আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাইক্কা বিল জুড়ে পাখির মেলা

তখন শুধু জল আর জল থাকে বাইক্কা বিল জুড়ে। চলতি বছর কার্তিকের শেষভাগ থেকেই এই অগ্রহায়নে বিলটি ভরে গেছে অতিথি পাখিদের পদচারণায়। এখন বিলের অভয়াশ্রম জুড়ে রয়েছে কচুরিপানা, জলজ উদ্ভিদ, শ্যাওলা, পদ্ম, ঘাস, শাপলাসহ পাখিদের অফুরন্ত খাবার। বিলের জল শুকানোর পাশাপাশি এসব উদ্ভিদগুলোর অস্তিত্ব শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বর্ষা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত মাটি ও লতাপাতা থেকে কিছুদিন পাখিরা তাদের খাদ্য সংগ্রহ করবে। এছাড়া বিলের পাড় জুড়ে রয়েছে বনজ, ঔষধি ও প্রাকৃতিক ফলজ উদ্ভিদের গাছ।

পাখিরা রোদ পোহানোর পাশাপাশি এসব গাছে বিরতি নেয়। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার এই বিলটিকে হাইল হাওরের মাছ, পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর সংরক্ষণ এবং প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই অভয়াশ্রমটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। হাইল হাওর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যক্ষেত্র এবং একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পাখির আবাস। বর্ষা মৌসুমে এই হাওরের জলায়তন হয় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর এবং শুষ্ক সময়ে ৪ হাজার হেক্টরেরও কম। বাইক্কা বিল চাপড়া, মাগুরা, যাদুরিয়া বিল ও এর সংলগ্ন ডোবা এলাকা সমন্বয়ে গঠিত যার আয়তন ১০০ হেক্টর।

এই অভয়াশ্রম হাইল হাওরের ৯৮ প্রজাতির মাছ এবং ১৬০ প্রজাতির পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন এই অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে এবং শ্রীমঙ্গল স্থানীয় সরকার কমিটি পরামর্শ প্রদান ও তদারকি করে থাকে। শীত মৌসুমে বাইক্কা বিলে পাতি সরালী, ধলা বেলেহাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, মরচে রং, ভূতি হাঁস, দাগী ঘাসপাখি, ভূবন চিল, শংখ চিল, পানাসী, করঈগল, বাংলা শকুন, বড় গুটি ঈগল, পাতি পান মুরগী, নেউপিপি, মেটেমাথা টিটি, পাতি চ্যাগা, দেশি কানি বক, গো বগা, লালচে বক, কালামাথা কাস্তেরা, ছোট পানকৌড়ি ইত্যাদি পাখির বসবাস সারা বছর জুড়েই রয়েছে। তবে সংখ্যায় অতি নগন্য। বাইক্কা বিলে পাখি ও মাছের জন্য একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম রয়েছে।

বাইক্কা বিলে রয়েছে ঘনিয়া, কালি বাউস, রিটা, বোয়াল, ফলি, চিতল, কানি পাবদা, শোল, রাণী, টাকি, সরপুঁটি, মলা, নামা, চান্দা, কই, তারা বাইম ইত্যাদি মাছ। বিলের মাঝামাঝি অংশে রয়েছে দর্শনার্থী টাওয়ার। তিনতলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারে ওঠে পাখি দেখাসহ ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিং করার সুব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া এই বিলে কোন ইঞ্জিনের নৌকা নেই। পর্যটকরা ডিঙি নৌকায় চড়ে সারা বিল চষে বেড়াতে পারেন।

এখানে দর্শনার্থী টাওয়ার দেখাশুনার দায়িত্বে তোতা মিয়া নামে একজন গার্ড রয়েছেন এবং নৌকার জন্য বশির মাঝিও রয়েছেন। নির্দিষ্ট কোন ফি নেই যে যার মতো করে মাঝিকে বকশিস দিয়ে যায়। পাখি দেখার পাশাপাশি ৫০ টাকায় বাইক্কা বিলের পাখি, পদ্মফুল, মাছ ইত্যাদির একটি ভিডিও ফুটেজ কিনতে পাওয়া যায় এখানেই। বাংলাদেশ বণ্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন দেব বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে বাইক্কা বিলে হিমালয়, ভারত, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি এলাকা থেকে পাখিরা এসেছে। পাখিদের এই অভয়াশ্রমটিকে পর্যটনের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য বরুনা গ্রাম থেকে বাইক্কা বিল পর্যন্ত রাস্তাটি তিন ফুট উঁচু করে করে সংষ্কার করলে সব মৌসুমেই পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে যেতে পারবেন বলে তিনি জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।