থ্রি ইয়ারস অ্যামেজিং সাইবার বেবি’ অথবা ‘থ্রি ইয়ারস অ্যামেজিং কম্পিউটার বেবি’ টাইপ করে। ব্যবসায়ী বাবা ওয়াসিম ফারহান ও মা সিনথিয়া ফারহিনের স্বপ্ন তাদের সন্তান ভবিষ্যতে সাইবার ওয়ার্ল্ডে নতুন যুগের সূচনা করবে। বাংলাদেশী হিসেবে সবার আশীর্বাদ থাকল তার প্রাত্যহিক জীবনের প্রত্যয় হয়ে
সূত্রঃ যুগান্তর
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।