আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন রাজনৈতিক নেতার পরকাল (আখিরাত)- রম্য গল্প

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই পোষ্টে এমন কিছু বিষয় নিয়া চরম রম্য করা হইছে যা অনেকের সহ্য ক্ষমতা হয়তো অতিক্রম করবে। সুতরাং যাহারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার অনুভুতিতে আঘাত প্রাপ্ত হইয়া থাকেন তাহারা দৌড়ের উপ্রে টেম্পু ধরেন, অন্যথায় সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে প্রবেশ করেন। একজন বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতা মৃত্যু বরণ করার পর হাশরের ময়দানে আবার পূনর্জীবন পাইয়া খাড়াইয়া উঠলেন। নেতাজী আঁতকা হাসরের ময়দানে উদিত হইয়া কিছুই বুঝতে পারতেছেন না (আমাদের প্রিয় ব্লগার নেতা না আবার)। প্রচন্ড রকম গরম অনুভুত হওয়ায় নেতাজী উপ্রের দিকে চাইয়া দেখেন সুর্য মাথার আধা হাত উপরে।

সুর্যের এহেন আচরণ দেইখ্যা নেতাজী তাৎখনিক ভাবে চিক্কাইর দিয়া জ্ঞান হারাইলেন। অনেক্ষণ পর কারো গুতা খাইয়া যখন নেতার আবার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখেন তিনি মিজানের (পাল্লা) সামনে খাঁড়া, আর তার পাপ পূণ্য পাল্লায় তুইল্যা ওজন দেয়া হইতেছে। নেতার কি সৌভাগ্য চাইয়া দেখেন তাকে যে ব্যাক্তি তাঁকে গুতা দিয়া সজাগ করছে সে দুনিয়াতে নেতার একজন খাস চামু ছিলো। নেতা আখিরারাতের ময়দানে চামুকে পাইয়া খুশী হইলেন আর চামু নেতাকে দেখে দন্ত বিকশিত করল। এদিকে নেতার কুকীর্তীর পাল্লা এতোই ভারী ছিলোযে, কোন কিছু বুইঝ্যা উঠার আগেই নির্ধিধায় নেতার দোজোখ প্রাপ্তি ঘটল।

নেতাজীর শাস্তি এইরূপ ঘোষনা করা হইলে; একটা মোটা লৌহ দন্ড টকটকে লাল না হওয়া পর্যন্ত আগুনে গরম করা হবে, লৌহ দন্ড যথেষ্ট পরিমানে লাল হইয়া গেলে তাহা নেতার পশ্চাতদেশ দিয়া অবিরত গমন করানো হবে আর বাইর করা হবে। শাস্তি শুইন্যা নেতা যতটা না ভয় পাইলো চামু তার চেয়ে বেশী প্রতিকৃয়া দেখাইলো। কিন্তু নেতা চামুকে আস্বস্ত করে বললেনঃ আরে বেটা টেনশনের কি আছে, প্রথম দুই তিনবার কষ্ট হইবো তারপর ফুটা বড় হইয়া গেলে খালী আইবো আর যাইবো। তাছাড়া ব্যাবস্থা একটা করে ফেলব ইন্সাল্লাহ। অজানা কোন কারণে চামু নেতার কথায় সম্পূর্ণ আস্বস্ত হইলো।

আর আমাদের গল্পের সূত্রপাত এখান থেকেই। নেতাকে দোযখে নিক্ষেপ করার পর দোযখের আগুনের গরমে উনি আবার দিশেহারা হইলেন, ঘটনা কি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। হথাৎ দেখতে পাইলেন অদূরেই কেহ একজন একটা টকটকে লাল লোহার শিক হাতে নিয়া এইদিকেই আসতেছে, নেতার আর বুঝতে বাকি রইলোনা কাহিনী কি ঘটতে যাইতেছে। এই মুহুর্তে কি করা যায় সে বিষয়ে নেতা দ্রুত ভাবতে লাগলেন। শিক হাতে দোযখের ফেরেস্তা আরেকটু কাছাকাছি আসতেই নেতাজী শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।

