মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন তৈরি করা হয়েছে। দেশীয় আইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন সাংঘর্ষিক হলে দেশীয় আইনই প্রাধান্য পাবে।
অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে আজ বুধবার আপিল বিভাগে শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি এ মত দেন। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই শুনানি গ্রহণ করেন।
শুনানিতে আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ‘প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক বিষয়গুলো আমাদের আইনে রয়েছে।
যদি কোনো ব্যাপারে দেশীয় আইনে কোনো শূন্যতা বা অস্পষ্টতা থাকে, সে ক্ষেত্রে ব্যাখ্যায় সহায়তার জন্য প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন গ্রহণ করা যেতে পারে। ’
আজমালুল হোসেন কিউসি আরও বলেন, সাধারণত বিচারের ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য। তবে প্রশ্ন, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন দেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে কোনটা প্রাধান্য পাবে?
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ‘তাদের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, দেশীয় আইনই প্রাধান্য পায়। অতএব আমাদের ক্ষেত্রেও দেশীয় আইনই প্রাধান্য পাবে। ’
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদ দিয়ে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনটিকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও কাদের মোল্লার পক্ষে আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে আজমালুল হোসেন কিউসিকে সহায়তা করেন আইনজীবী এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান খান। আদালত রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন। ওই দিন আজমালুল হোসেন কিউসি তাঁর অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিকালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্ন ওঠায় ২০ জুন আপিল বিভাগ এ বিষয়ে মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ সাত আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন।
দুটি প্রশ্ন হলো—দণ্ড ঘোষণার পর আইনে আনা সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না। অপরটি হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর অধীনে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম তাঁদের মতামত দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ এবং তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। অন্য একটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
কিন্তু কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আকস্মিকভাবে শাহবাগে তরুণদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ শুরু হয়। গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। এরপর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সমান সুযোগ রেখে ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আগে কোনো অভিযোগে আসামির সাজা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ ছিল না সরকারপক্ষের।
এরপর ৩ মার্চ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
পরদিন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশ বাতিল করে অব্যাহতি চেয়ে আরজি জানিয়ে আপিল করেন কাদের মোল্লা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিলের শুনানি শুরু হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।