লেখার কিছু নাই.. রেজাউল করিম
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই আমাদের সংবিধান সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। অনেকেই কোন দিন সংবিধান চোখেও দেখেনি। আবার অনেক শিতি ব্যক্তি রয়েছেন যারা সংবিধান পড়েননি। আবার যারা সংবিধান পড়তে বা কিনতে চান তারা সংবিধান পান না। যারা যোগাড় করেছেন তাদের হাতে রয়েছে অবৈধভাবে বাজারজাতকরণ সংবিধানের কপি।
আইন মন্ত্রণালয় যে পরিমান সংবিধান বাজারজাত করে তা মাত্র কয়েক হাজার লোকের চাহিদা পুরণ করে। আমাদের দেশে আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ছাপানো বৈধ সংবিধান পাওয়া দুর্লভ।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে সংবিধান পুনঃমুদ্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠার পর আজ পর্যন্ত দেশের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধান ছাপানো হয়নি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে আইনমন্ত্রণালয় বাংলদেশে সংবিধান ছাপায় ।
যার পরিমান ছিল দুই হাজার কপি । সে বছর হিসেব মতে ৭৫ হাজার মানুষের জন্য একটি করে সংবিধান ছাপায় সরকার। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের উচিত পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধানের কপি ছাপানো। যাতে করে সরকারের ছাপানো সংবিধানের কপি বাজারে সহজেই পাওযা যায়।
সংবিধান ছাপানোর মতা একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের: বাংলাদেশের সংবিধান শুধু মাত্র আইন মন্ত্রণালয় ছাপাতে পারে।
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে সংবিধান ছাপাতে পারবে না। আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপরে কোন অনুমতি দেওয়ারও নিয়ম নেই। ২০০৬ সালে একটি বে সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারন মানুষের কাছে বিনা মূল্যে সংবিধান সরবারাহ করার জন্য আইনমন্ত্রণালয় থেকে অনুমতির আবেদন করলেও কোন লাভ হয়নি। এমনকি আইন মন্ত্রণালয়ও পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধান ছাপায়নি। ‘সংবিধান ছাপাতে ভূল করতে পারে’ এ যুক্তি দেখিয়ে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংবিধান ছাপানোর অনুমতি দেওযা হয় না।
বাজারে যে সব সংবিধানের কপি পাওয়া যায় তার বেশীরভাগই অবৈধভাবে ছাপানো।
বেসরকারিভাবে সংবিধান ছাপানো: দেশের মানুষের কাছে বিনামূল্যে সংবিধান পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ কাউন্সিল। ‘ব্রিটিশ-বাংলা ল উইক’ উপলে ১৯৯৬ সালে তারা সংবিধানের ইংরেজি ও বাংলা সংস্করণ (প্রত্যেকটির দুইটি করে ভার্সন) প্রকাশ করে (পকেট সাইজ )। সংবিধানের সেই কপিগুলো তারা ব্যাপকহারে বিনামূল্যে সাধারন মানুষের মধ্যে বিতরণ করে। পাবর্তীতে ১৯৯৮ সালেও তারা একইভাবে সংবিধানের ওই কপিগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল সরকারের কাছে তোন অনুমতি নিয়েছিল কিনা সে বিষয়ে জানা যায়নি।
উন্নত বিশ্বে সংবিধান: বিদেশিদের আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সব যোগ্যতা পূর্ণ করার পর সর্বশেষ কাজ হল ওই দেশের সংবিধান সংক্রান্ত একটি পরীায় পাশ করা। পরীাটি কঠিন নয়। ওই নাগরিক যেন একবার হলেও সংবিধান পুরোটা পড়ে এবং সংবিধান বিষয়ে ধারনা থাকে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বিষযটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
আবার জš§গতভাবে আমেরিকানদের বেলায় তাদের সংবিধান পাঠ করা আবশ্যক। ছোটবেলায় তাদের বিদ্যালয়গুলেতে সংবিধান পাঠ করানোর ব্যবস্থা আছে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়সহ সকল উচ্চ শিার প্রতিষ্ঠানেও সংবিধান পাঠ করানোর ব্যবস্থা আছে। ওই দেশের সংবিধান বাংলাদেশের মত দুষ্প্রাপ্য নয়। হাতের নাগালেই সংবিধান পাওয়া যায়। কারণ আমেরিকার সংবিধান ছাপানোর দায়িত্বটা শুধু সেদেশের সরকারের হাতেই বন্দী নয়।
যে কোন নাগরিক বা কোন প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলেই সরকারের অনুমতি নিয়ে সংবিধান ছাপাতে পারে। সে েেত্র সরকারের প থেকে উদ্যোক্তাকে সহায়তা দেওয়া হয় এবং সংবিধান ছাপানোর কার্যক্রম পর্যবেণ করা হয়।
বাজারে আমাদের সংবিধান: ২০০৮ সালে আইনমন্ত্রণালয়ের ছাপানো সংবিধান অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবে সংবিধান বাজারে পাওযা যায়। সব দোকানেই নয়।