নেতার কান্না দেখে দোযখের ফেরেস্তা বলে উঠলেন, কান্না কাটি কইরা লাভ নাই চান্দু, সাস্তি তোমাকে পাইতেই হবে। নেতা চৌক্ষের পানি মুছতে মুছতে বললেনঃ ভাইরে আমি কি আর আমার লাইগা কান্দি? আমিতো কান্দি আপনের কষ্টে? দোযখের ফেরেস্তা বললঃ আমার আবার কষ্ট কি আমিতো খালী রড চালান দিমু, টেরতো পাইবেন আপনে। নেতাঃ সেই জন্য কান্দি নারে ভাই। আপনের অবস্থা দেইখ্যা কান্দি। ইস! দুযোখে থাকতে থাকতে দুযোখের আগুনে পুইড়া আপনের সোনার দেহখানী পুঁইড়া আঙ্গার হইয়া গেছেগা।

আমি না হয় পাপিতাপী, তাই আমার দোযখেই থাকতে হইব, কিন্তু আপনের কি দোষ আপনে কি কারণে এইরকম আগুনে কষ্ট পাইতেছেন? নেতার কথা শুইন্যা ফেরেস্তা কিঞ্চিত দ্বন্দে পইড়া গেল। ভাব বুঝতে পাইরা নেতাজী ফেরিস্তার কাছে আইসা নিজের পাঞ্জাবির কোনা দিয়া দোযখের ফিরিস্তার কপালের ঘাম মুছে দিয়ে আবার বিলাপ শুরু করলেন, আহারে! এতো কষ্ট দেইখ্যা আমার দিলটা খান খান হইয়া গেল। ওইতো! একবার বেহেস্তের দিকে চাইয়া দেখেন, আপনার মত ফিরিস্তারা কি সুন্দর এয়ার কন্ডিশনের তলে বইসা ডিউটি করতেছে। আহা! কি মনোরম সঙ্গীত বাজতেছে সেই খানে, আর আপনে এইখানে এই দুযোখের আগুনে কি কষ্টটাই না করতেছেন। নেতার কথা শুইন্যা ফিরিস্তা মনে মনে ভাবতেছে, এই ভালা মানুষটাতো মোটেই দোযোখে থাকার কতা না।

নিশ্চই কোথাও কোন গন্ডগল হইতেছে। তাই সে নেতাকে নিয়ে দোযখের চীফ ইঞ্চার্জ এর কাছে গেল। গিয়ে সব কথা খুলে বলার পর দোযখ চীফ বলল, ভাই কি বলার পরিষ্কার করে খুলে বলেন। এইবার নেতা সুজোগ পেয়ে গেছে, ততোক্ষণে এই নাটিকায় দোযখের সব ফেরেস্তারা চিফের অফিসের সামনে এসে হাজির হইছে। নেতাজী একটা টুলের উপরে উইঠ্যা সবার উদ্যেশে ভাষন দিচ্ছেনঃ সংগ্রামী সাথীয় ফেরেস্তাগন।

আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। দোজখে গরম বেশী তাই কথা না বাড়িয়ে সংক্ষেপেই বলছি। খোদাতালা আপনাদের সব ফেরেস্তাকে একই এলিমেন্ট দিয়া তৈরী করেছেন। আপনারা সব ফেরেস্তা দেখতে একই রকমের, সবাই খোদার অনুগত, তারপরও কেন আপনাদের সাথে এই বৈষম্য? কেন আপনাদের উপর এই ঘোড় অনাচার। সেটা দেখে আজ আমার হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে।

