নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক ফাহিম বেচারা 'পদ্মা নদীর মাঝি' বইখানার জন্য আমার মাথা খাইবার উপক্রম করিয়াছিল। কোথাও বইখানা ফ্রিতে না পাইয়া অবশেষে তাহার জন্য কিনিয়া নিয়া গেলাম। বইটাতে সে কি জেন তন্য তন্য করিয়া খুঁজিতেছে। এক সময় সে স্বস্তির ফেলিল। একটা জায়গা সে কয়েকবার পড়িল।
যাহার সারমর্ম হইল,দুইটা ছোট শিশু সামান্য খাবার লইয়া মারামারি করিতে থাকিলে তাহাদেরকে ছাড়াইয়া দিবার উদ্যোগ নেওয়া হইল। তাহাদের বাবা তখন বলিয়াছিল ছাড়িয়া দাও। তাহাদেরকে নিজেদের অধিকার আদায় করিয়া লইতে দাও। এ বাক্যটি কয়েকবার পড়ল ফাহিম। তাহার পরে ঝড়ের গতিতে আগের পরের আরো কয়েক পাতা পড়িল।
অতঃপর তাহার সুযোগ হইল আমার দিকে তাহার নেকদৃষ্টি দিবার।
আচ্ছা দোস্ত ,এই যে শিশু দুইটিকে যে তাহাদের পিতা মারামারি হইতে বাঁধা দিল না,তাহদের অধিকার বুঝিয়া নিবার সুযোগ দিল,তাহাতে তোর কি মনে হয়?
কিছুই মনে হয় নাই। বইয়ে আরো কতকিছু থাকিতে পোলাপান দুইটার ঝগড়া লইয়া ভাবিবার মত সময় আমার নাই।
ভাল। ফাহিমের সংক্ষিপ্ত উত্তর।
ভাল তো ঠিক আছে। কিন্তু ইহা নিয়া তোর এত মাথা ব্যাথা কেন ?আর আমাকেও এভাবে অস্থির হইয়া বইখানা যোগাড় করিতে বলিয়াছিলি কেন?
না ভাবিতেছিলাম তাহারা মারামারি করিবার শক্তিটা পাইল কোথা হইতে ?
কথার মাথামুন্ডু আমি কিছুই ধরিতে পারিলাম না। মেজাজ গরম হইলে তো আর কোন কিছুরই দরকার হয় না। সেই জায়গায় মারামারি করিবার জন্য আলাদভাবে প্রস্তুতি নিতে হইবে ইহার কোন মানে আমার বুঝে আসিল না।
ফাহিম বেটা যেন কাঁটা ঘায়ে মরিচমাখা লবণ ছিটাইয়া দিল।
বুদ্ধিজীবীর মত মাথা ঝাঁকাইতে ঝাঁকাইতে বলিল ,নিশ্চয়ই কিছুই বুঝিস নাই । অবশ্য না বুঝিবারই কত্থা।
এই একটি কথা শুনিলেই আমার মাথার তাপমাত্রা বাড়িয়া যায় অটোমেটিক। বুঝাইয়া বলিবার পরও বুঝি নাই এমন রেকর্ড আমার নাই। ফলে স্বাভাবিকভাবে ক্ষেপিয়া গেলাম আমি।
বলিলাম,বুঝাইয়া বল। বুঝা না বুঝা ইহা আমার একান্তঅই ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
বেটা আমার কথা শুনিয়া একখানা শুস্ক হাসি দিল।
জিজ্ঞাসা করিল,তুই এই বইখানা পড়িয়াছিস?
হ্যাঁ।
ভালভাবে পড়িয়াছিস তো?
হ্যাঁ,ভালভাবেই পড়িয়াছি।
বেশ ভাল করিয়াই পড়িয়াছি।
আচ্ছা দোস্ত,এই বইয়ের কোথাও কি উল্লেখ আছে যে,তাহারা মারামারি করিবার আগে এনার্জি ড্রিঙ্ক বা এই জাতীয় কিছু শক্তিবর্ধক কিছু পান করিয়াছিল?
কী বলিতেছিস পাগলের মত?
পাগলামী নয় রে। সত্যিই জিজ্ঞাসা করিতেছি। আমিও অবশ্য খুঁজিয়াছি। পাই নাই।
না থাকিলে,না ঘটিলে তুই পাইবি কোথা হইতে?বলিলাম আমি। চেষ্টা করিলাম, কিন্তু তাহার কথার মোড় কোনদিকে যাইতেছে বুঝিতে পারিলাম না।
আচ্ছা দোস্ত ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে এই যে এত বড় একটা অর্জন হইয়াছিল তাহাতো তুই জানিস?
