আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবিধানের আত্মকথন

কি বলব আমি বাংলাদেশ নামের একটি ছোট্ট স্বাধীন দেশের সংবিধান। আমার জন্ম ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর তারিখে। আমার কার্যকারিতা দেয়া হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখ থেকে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সাংবিধানিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান অংশে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারাই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সাংবিধানিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নিজেদের গণ্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কোনো কোনো সমালোচক বলে থাকেন যে, এই কাজটি বৈধ হয়নি।

কারণ, তারা অখ পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে এই অঞ্চলের জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন সত্য, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য কোনো ম্যান্ডেট জনগণ তাদের দেয়নি। অর্থাত্ সমালোচকদের মতে, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি নতুন সাংবিধানিক পরিষদ নির্বাচন করা যেত স্বাধীনতার পরপর এবং তা করলে হয়তো স্বাধীন দেশের সাংবিধানিক পরিষদে নির্বাচিতরা জনগণের যথোপযুক্ত ম্যান্ডেট নিয়ে আমাকে বৈধভাবে প্রণয়ন করতে পারতেন। জন্মলগ্নের এই ত্রুটি নিয়ে কেউ যখন খোঁচা দেন তখন তাদের কথার যুক্তিগ্রাহ্যতা অস্বীকার করতে পারি না বটে, কিন্তু আমার বড় অস্বস্তি হয়। জন্মদাতার আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, কার না কষ্ট হয় বলুন? তত্কালীন যুবাবয়েসী আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে চেয়ারম্যান করে সেই সময়ে একটি সর্বদলীয় সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। তারা আমার চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করে দেন ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র।

মূলনীতিগুলোর ম্যান্ডেট নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। যে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে তত্কালীন পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান অংশের সাংবিধানিক পরিষদের সদস্যরা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, সেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এই চার মূলনীতি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাহলে এই মূলনীতিগুলো এলো কোথা থেকে? আওয়ামী লীগ কি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো দল হিসেবে জনগণের কাছে উপস্থিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে? আওয়ামী লীগ কি ধর্মনিরপেক্ষ কোনো দল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিল জনগণের কাছে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে? সমালোচকরা বলেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মিত্রশক্তি ভারত এবং তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ প্রভাবে এই চার মূলনীতির আবির্ভাব ঘটানো হয় আমার মধ্যে। সেই সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রবল উচ্ছ্বাসের সময়টাতে, আওয়ামী লীগের হঠাত্ করে নীতি পরিবর্তন বা সেই পরিবর্তিত নীতিতে জনগণের ম্যান্ডেট আছে কি নেই তা নিয়ে সে রকম উচ্চস্বরে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা কেউ না করলেও, পরবর্তী সময়ে এই প্রশ্নগুলো উঠতে থাকে মুখর সমালোচকদের মধ্য থেকে। আমার বড়ই বিব্রতকর লাগতে থাকে।

ছোটখাটো জিনিস নিয়ে সমালোচনা নয়, রীতিমত আমার মূলনীতিগুলো নিয়ে প্রশ্ন! ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই তারিখে আমাকে প্রথম সংশোধন করা হয়। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে আমার আর্টিকেল ৪৭ সংশোধন করে এতে ৪৭ক নম্বর দিয়ে একটি অতিরিক্ত অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়, যার মাধ্যমে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে করার বিধান রাখা হয়। আর এই সংশোধনীর মাধ্যমে উপরোক্ত অপরাধসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু মৌলিক অধিকার রহিত করা হয়। প্রথম সংশোধনী আনার পর দু’মাস পার হতে না হতেই আমাকে দ্বিতীয়বার সংশোধন করা হয়। ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আমার আর্টিকেল ২৬, ৬৩, ৭২, এবং ১৪২ সংশোধিত হয়; আর্টিকেল ৩৩ প্রতিস্থাপিত হয়; এবং ৯ক নম্বর দিয়ে একটি অংশ সংযোজিত হয়।