যারা ঝূকি নিয়ে আইন লংঘন করে সংবিধান ছাপানোর পর সরবরাহ করতে পারে শুধু তাদের কাছেই পাওয়া যায়। ওই সংবিধানের কপিগুলোকে বলা হয় পাইরেটেড কপি। সংবিধানের ওই কপিগুলোর ব্যাপারে ২০০৬ সালে ২৩ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় পত্রিকায় একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ল করা যাচ্ছে যে সরকারের বিনা অনুমতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অবৈধভাবে মুদ্রণ /ফটোকপি/ স্ক্যান করে সরকারের গ্রন্থস্বত্ব লংঘনপূর্বক বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে। সংবিধানসহ সকল আইনের গ্রন্থস্বত্ব ও মালিকানা সরকারের এবং ১৯৯৬ সালের রুল’স অব বিসনেস আইনে আইনমন্ত্রণালয় সংবিধানের গ্রন্থস্বত্বের এখতিয়ার রাখে।
আইনমন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ সংবিধান ছাপাতে পারেবে না। কেউ এই কাজ করলে ২০০০ সালের কপিরাইট আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি চার বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। দুই লাখ টাকা জরিমানাও হতে পারে বা উভয়দণ্ড হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা যা মনে করেন: পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধান ছাপানোর ব্যাপারে বিচারপতি গোলাম রাব্বানী কালেরকণ্ঠকে বলেন, জনগনের চাহিদা অনুযায়ী সংবিধান ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আসলে আমাদের দেশের জনগণের চাহিদাটা সংবিধানের উপর খুব বেশি নয়।
আমাদের উচিত সংবিধান সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হওয়া। সংবিধান বাজারে সহজলভ্য করতে আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধানের কপি বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করা। যাতে কেউ সংবিধানের পাইরেটেড কপি বাজারজাতকরণের সুযোগ না পায়। প্রত্যেক নাগরিক যেন সহজেই আসল সংবিধান ক্রয় করতে পারে।
ড.আনিসুজ্জামান বলেন, সরকার যেন হিসেব করেই সংবিধান ছাপানোর ব্যবস্থা করে।
যাতে করে সংবিধান যারা পড়তে চায় তার সহজেই বাজার থেকে সংবিধান ক্রয় করতে পারে। এখনতো বাজারে খুব সহজেই সংবিধান পওযা যায়। সরকারের উচিত সেগুলো সংবিধানের প্রতি নজর দেওয়া। যাতে করে কেউ পাইরেটেড কোন সংবিধান সরবরাহ না করতে পারে। এবং অবৈধভাবে সরবরাহকৃত সংবিধান পড়ে কেউ তার পবিত্র দেশের মূল বিধান ও নিজের অধিকার সম্পর্কে না জানে।
ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, আইন অনুযায়ী যে কোন আইনের বিধান একমাত্র সরকার ছাপানোর এখতিয়ার রাখে। সংবিধান ছাপানোও সরকারের দায়িত্ব। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত কোন সরকারই পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধান ছাপায়নি। এ েেত্র সরকার অদতার পরিচয় দিয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুযায়ী সরকার সংবিধান পুনঃমুদ্রন করবে।
এই বার অন্তত পে দুই লাখ কপি সংবিধান ছাপানো দরকার। যাতে করে প্রত্যেকটি মাধ্যমিক, উচ্চামাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে একটি করে নতুন সংবিধানের কপি পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধানের কপি ছাপানো সরকারেরই দায়িত্ব। কারন কোন ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোন আইনের বিধান বা সংবিধান ছাপালে আইনে শাস্তির ব্যবস্থা আছে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহ আলম বলেন, সরকারের উচিত বহু সংখ্যক সংবিধানের কপি ছাপানো।
যাতে করে দেশের সচেতন নাগরিকরা সহজেই সংবিধানের কপি পায়। সংবিধানের মালিকানাস্বত্ব একমাত্র আইন মন্ত্রলালয়। আইন মন্ত্রণালয়য়ের উচিত বেশি সংখ্যক সংবিধান ছাপানো। তবে যদি আইন মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত পরিমান সংবিধান ছাপাতে অপারগ হয় তাহলে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অছে যারা সংবিধান ছাপাতে আগ্রহী। তাদেরকে অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
এবং তারা যাতে নির্ভুলভাবে সংবিধান ছাপায় সে েেত্র আইনমন্ত্রনালয়ের প থেকে যথাযথ পর্যবেনের ব্যবস্থা করা। তাহলে বাজারে অবৈধভাবে ছাপানো সংবিধান থাকবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।