ইহা তিন বছরের বাচ্চাও জানে। নতুন করে কী জানিতে চাস তাহা বলিয়া ফেল।
আচ্ছা তোর কি ইহা জানা আছে যে,তাহারা এই আন্দোলনের সময় কোন প্রকার এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করিয়াছিল কিনা।
দেখতো তোর মেমোরীখানা একটু ঝাঁকাইয়া।
না তো?
আচ্ছা আমাদের দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করিয়াছিল। তাহারা দেশ স্বাধীন করিয়া তবেই থামিয়াছিল। আচ্ছা তাহারা কোন প্রকার এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করিয়াছিল বলিয়া কি তোর কাছে কোন প্রকার তথ্য আছে?
আসলে বেটার কোন কথাই বুঝে আসিতেছে না। ইহার জন্য অবশ্য আমার চেয়ে এই বেটাই বেশী দায়ী।
শোন, দোস্ত রাগ করিস না। কয়েকদিন ধরিয়া আমার মাথায় কেবল একটা চিন্তাই ঘুরিতেছে। এই যুগের ছেলেমেয়েদের এত বেশী এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করিতে হয় কেন?উহা ছাড়া যেন তাহারা কোন কাজে স্প্রী্ড পায় না। ইহার কারণখানা কী?বেশ কদিন ধরিয়াই চিন্তা চালাইতেছি কিন্তু কোন ফল পাইতেছি না। একবার মনে হইল যে সব যুগেই হয়তো মানুষ এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করিয়াই এনার্জি যোগাড় করিত।
এই রকম সুন্দর সুন্দর বোতল হয়তো ছিল না। কিন্তু ঘাটিয়া তেমন কিছু পাইলাম না । কারণ আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে যদি এইভাবে এনার্জি সঞ্চয় করিয়া নামিতে হইত তাহা হইলে অবশ্যই ইহা আলোচনায় আসিত। । ইতিহাসে ইহা লিপিবদ্ধ হইয়া যাইত।
কিন্তু নিরেপক্ষ,দলীয় কোন রকম ইতিহাসে ইহা পাইলাম না।
একসময় মনে হইল তুই পন্ডিত মানুষ। কিছু জানিতে পারিস। হয়তো মানিকচন্দ্র বাবুও কিছু জানিতে পারে। যেহেতু সে মারামারির পক্ষে।
কিন্তু দেখিলাম,লেখক মহাশয়ও কিছু জানেন না। আর তুই পাঠক মশাইও কিছু জানিস না।
একটু দম নিল ফাহিম। এরপর আবার শুরু করিল,তুই যতক্ষণ রাগ করিয়াছিলি,ততক্ষণে আমি একখানা সিদ্ধান্ত পাকা করিয়া ফেলিলাম। আর সেটি হইল আসলে তখন মানুষ কোন ধরনের এনার্জি ড্রিঙ্কই পান করে নাই।
তারপরেও কেউ নিজের অধিকার আদায় করিয়াছে,কেউ ভাষার অধিকার ছিনাইয়া নিয়াছে,আবার কেউ স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য আদায় করিয়া নিয়াছে। কিন্তু এই যদি হয় মূল অবস্থা,তাহা হইলে আমাদের যুগের এই অবস্থা কেন?জিজ্ঞাসা করিতেই হইল আমাকে।
বর্তমানে যাহারা এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করে ,তাহা কেন পান করে তা তাহারা নিজেরাই জানে না। অন্যরা পান করে বলিয়াই হয়তো তাহদের পান করিতে হয়।
আমি বলিলাম,হয়তো ফ্যাশন করিয়াও কেউ কেউ ইহা পান করিয়া থাকে।
এইতো তোর মাথা খুলিয়াছে দেখিতেছি। জানি ইহার জন্য তোকে কোন এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করিবার প্র্য়োজন হয় নাই।
ঠিক। ঐসব দেখিলেই আমার কেমন জানি মনে হয়। মনে হয় ঐ বোতলের কাছে আমি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করিব?বলিব আমাকে কিছু এনার্জি দাও? আমার কাছে মনে হয় ইহা মনুষ্য প্রজাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক একখানি ব্যাপার।
বলিলাম আমি।
ঠিক বলিয়াছিস। এই নে লেবুর শরবত । আর বল লেবুর শরবত জিন্দাবাদ। এনার্জি ড্রিঙ্ক মুর্দাবাদ।
এত সময় ধরিয়া কথাবার্তা যাহাই হউক না কেন, এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে যে,শরবতখানা ফার্স্ট ক্লাস হইয়াছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।