এই দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় কিছু কিছু মৌলিক অধিকার রহিত করার বিধান করা হয়। জনগণের মৌলিক অধিকার রহিত করার বিষয়ে সংশোধনী আনার কারণে আমার ভালো মানুষী চেহারাটা অমানবিক হয়ে পড়ে। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী জাসদ আর সশস্ত্র বিপ্লবী সিরাজ শিকদারদের দমনের লক্ষ্যে রক্ষীবাহিনী দিয়ে নির্বিচার অত্যাচার চালাতে এই দ্বিতীয় সংশোধনীটি আওয়ামী সরকারের খুব কাজে লেগেছিল বলে শুনেছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি, আমার একদম ভালো লাগেনি। নিজেকে এখনও অপরাধী অপরাধী মনে হয়।

তৃতীয়বার যখন আমাকে সংশোধন করা হয় তখন আমি একটুখানি কেঁদেছিলাম। কারণ, তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বেরুবাড়ীসহ বাংলাদেশের কয়েকটি ছিটমহল প্রতিবেশী ভারতকে দিয়ে দেয়া হলো, যার বিনিময়ে তিনবিঘা করিডোরসহ কয়েকটি ছিটমহল ভারতের কাছ থেকে আমাদের পাওয়ার কথা। যে চুক্তির মাধ্যমে দু’দেশ এই ছিটমহল বিনিময় করেছিল, সেই চুক্তিটি অনুমোদন করার জন্যই এই তৃতীয় সংশোধনী আনা হলো। আমাকে সংশোধন করায় দেশের ভূখ ের একটা অংশ, তা সে যত ছোটই হোক, আমার আয়ত্তের বাইরে চলে গেল বলে, আমার এমনতর কান্না পেয়েছিল। মায়া তো লাগেই, তাই না? কিন্তু কষ্ট আরও অনেকগুণ বেড়েছে যখন শুনেছি যে, ভারত সেই ছিটমহল চুক্তিটি তাদের সংসদে পাস করিয়ে তাদের সংবিধানে সংশোধনী আনতে পারেনি বা আনেনি।

ফলে আমাদের তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে দেয়া ছিটমহলগুলো ভারত বুঝে নিলেও, বিনিময়ে যে ছিটমহলগুলো আমাদের দেয়ার কথা, সেগুলো আজতক দেয়নি। শুধুই হারাবার বেদনা রয়ে গেল, সান্ত্বনা হিসেবে যে বিনিময়টুকু পাওয়ার কথা চুক্তি অনুযায়ী, তা আর পেলাম না বলে আজও মাঝে মাঝে হাহাকার করে ওঠে মন। আমার জন্মের পর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন ছিল ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখটি। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, অসহ্য যন্ত্রণা হয়েছিল আমার এই দিনটিতে। তত্কালীন আওয়ামী সংসদ হুট করে চতুর্থবারের মতো আমাকে সংশোধন করে ফেলে, মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে।

ছোটখাটো কোনো সংশোধন নয়, চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আমাকে একেবারে ওলটপালট করে খোলনলচে পাল্টে ফেলা হয়। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বদলে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়, বাকশাল নামে একটিমাত্র দল রেখে অন্য সব রাজনৈতিক দল বেআইনি ঘোষিত হয়, জাতীয় সংসদের ক্ষমতা অতিশয় সীমিত করে ফেলা হয়, মাত্র চারটি সংবাদপত্র সরকারি মালিকানায় রেখে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়, বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতা হারায় এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় সুপ্রিমকোর্টের এখতিয়ার নিষ্ঠুরভাবে ছেঁটে ফেলা হয়। আমার আর্টিকেল ১১, ৬৬, ৬৭, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৮৮, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক, ১৪৭, ১৪৮ সংশোধিত হয়; আর্টিকেল ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ এবং ১২৪ প্রতিস্থাপিত হয়; তৃতীয় এবং চতুর্থ তফসিল পাল্টে ফেলা হয়; প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়ে দেয়া হয়; রাষ্ট্রপতি ও তার কার্যালয়কে অসীম ক্ষমতা দিয়ে নানা বিধান করা হয়; আর্টিকেল ৭৩ক এবং ১১৬ক সংযোজন করা হয় এই বিশালবপু সংশোধনী আনয়ন করে। এমন অস্বাভাবিক ভারে আক্রান্ত হয়ে আমি যারপরনাই পর্যুদস্ত হয়ে পড়ি। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কখনও চিত্কার করে কেঁদেছিও।