(সব ফিরিস্তা প্রশ্নবোধক নয়নে নেতার দিকে চেয়ে) ভাইসব, আপনারা বেহেস্তের দিকে চেয়ে দেখেন, আপনাদের সমকক্ষি ফেরেস্তারা কি আরামে ডিউটি করতেছে অথচ আপনারাই কেন এই আগুনের ভিতরে কষ্ট পেয়ে ডিউটি করবেন। এই অনাচার কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। দোযোখ চিফ বলে উঠলেন, কিন্তু নেতাজী, কাউকে না কাউকেতো দোযখে ডিউটি করতেই হবে? নেতা যেন এই প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিলেন, নেতা চিতকার বললেন। ঠিক, আমার সংগ্রামী বন্ধু ঠিকই বলেছেন। আমি চাই আপনারা সব ফেরেস্তারা সিফট অনুযায়ী ডিউটি করেন, এক সপ্তাহে দোযখে ডিউটি করবেন আর এক সপ্তাহে বেহেস্তে ডিউটি করবেন।

(নেতার কথা শুনে ফিরিস্তারা সবাই একে অপরের দিকে চেয়ে গুনগুন করে বলতে লাগল, নেতাতো ঠিকই বলছে) নেতা সব কথাই কান খাড়া করে শুনছেন এই ফাকেঁ দোজখের চিপা থেকে নেতার চামু ধীরে ধীরে নেতার পিছে আইসা খাড়াইছে, চামুর বুদ্ধিসুদ্ধি নেতার থেকে কম তার প্রমান মেলে তার পশ্চাতদেশ থেকে নির্গত ধোঁয়ার রেখা দেখে। চামু এসেই সবাইকে বললেন তালি দেন ভাইসব তালি দেন। সেই সাথে বজ্র কন্ঠে আওয়াজ তুলেন "নেতাজী নেতাজী, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। নেতাজী এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে" সবাই চামুর কন্ঠে কন্ঠ মিলাইলো। নেতা সবাইকে থামিয়ে বললেন, শুধু তাই নয় ভাইসব, আমি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত চিত্তে লক্ষ করেছি, আপনাদের কোন ছুটি নাই, সবাই চব্বিশ ঘন্টা ডিউটি দিতেছেন বিনা বেতনে।

এটা মেনে নেয়া অত্যন্ত কষ্টকর। আমি চাই আপনাদের ডিউটি আন্তর্জাতিক শ্রমনীতি অনুযায়ী হোক। সবাই আটঘন্টা করে ডিউটি করবেন আর সপ্তাহে একদিন ছুটি। ভাইরে আপনাদেরওতো জান আছে। তাই আপনাদের জন্য আমার এতো মায়া লাগে।

এইবার নেতার কথা শুইন্যা সব ফিরিস্তাদের ভেতরে জেহাদী জজবা দেখা দিল। নেতা চিতকার করে বললেন, ভাইসব এই অধিকার আদায়ের সংরামে আসেন সবাই আন্দোলনে নামব। আমরা খোদাতালার বাসভবন ঘেরাও করব। দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দোযখে "হরতাল"। সবাই বলেন "হরতাল হরতাল"।

দোযখের গেইটে তালা ঝুলাইয়া সব দোযখের ফেরেস্তারা যুদ্ধং দেহী হইয়া খোদাতালার বাস ভবনের দিকে রওয়া নইলো, মিছিল নিয়ে যাবে সময় পথিমধ্যে তারা ব্যাপক ভাংচুর করল, যায়গায় যায়গায় টায়ার পোঁড়াইলো, ঘনঘন পটকা ফুটাইলো। রাস্তার ঘটনাবলীর পিছনে চামুর দিকনির্দেশনা আছে বলে ধারণা করা যাইতেছে। খোদাতালা নিজ বাসভবনে দীর্ঘদিন পরে আরামে ঘুমাইতেছিলেন। [এখানে একটা মিথ শ্যায়ার করার লোভ সামলাইতে পারতেছিনা। আপনেরা জানেন হজ্রত মুসা (আঃ) তুর পাহারে খোদার সাথে বাৎচিত করত।

