আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এনজিওর শেল্টা হোমে যৌন হয়রানি?!

কম্প্রমাইজ প্রথম ধাপ দুর্নীতির। তাই নো কম্প্রমাইজ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই। আজন্ম যোদ্ধা সংসপ্তক আমি। নির্যাতনের তথ্য দেয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তিন শিশুকে বিতাড়ন বিশেষ প্রতিনিধি - 15 November 2011 রাজশাহীর এনজিও অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) আশ্রয়কেন্দ্র (শেল্টার হোম বলে পরিচিত) থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তিন আশ্রিত শিশুকে।

দাতাগোষ্ঠীর একটি মতবিনিময় সভায় আশ্রয় কেন্দ্রের শিশুরা তাদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ করে। বিতাড়িতদের দু’জন মাধ্যমিক এবং অন্যজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ঘটনা তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছে দাতাসংস্থা উইন রক। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে এসিডির পক্ষ থেকে এ প্রকল্পে আর কাজ করা হবে না বলে জানানো হয় ওই প্রকল্পে তাদের সংস্থায় কর্মরতদের। বিতাড়িত শিশুরা এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে পাচারের সাজানো ঘটনা প্রকাশ করে দাতাসংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণের অভিযোগও আনে।

এসব অভিযোগ তিনজন শিশু করে বলে এসিডি কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করে। এরপর নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার নিজেই তাদের আশ্রয় কেন্দ্রছেড়ে চলে যেতে বলেন। বাধ্য হয়ে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর এদের মধ্যে একজন কন্যাশিশুর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে তার পরিবার। বিতাড়িত আরেক শিশুকে মোবাইল ফোনে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে সে অভিযোগ করে।

অবশ্য এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার আশ্রয়কেন্দ্রে শিশু নির্যাতন ও তিনশিশুকে বের করে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ওই তিনশিশু চাকরি পেয়ে যাবার কারণে স্বাভাবিক নিয়মেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছে। সেই এফজিডি : ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ফোকাসগ্রুপ ডিসকাশনের আয়োজন করে সেভ দ্য চিলড্রেন অস্ট্রেলিয়া এবং প্লান বাংলাদেশ। এতে উপস্থিত ছিলেন সেভ দ্য চিলড্রেনের ফিরোজুল ইসলাম এবং প্লান বাংলাদেশের পক্ষে ফারুক আহামেদ। এতে এসিডির ১২ জন অংশগ্রহণ করে।

অপর দুই অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ছিলেন এনজিও আশ্রয়ের একজন এবং লফস এর একজন শিশু প্রতিনিধি। এফজিডির একটি সূত্র জানায়, সেখানে শিশুদের প্রতি আশ্রয়কেন্দ্রে কী ধরনের নির্যাতন করা হয়- এমন একটি প্রশ্ন ছিলো। এর জবাবে এসিডির আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুরা বলে, ‘গালিগালাজ করা হয়’, ‘খরচ কমাতে রাতে হারিকেন নিয়ে চলে যাওয়া হয়’, ‘শিশুর আগের জীবন নিয়ে খোঁটা দেয়া (বিদ্রƒপ করা) হয়’, ‘শিশুদের যৌন হয়রানি করা হয়’, ‘নির্বাহী পরিচালকের আত্মীয়-স্বজনের হাত-পা টেপানো হয়’, ‘ঘুম থেকে না উঠলে গায়ে পানি ঢেলে দেয়া হয়’ এবং ‘অসুস্থ থাকলে চুল ধরে টানাটানি করা হয়’। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিতাড়িতদের একজন রশিদ জানান, এফজিডিতে আশ্রিতদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এতে তারা যে তথ্য দেয় তা এসিডি কর্তৃপক্ষকে ক্ষুব্ধ করে।