কিন্তু আমার কান্না কেইবা শোনে? সংবিধানের কান্না কি মানুষ শুনতে পায়? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে আমি প্রত্যক্ষ করেছি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকা ের মতো নৃশংস ঘটনা। আমার একদম ভালো লাগেনি। কোনো হত্যাকা ই আমার ভালো লাগে না। হোক না সে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী জাসদের হাজার হাজার তরুণ নেতাকর্মীদের কেউ, কিংবা সিরাজ শিকদারের মতো কোনো সর্বহারা বিপ্লবী, কিংবা বাকশাল প্রবর্তনকারী মহাক্ষমতাবান রাষ্ট্রপতি বা তার প্রিয়জন-পরিবার। সবার স্বাভাবিক মৃত্যু হোক এই-ই আমি চাই।

১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল তারিখে পঞ্চমবার আমাকে সংশোধন করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের দুঃখজনক হত্যাকা ের পর থেকে সৃষ্ট অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এবং আমার অনিচ্ছাকৃত অনুপস্থিতিতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারিকৃত ফরমান, আদেশ ও বিভিন্ন বিধিবিধান, সংশোধনী, সংযোজন, প্রতিস্থাপন, বাতিলীকরণসহ সব ধরনের কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়া হয় এই পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আমার চতুর্থ তফসিলে ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদটি সংযোজন করে। এই সংশোধনীর পর বাকশালের অবসান করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে, রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনরায় আইনি কাঠামোর মধ্যে অবাধে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়, আমার চার মূলনীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা বদলে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং সমাজতন্ত্র বদলে ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র’ করা হয়, আমার প্রারম্ভে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করা হয়, বিচার বিভাগের হৃত স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া হয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া সব সংবাদপত্রকে পুনরায় প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে বাকশাল প্রবর্তন দিয়ে শুরু হওয়া এবং ১৫ আগস্ট হত্যাকা ের পর তুঙ্গে ওঠা আমার দমবন্ধ অবস্থার যেন অবসান ঘটে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে।

বহুদিন পর খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে পেরে আমার বেশ খানিকটা আরাম বোধ হতে থাকে। বাকশালের অধীনে রহিত হয়ে যাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো পঞ্চম সংশোধনীর আওতায় ফিরিয়ে দেয়ায় আমার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আবার। হাসিমুখে মানুষকে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠতে দেখে আমি পুনরায় আশায় বুক বাঁধি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তারিখে আমি থমকে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করি কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহদাত বরণের ঘটনা। গণতন্ত্র এর মাধ্যমে আবার একটা হোঁচট খায়।

তত্কালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আর তার আমলে ১৯৮১ সালে আমাকে ষষ্ঠবারের মতো সংশোধন করা হয়। এই ষষ্ঠ সংশোধনীর মাধ্যমে আমার আর্টিকেল ৫১ এবং ৬৬ সংশোধন করা হয় বিচারপতি সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করতে দেয়ার পথ সুগম করে দিয়ে। পরবর্তী সময়ে তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেনা প্রধান এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তারিখে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক আইন জারি করেন এবং মসনদে আরোহণ করেন। আমি আবার এক দীর্ঘমেয়াদি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিপতিত হই।

১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর তারিখে আমাকে সপ্তম বারের মতো সংশোধন করা হয়। এই সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে আমার আর্টিকেল ৯৬ সংশোধিত হয় এবং আমার চতুর্থ তফসিল সংশোধন করে এতে ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয় যার মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর তারিখ পর্যন্ত সব ফরমান, আদেশ, অধ্যাদেশসহ সামরিক আইনের অধীনে কৃত সব কর্মকা কে বৈধতা দেয়া হয়। একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সামরিক শাসন জারি করা আর কিছুদিন পর তাকে বৈধতা দেয়ার সংশোধনী আমার কাছে অসহ্য লেগেছিল। কিন্তু আমার আর কিইবা করার ছিল, বলুন? আমাকে আবার সংশোধন করা হয় অষ্টমবারের মতো ১৯৮৮ সালের ৭ জুন তারিখে। এই অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে আমার আর্টিকেল ২, ৩, ৫, ৩০ এবং ১০০ সংশোধন করা হয়।

ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়; হাইকোর্টকে বিকেন্দ্রীকরণ করে ঢাকার বাইরের ছয়টি শহরে ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা হয়; ইংরেজি বানানে উচ্চারিত ‘বেঙ্গলি’ বদলে বাংলা এবং ‘ডাক্কা’ বদলে ঢাকা লেখা হয়; এবং কোনো নাগরিকের বিদেশ থেকে কোনো উপাধি, পুরস্কার, সম্মাননা নেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেয়ার বিধান করা হয়। সামরিক শাসক হিসেবে এরশাদ ততদিনে কোণঠাসা অবস্থায় বলে শুনেছি এবং সে পরিস্থিতিতে এই সংশোধনী এনে তিনি শেষরক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলাবলি করতেন। যাই হোক কিছুদিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের সংশোধনীটুকু বাতিল করে দেয়। আমাকে নবমবার সংশোধন করা হয় ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে। নবম সংশোধনী এনে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি নির্বাচনের বিধি করা হয় এবং শূন্য হওয়া উপ-রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচন না করে নিয়োগ দিলে তা পরবর্তী সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেয়ার বিধান যুক্ত হয়।

এর প্রায় এক বছর পর ১৯৯০ সালের ১২ জুন তারিখে দশমবার আমাকে সংশোধন করা হয় যার মাধ্যমে পরবর্তী দশ বছরের জন্য ৩০টি মহিলা সংসদ সদস্য পদ সংরক্ষিত রাখার বিধান করা হয়। সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্যদের জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ার বিধান করে আমার আর্টিকেল ৬৫ সংশোধিত হওয়ার সময় সেই ১৮ বছরের তরুণ বয়সে আমার মনে যে একটু-আধটু নির্দোষ রোমাঞ্চ জাগেনি তা হলফ করে বলতে পারব না। কিন্তু বেরসিক কেউ কেউ সে সময়ে ৩০ জন মহিলা সংসদ সদস্যকে ৩০ সেট অলঙ্কার বলে উপহাস করলে সাধারণভাবে দেশবাসী খুব মজা পেয়েছিল বলে শুনেছি। তবে আমার তা একেবারেই ভালো লাগেনি। সমাজের অনগ্রসর কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী মা-বোন-মহিলাদের এগিয়ে আনার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায়, সহানুভূতিশীল হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার পরিবর্তে তাদের সাময়িক অদক্ষতা বা অনগ্রসরতা নিয়ে উপহাস করার প্রবণতাকে নিছক অপরিণামদর্শী বলে মনে হয়েছে।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনও আমি দেখেছি। আমার চোখের সামনে মানুষ জেগে উঠেছিল ঘরে ঘরে এবং নেমে এসেছিল রাজপথে। তিন জোটের রূপরেখা অনুসারে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তার বিধবা পত্নী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অপ্রত্যাশিতভাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠন করে। সেই আমলের শুরুর দিকে ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট তারিখে আমাকে একইদিনে একাদশ এবং দ্বাদশবার সংশোধন করা হয়। একাদশ সংশোধনীতে আমার চতুর্থ তফসিল সংশোধন করে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগসহ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে (১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত সময়কালে) তার কৃত সব কার্যক্রমের বৈধতা দেয়া হয়।

একই সঙ্গে এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদকে তার পূর্বতন প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে অনুমোদন দেয়া হয়। একই দিনে আনা দ্বাদশ সংশোধনীটি ছিল ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে কৃত মস্তবড় এক ভুলের সংশোধন, ১৬ বছর পর, তিন জোটের রূপরেখা অনুসারে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার বিধান করে নেয়। দ্বাদশ সংশোধনীতে আমার আর্টিকেল ৪৮, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৭০, ৭২, ১০৯, ১১৯, ১২৪, ১৪১ক এবং ১৪২ সংশোধিত হয়। প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাহী প্রধান করে তার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা জাতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে, এমন বিধান রাখা হয় এই সংশোধনীতে।

একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি তার অতি সীমিত ক্ষমতাসহ সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন, এমন বিধানও করা হয়। এই দুটি সংশোধনী আনার সময় আমার খুবই ভালো লেগেছিল এজন্য যে, গোটা জাতি এ ব্যাপারে ঐকমত্য অর্জন করেছিল। কোনো দ্বিমত ছিল না এই দুটি সংশোধনীর ব্যাপারে। আমাকে যে কোনো সময় সংশোধনের ব্যাপারে সবার মাঝে এমনতর সমঝোতাই তো হওয়া উচিত, তাই না? এ সময়টাতে আমি খুব আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার ব্যাপারে। ভেবেছিলাম সব ক্লেদ পেছনে ফেলে সামনে শুধুই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কাজকর্ম করবেন রাজনীতিবিদরা।

কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই মাঠ আবার উত্তপ্ত করে তোলে আওয়ামী লীগ। মাগুরা উপ-নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ তুলে, বিএনপির অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশে আবার ভয়াবহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে এলে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে দেখেছি, যেখানে বিএনপি ছাড়া আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। বরং তারা রাজপথ দখল করে অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। অবশেষে বিএনপি সংঘাত এড়াতে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের দাবি মোতাবেক স্বল্প মেয়াদের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ তারিখে আমাকে ত্রয়োদশবার সংশোধন করে।

ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসারে দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করা হয়। এই সংশোধনীর বিধান অনুসারে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালেই সপ্তম এবং তার পরের মেয়াদে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ১৬ মে তারিখে আমাকে চতুর্দশবার সংশোধন করা হয়। এই চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে আর্টিকেল ৪ক সংযোজন করা হয়, আর্টিকেল ৬৫ সংশোধন করা হয়; আর্টিকেল ৯৬(১), ১২৯ এবং ১৩৯ সংশোধন করে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, মহা হিসাবনিরীক্ষক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয় এবং আর্টিকেল ১৪৮ সংশোধন করা হয়। এ সময়টাতে আমার বেশ কিছুটা অস্বস্তি লেগেছিল যখন বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোর ব্যাপারটি নিয়ে আওয়ামী লীগ তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের দিকে আঙুল তোলে।

তারা অভিযোগ করে বসে যে, বিচারপতি কে এম হাসানকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার লক্ষ্যেই বয়স বাড়ানোর এই সংশোধনী আনা হয়েছে। এই নিয়ে ঠেলাঠেলি চলতে চলতে রাজনীতির মাঠ চরম উচ্ছৃঙ্খলতার দিকে ধাবিত হয়। লগি-বৈঠা দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মতো ঘটনা ঘটতে দেখে আমি শিউরে উঠেছিলাম। এসব কী হচ্ছে দেশে? এমনতর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আমাকে পুনরায় লঙ্ঘন করে এক অবৈধ শক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতা দখল করে বসে। তারা গায়ের জোরে ২ বছরের মতো ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থেকে সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়ন চালায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মীসহ আপামর দেশবাসীর ওপর।

অবশেষে তাদের অধীনেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সে নির্বাচনকে নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিহিত করেছে বলে শুনেছি। সর্বশেষ ২০১১ সালের ৩০ জুন তারিখে আমাকে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে পঞ্চদশবার। এই পঞ্চদশ সংশোধনী নাকি আবার সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ দাবি করছে। যে রায়ের ভিত্তিতে সংশোধনীটি আনা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি নাকি তখনও আদালত থেকে পাওয়া যায়নি।

পঞ্চদশ সংশোধনী অনুসারে মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে করার বিধান করা হয়েছে এবং আমার মূলনীতিগুলোর মধ্যে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সমস্যা হলো একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী যেমন করে দেশের প্রধান সব রাজনৈতিক শক্তির কাছে গ্রহণযোগ্যভাবে আনা গিয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটছে ঠিক উল্টোটা। বিএনপি তো বটেই, আওয়ামী লীগ ছাড়া আর সবাই নানা দৃষ্টিকোণ থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীকে সমালোচনা করে যাচ্ছে। মহাজোটের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শরিকরা সমালোচনার ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। উপজাতি জনগোষ্ঠী হৈ চৈ করে যাচ্ছেন।