একদিন মুসা খোদারে জিগাইলো খোদা আপ্নে ঘুমাননা? জবাবে খোদা মুসার হাতে এক গেলাস পানি ধরাইয়া দিলেন এবং পানির গ্লাস হাতে নিয়া একসময় মুসা তুর পাহাড়ে ঘুমাইয়া পড়ল। ঘুম ভাঙ্গার পর মুসা দেখল, তাঁর হাতের গ্লাস ঘুমের ভিত্রে পইড়া গিয়া সব পানি মাটিতে পইড়া গেছেগা। খোদা তখন মুচকি হাইস্যা কইল, দেখলা মুসা, ঘুমের ভিত্রে একগ্লাস পানি তুমি ঠিক রাখতে পারলা না। আর আমার হাতেতো পুরা দুইন্যা আমি ঘুমাইলে দুইন্যার কি অবস্থা হইবো সেইটা ভাববার পারতাছো?] হাশরের মাঠের বিচার কার্য্য শেষ হওয়ার পর খোদার হাতে আর করার মত কাজ ছিলোনা তাই উনি আরাম করতেছিলেন। কিন্তু ফিরিস্তাদের স্লোগানে উনার কাঁচা ঘুম ভাইঙ্গা গেল।

খোদাতালা বিলা মিজাজ লইয়া বাইরে আইসা যখন শুনলেন দোযখে হরতাল চলতেছে তখন উনার চেহারা দেখার মত হইলো। হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারতে ছিলেননা, দেইখ্যা মনইতাছিলো উনি কানতে কানতে হাসার ব্যর্থ চেষ্টা করতেছিলেন। এইদিকে ফিরিস্তাদের দাবীদাওয়া নিয়া নেতাজী তিন দফা দাবী পেশ করলেন। ঘুমের তাগিদ অনুভব কইরা খোদাতালা বারগেইনিং না কইরা ফিরিস্তাদের সব দাবী মাইন্যা নিলেন (বেহেস্ত দোযখ ডিউটি শিফটিং, ডেইলী আট ঘন্টা ডিউটি এবং সপ্তাহে এক দিন ছুটি)। খোদা আরও বুঝতে পারলেন যে, এই নেতারে আর চামুরে দোযখে রাখলে তারা কয়দিন পরপরই ঝামেলা সৃষ্টি করব তাই তাদের বেহেস্তের এক কোনায় একটা মহল দিয়া দিলেন শান্তি রক্ষার স্বার্থে।

ফেরেস্তারা খুশী হইলেন নেতা আর চামু খুশী হইলো। নেতাজী বেহেস্তের নরম কুরসীতে বইস্যাই হাঁক দিলেন কইগো আমার হুরেরা তোমরা বাইরে আসো। কিন্তু আফসোস, কোন হুর দেখা গেলনা বড়ং দুই জন কঁচি গেলম্যান পর্দার আড়াল থেইক্যা বাইর হইয়া আসলো। একজনের হাতে একটা হুক্কা আর এক জনের হাতে এক বাটি খেঁজুর। নেতাজী চেইত্যা কইলো তোমরা আইছো কেন? আমার হুরেরা কই? হাতে বাটিওয়ালা গেলম্যান কইলো আপনেতো আর আমলনামার গুনে বেহেস্ত পান নাই, আপনারে বিবেচনায় বেহেস্ত দেয়া হইছে, তাই আপনে বইসা বইসা তামুক টানেন আর খেঁজুর খান।

রঙতামাশা যা করার আমাদের সাথেই করতে হইবে। নেতাজীর শরীর গুলায়া উঠল। চিৎতকার কইরা কইলেনঃ আমি কি গে নাকি? এতো বড় অপমানের পরিশোধ আমি কড়ায় গন্ডায় নিবো। এরপর চামুর সাথে বৈঠক করে নেতাজী পরবর্তী কার্যপ্রনালী নিয়া চিন্তা করতে লাগলেন। যদি পাঠক চায় তবে, এর পরের পর্বে নেতাজী কি ভাবে খোদাতালাকে ক্ষমতা চ্যুত করে নিজেই সমস্ত ক্ষমতা দখল করেছেন তার উপর বিষদ বয়ান করা হবে..!!! লেখাটা এই লিন্ক থেকে কপি করা ।

ভাল লাগল তাই শেয়ার করলাম। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.