এই অভিযোগগুলো করেছে বলে সন্দেহ করে তিনজনকে নিয়ে বসেন এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার। তিনি এই তিনজনকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে বলেন। অগত্যা তারা নগরীর সাগরপাড়ায় অবস্থিত আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যায়। উইন রকের তদন্ত : এফজিডিতে তথ্য দেয়ার পর বিতাড়িত শিশুরা দাতাসংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২ নভেম্বর দাতাসংস্থা উইন রক-এর কান্ট্রি টিমের চিফ অব দ্য পার্টি সারা প্রিয়াজন এবং অপর কর্মকর্তা মিজ দিপ্তা এই দলে ছিলেন।

তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বিতাড়িত তিনজনের সঙ্গে কথা বলেন। বিতাড়িতরা তাদের সঙ্গে এবং আশ্রয়কেন্দ্রের অন্যদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে। তারা আরো জানায়, এ জাতীয় ঘটনা আশ্রয়কেন্দ্র এবং নির্বাহী পরিচালকের বাড়িতে ঘটে থাকে। এর আগে তদন্ত দল এসিডির আশ্রয়কেন্দ্রে অন্য শিশুদের সঙ্গে বসেন। উইন রকের প্রকল্পে সহায়তাপ্রাপ্ত শিশুদের সঙ্গেও তারা বসেন।

তারা কোথায় থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে শিশুরা সবাই জানায় তারা আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে থাকে। তদন্ত দল সরাসরি তাদের উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা নিশ্চিত হয়ে বলেন যে তারা আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকে এবং এ বিষয়ে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে। এর কারণ হলো, উইন রকের প্রকল্পে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কারো জন্য সহযোগিতার সুযোগ নেই। এ প্রকল্পে সহায়তা পায় যারা পরিবারে পুনর্বাসিত হয়েছে।

তদন্তের বিষয়ে উইন রকের মিজ দিপ্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তদন্তের ফলাফলের বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে চিফ অব দ্য পার্টি সারা প্রিয়াজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ফোন নম্বর না পাওয়া ও দূরত্বের কারণে সোনার দেশের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। তবে তারা এ বিষয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের শিশু এবং বিতাড়িত তিনশিশুর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান। তবে সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তদন্তে উইন রক অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের তদন্ত : এসিডির এই ঘটনার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেনের কাছে। সংস্থার কর্মকর্তা ফিরোজুল ইসলাম সোনার দেশকে জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ মাসেই তাদের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দল এ বিষয়ে তদন্ত করবে। তারা মূলত প্রকল্পের আওতায় শিশুরা হয়রানির শিকার হয়েছে কি না তা দেখবে। তিনি বলেন, ‘যে আলোচনা সভার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুদের বিতাড়িত করা হয় সেটির আয়োজক অ্যাটসেক বাংলাদেশ। তাদের সহযোগিতা করে প্লান বাংলাদেশ।

সেভ দ্য চিলড্রেন মূলত এতে সহায়কের দায়িত্ব পালন করে। এফজিডির একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া এমন হবে, এটা দুঃখজনক। ’ পৃথক একটি সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে প্লান বাংলাদেশও তদন্ত শুরু করেছে। সাজানো পাচার ভিকটিম : এসিডির বিরুদ্ধে পাচার ভিকটিম সাজিয়ে দাতাসংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণের অভিযোগ তুলেছে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত শিশুরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার ১০ জন শিশু এসিডির আশ্রয়কেন্দ্রে থাকে।

বিতাড়িত রশিদ জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে এই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলো সে এবং এখানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই প্রকৃতপক্ষে পাচার ভিকটিম নয়। ভারত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে সাতজনকে আনা হয়েছে তারাই প্রকৃত পাচারের শিকার। পরিবারের অভিভাবকদের কাছ থেকে শিশুদের এই আশ্রয়কেন্দ্রে আনার সময় বলা হয়ে থাকে, শিশুদের পড়াশোনা করানো হবে। পাশাপাশি তাদের বেঁচে থাকার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এরপর তাদের সবার একটি করে জীবন বৃত্তান্ত তৈরি করা হয়।