নাক উঁচু জনবিচ্ছিন্ন সুশীল সমাজ যারা সাধারণত আওয়ামী লীগের প্রতি কোমল মনোভাব পোষণ করেন, তারাও দেখলাম এ ব্যাপারে ছেড়ে কথা বলছেন না। পত্রপত্রিকার পাতায় ছোট ছোট জনমত জরিপের ফলাফলও দেখলাম এক্ষেত্রে আওয়ামী সরকারের বিপক্ষে। ইসলামী দলগুলো বিচ্ছিন্নভাবে এবং যুগপত্ হরতাল মিছিল করে পঞ্চদশ সংশোধনীর ব্যাপারে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি তো সোজা-সাপ্টা বলছেই, তারা এই সংশোধনী কিছুতেই মেনে নেবে না। আর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা তো বিএনপি আরও আগেই দিয়ে রেখেছে।

এমনকি তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই সংশোধনী সহকারে আমি নাকি আর সংবিধান নামের যোগ্য নেই, রীতিমত আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহারে নাকি পরিণত হয়েছি। অতএব, তিনি ক্ষমতায় এলে আমাকে নাকি ছুঁড়েই ফেলে দেবেন। বুঝুন এবার আমার অবস্থা! কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে আজ আমাকে? যদি আমি আসলেই কারোর দলীয় ইশতেহারে পরিণত হয়ে গিয়ে থাকি, আমি তো তা হতে চাইনি! আমি অতি নিরীহ একখানা সংবিধান মাত্র। আমাকে নিয়ে নানা রকম চালাচালি করে আমার গ্রহণযোগ্যতা আজ এমন এক নেতিবাচক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে যে, আমার খুবই লজ্জা লাগে। জনসমক্ষে মুখ দেখাতে সঙ্কোচ বোধ করি আজকাল।

একটি দেশের সংবিধান হওয়ার সুবাদে যে স্বাভাবিক গর্ববোধ নিয়ে চলাফেরা করেছি এই কিছুকাল আগেও, সেই গর্বের লেশমাত্র আর অবশিষ্ট নেই আজ। এই তো ক’দিন আগে প্রবীণ বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট লেখক বদরুদ্দীন উমর সাহেব আমাকে নিয়ে এক প্রবন্ধে লিখেছেন যে, এই পঞ্চদশ সংশোধনীর পরিণামেই নাকি আমার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হবে বা আমার মৃত্যু ঘটবে। আমার স্থানে নাকি এক নতুন সংবিধানের জন্ম ঘটবে। কেমন লাগে, বলুন তো ভাই? একজন বড় নেত্রী আমাকে সম্প্রতি পঞ্চদশবারের মতো সংশোধন করলেন নিজের মতো করে, তার সাপেক্ষে অন্য বড় নেত্রী বললেন আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন, আর একই সঙ্গে বামধারার এক প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলছেন আমার নাকি মরণঘণ্টাই বেজে গেছে। এসব দেখেশুনে আমার অবশ্য এমনিতেও আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না।

একটা স্বাধীন দেশের সংবিধান হওয়ার যে অনন্য গৌরব এতদিন উপভোগ করতাম, সেই গৌরবই যদি ধুলায় লুটিয়ে পড়ে, তবে আর অসম্মানিত হয়ে বেঁচে থাকার কোনো মানে খুঁজে পাই না আমি। মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা হিসেবে শুধু বলে যেতে চাই, আমার যে উত্তরসূরি জন্ম নেবে তার জন্ম নিয়ে যেন আমার মতো কোনো ত্রুটি না থাকে, সেদিকে আপনারা একটু বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। বেশ কয়েক মাস আগে আমাকে সংশোধনের জন্য যে লোক দেখানো কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেখানকার এক বৈঠকে গিয়ে এ যুগের এক অসম সাহসী কলমসৈনিক দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান লিখিত মত দিয়ে এসেছিলেন যে, নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি সাংবিধানিক পরিষদ বা তার ভাষায় গণপরিষদ নির্বাচন করতে, যারা জাতিকে একটি যুগোপযোগী সংবিধান উপহার দিয়ে বিদায় নেবে। আমাকে নিয়ে যখন এতই বিতর্ক আপনাদের মধ্যে, তবে সে রকম একটা গণপরিষদ বা সাংবিধানিক পরিষদ গঠন করে আমাকে বরং এবার রেহাই দিন না কেন আপনারা? শুনতে পান কিনা জানি না, ইদানীং আমি নজরুলের একটি জনপ্রিয় গান করুণ সুরে অহর্নিশ গেয়ে চলেছি—‘আমার যাবার সময় হলো, দাও বিদায়...’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.