আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দীপু মনির অর্জনহীন কূটনীতি

Click This Link শতবারের বিদেশ সফরে ব্যক্তিগত ক্যামেরায় ছবির ভাণ্ডার সমৃদ্ পাঁচ বছর মেয়াদের সরকারের তিন বছরের শেষ পর্যায়ে এসেও নূন্যতম অর্জনহীন অবস্থায় আছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির কূটনীতি। শতবারের বেশি বিদেশ সফরে ব্যক্তিগত ক্যামেরায় বরেণ্য মানুষের সঙ্গে ছবির ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করলেও তার মেয়াদে বাংলাদেশের কূটনীতিতে উল্লেখ করার মতো কোনো অর্জন নেই। বরং এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলেও পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। যে ভারতমুখী কূটনীতি চালানো হচ্ছিল, সেই ভারতই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় সর্বশেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ চুক্তি করে। এতেও লাজনম্র হাসির আড়ালে কপালে ঘামের বিন্দু জমেনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা মন্ত্রী হিসেবে নিজের কাঁধেই নিতে হবে দীপু মনিকে। কারণ তাকেই দেশের এক নম্বর কূটনীতিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ' পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, প্রায় তিন বছরে শতাধিক বিদেশ সফর করেছেন দীপু মনি। তিনিই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বছরে গড়ে এযাবৎকালে সর্বাধিক বিদেশ ভ্রমণ করেছেন কিন্তু এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিস্তা চুক্তিতে সফল হয়নি; লাভের বদলে ভর্তুকি দিয়ে ট্রানজিট-সুবিধা দেওয়া হয়েছে; একটি দেশেও বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়নি, বরং বড় শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে; সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশের অবস্থানে। এ সময় উন্নয়ন-সহযোগী দাতা সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক অবস্থানও নিয়েছে।

গভীর সমুদ্রে বন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করলেও চীনের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। জাপানের মতো বন্ধুও পদ্মা সেতু থেকে তাদের সহায়তা স্থগিত করেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কূটনীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহান বলেন, জাপানের সাম্প্রতিক শক্তিশালী ভূমিকম্পের সময় অন্যান্য দেশ সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়। সহমর্মিতা জানাতে তারা জাপান সফরেরও আগ্রহ দেখায়। তবে জাপান সরকারের পক্ষ থেকেই কয়েক দিন পর সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কিন্তু কোনো রাষ্ট্রই তাদের দূতাবাস বন্ধ করেনি। এ সময় ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী। 'দেশটি এ বিষয়ে পরে আর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই জাপানকে কষ্ট দিয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব রাখবেই' বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। জানা যায়, চীন বাংলাদেশকে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরিতে অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছিল।

কিন্তু গত তিন বছরে এ ধরনের কোনো চুক্তি করতে পারেনি সরকার। বরং চীন সফরে গিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেন তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামার সঙ্গে। বিষয়টি নিজ কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রচার করেন ওই রাষ্ট্রদূত। তথ্যবিবরণীটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম ছাড়াও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রচার করা হয়। কিন্তু চীনের কাছে দালাই লামার অধ্যায়টি অস্বস্তিকর।

এ কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাক্ষাতের বিষয়টিকে 'পথ চলতে হঠাৎ দেখা' বলে দাবি করেন দীপু মনি ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আবদুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ কূটনীতি বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ফার্স্ট লেডি হিসেবেই দুই দফা বাংলাদেশ সফর করেন। কিন্তু তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ সফরে অনীহা জানাচ্ছেন। এমনকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও হিলারির একটি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর ভাষায়, ব্যক্তি ড. ইউনূসের কাছে এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরাজয়।

ইউরোপের সঙ্গে কূটনীতি বিষয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, দুর্নীতি ইস্যুতে ও বাংলাদেশের অব্যাহত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সে উদ্বেগ কমাতে পারেননি। মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ও সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সম্ভব হয়নি সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সম্প্রসারণ। বরং বন্ধই রয়েছে কুয়েত ও সৌদি আরবের বাজার। সেইসঙ্গে আট বাংলাদেশি প্রবাসীর শিরশ্ছেদের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঠেকাতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিভিন্ন কারণে ফিরতে হয়েছে লক্ষাধিক বাংলাদেশিকে। তাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় পাঠানোর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, 'সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় জনশক্তি রপ্তানির এই বিপৎসংকুল অবস্থা। ' ভিন্নভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি পাঠানো ছাড়াও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে একাধিকবার সফর করেছেন দীপু মনি। সেখান থেকেও নেই নতুন শ্রমবাজারের ঘোষণা বা অন্য কোনো সুখবর।

ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ও টিপাইমুখ প্রকল্প প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক পানি আইন বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ নজরুল বলেন, তিস্তা নিয়ে ভারত রীতিমতো প্রতারণামূলক আশ্বাস দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শুধু ক্ষতি হবে না বললেই হবে না। এ জন্য কিছু তথ্য-সমীক্ষা বিনিময়ের বাধ্যবাধকতা আছে। ভারত সুস্পষ্টভাবে আইন ভাঙছে। চুক্তিতে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করতে বা আইন মানতে তাদের বাধ্য করতে জোর প্রতিবাদ জানানোর মতো অবস্থানে নেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বা মন্ত্রণালয়ের।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের দাবি জানানো হয়, আসলে সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। আসিফ নজরুলের ভাষায়, 'মাঝেমধ্যে মনে হয়, দীপু মনি কি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী? তিনি তিস্তা চুক্তির জন্য ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেনদরবার করবেন কেন? এটা কূটনৈতিক দেউলিয়াত্ব। ' ভারতকে এখন জোর প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. আকবর আলি খান, ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ও ড. আসিফ নজরুল। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী মনে করেন, টিপাইমুখ ইস্যুতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উচিত জোরালো প্রতিবাদ জানানো। সে অবস্থান নিতে হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকেই।

এত সুবিধা দেওয়ার পরও ভারতের এমন আচরণে ভারতকে সঠিক বার্তা দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে নয়াদিলি্লতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে জরুরি ভিত্তিতে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ তিনি এমন চুক্তির খবর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত একটি ক্যামেরা সব সময়ই হাতে রাখেন দীপু মনি। যেটা দিয়ে তিনি শুধু তার ব্যক্তিগত ছবির ভাণ্ডারকেই সমৃদ্ধ করতে পারছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তিনি বিশ্বের অনেক নেতার অটোগ্রাফ (স্বাক্ষর) সংগ্রহ করেছেন, যা অন্য দেশের নেতাদের বিস্মিত করলেও তারা দীপু মনির ছেলেমানুষিকে প্রশ্রয় দিয়েই অটোগ্রাফও দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকলের এক কর্মকর্তা জানান, জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন নৈশভোজ চলাকালে মন্ত্রিত্বের সফরসূচি ঠিক রাখতে ভোজের মাঝপথেই বিদায় নিতে হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। দক্ষিণ কোরিয়ার সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বান কি মুন জাতিসংঘের মহাসচিবের নৈশভোজের মাঝপথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্র্রীর বেরিয়ে যাওয়া দেখে তাকে হাসিমুখেই বিদায় জানান। নৈশভোজ থেকে বেরিয়ে মন্ত্রী মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বের ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার একটি অকার্যকর ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে স্বাগতিক ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী পদমর্যাদার নেতা অংশগ্রহণ করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.