এতে লেখা হয় তারা ভারতে পাচার হয়ে গিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে তারা কেউ পাচারের শিকার হয় নি। এদের অনেকেই বিভিন্ন সভা সেমিনারে নিজেদের পাচার ভিকটিম বলে উল্লেখ করে। সোনার দেশের অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন নতুন প্রজেক্ট এলে এর সঙ্গে ওইসব জীবন বৃত্তান্তও পাল্টে যায়। নতুন নতুন বিষয় দিয়ে সাজানো হয় ঘটনা।

এর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সন্নিবেশ করা হয়। এমন দুজনের জীবন বৃত্তান্তের প্রকল্পভেদে একাধিক রূপ সোনার দেশের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে একজন ভিকটিমের একটি বৃত্তান্তে বলা হয়, সে পাচারের শিকার হয়ে ভারতে চলে যায়, পরে নিজেই পালিয়ে চলে আসে। অন্যটিতে বলা হয় তাকে ভারতের একটি পতিতালয় থেকে উদ্ধার করা হয়। বিয়ে হয়ে গেলো শিশুটির : এসিডির আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত এক মেয়ে শিশুর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে তার পরিবার।

যে আলোচনা সভার প্রতিবেদনের কারণে সে বিতাড়িত হয়, সেখানে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৮ বছরের কম। এসিডিতেই সে চাইল্ড ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে কাজ করত। তার বেতন ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। রশিদকে প্রাণনাশের হুমকি : আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিতারিত শিশু রশিদকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। রশিদ জানিয়েছে, গত ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে নটায় তার মোবাইল ফোনে একটি ছেলে কন্ঠ বলে ‘তোর বুক ফেঁড়ে কলিজা বের করে নিব।

সৌদি আরবে মাথা কেটে ফেলার দৃশ্য দেখিস নি? তোরও ওই অবস্থা হবে’। এ ব্যাপারে এখনো থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি হয় নি। যা বললেন এসিডির নির্বাহী পরিচালক : আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের নির্যাতনের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার। তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এফজিডিতে ৫০ জন শিশু অংশ নিয়েছিলো। সেখানে শুধু এসিডির শিশুরা ছিলো না।

অন্য শিশুরাও ছিলো। তারা তাদের অধিকারসহ নানা বিষয়ে সুপারিশমালা দেয়। সেসব সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠানো হয়। তাতে কী কী বিষয় ছিলো তা আমার জানা নেই। কারণ, আমি সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম না।

’ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তিনজন শিশুকে বের করে দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন সালীমা সারোয়ার। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটে নি। যে তিনজনের কথা বলছেন, তারা চাকরি পাবার কারণে নিয়মমাফিক স্বাভাবিকভাবেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেছে। এছাড়া সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার কারণেও বিধান মোতাবেক তারা আর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে পারে নি। ’ তাহলে এসব শিশুরা নির্যাতন এবং শেল্টার হোম থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী তারা এখানে প্রায় দুবছরের মতো চাকরি করেছে।

তাদের বেতন ছিলো তিন হাজারের কিছু বেশি। চাকরি শেষে বেতন নিয়ে তাদের মধ্যে হয়তো কোনো হতাশা তৈরি হতে পারে, সে জায়গা থেকে তারা এমন অভিযোগ করছে বলে আমার মনে হয়। ’ শিশুদের অভিযোগ নিয়ে দাতা সংস্থা উইনরকের তদন্ত প্রসঙ্গে সালীমা সারোয়ার বলেন, ‘তারা কোনো তদন্তে আসে নি। ওই দাতাসংস্থার দুটি প্রকল্প ছিলো এসিডির সঙ্গে। প্রকল্প শেষে নিয়মানুযায়ী তারা রিভিউ করতে এসেছিলো।

এটি কোন তদন্তকাজ ছিলো না। ’ শিশুদের পাচারের ভিকটিম বলে চালানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাত বছর পর যদি কেউ এসে বলে সে পাচারের ভিকটিম ছিলো না, তাহলে আমাদের কী করার থাকে! আসলে পাচার তো শুধু গোপনে নিয়ে যাওয়া নয়, চাকরির প্রলোভন দিয়ে বিদেশে নিয়ে যাওয়াও তো পাচারের মধ্যেই পড়ে। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.