আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃতদের গানঃ মৃত্যু হোক দেহ, প্রাণ, মন

ব্যাঘ্র যুগে শুধু মৃত হরিণীর মাংস পাওয়া যায় ১. বিষণ্ণ রূপকাবলী শহরে কাঁচের মড়ক লেগেছে। দালানে কাঁচ, চোখে কাঁচ, পকেটে কাঁচ, বাড়িতে বাড়িতে কাঁচ। কিন্তু কি আশ্চর্য, আকাশ সে কাঁচে প্রতিফলিত হয় না! কাঁচ ভেদ করে রোদ আসে, কাঁচ ভেদ করে চলে যায়। কিন্তু শহরের মানুষ রোদ দেখে না। তারা দেখে, তারা ফিসফিস করে, 'আমার টিভির স্ক্রিনে টিকটিকি বসেছে'..বলে, 'দেখো দেখো, মশারির ভেতরে উড়ন্ত মশা কি অদ্ভুত দেখায়! এদিকে শহরের রাস্তায় রণপা চড়ে যে হাতিরা এসেছিল, তাদের দাঁতে মরচে ধরে যায়।

রোদভরা কাঁচ গরম হয়ে ফেটে যায়, ভাঙা কাঁচের দল তাঁদের শুঁড় কেটে দেয়। দশ-বারটা কাঁচখেকো দানব এসে সেই উষ্ণ লাল চাটে। হাতিরা রক্ত-নিঃশ্বাস ছেড়ে লুটিয়ে পড়ে। শহরের গলি হাতড়ে বেড়ানো যুবতী কানা ফুলওয়ালি তাতে ভীষণ বিপর্যস্ত, নর্দমার পানিকে ভুল করে সে হাতিদের শোণিতপ্রবাহ ভাবে। সেখানে চুবিয়ে রাখে সাদা অর্কিড।

তখনি মুড়িঅলা আসে। হ্যামেলিনের পাইড পাইপারের মত সে ডাকে সবাইকে। তারপর সব কেজো লোকদের মুড়ির টিনে ভরে হাঁটা দেয় শ্বাপদসংকুল কংক্রিট-অরণ্যের দিকে। বাকিরা তখনো টিকটিকির ওপর বিরক্ত। তারপর।

তারপর নুইয়ে পড়া অশ্বত্থ গাছ বেয়ে বেড়াল ওঠে। অগ্নিপাটের শাড়ি পরে প্রকৃতি নর্দমার পাড় ধরে হাঁটতে গিয়ে পা মচকে ফেলে। জানালাহীন সব কক্ষপথে ক্লান্ত তৎপরতা দেখা দেয়। মাংসখেকো প্রজাপতিরা নীলাভ ঘাসে মুখ মুছে ভরতপাখির গান গায়, আর ভাঙা শহরের সেই শব্দ আমার ঘুম ভেঙে দেয়। বাস্তুভিটে এই পৃথিবীতে আমি কখনো কুয়োর ঠাণ্ডা জল চাই নি, চাই নি বইয়ের কান- গানের দৃষ্টি, চাই নি মৃত্যুর গন্ধ বুকে নিয়ে বয়ে আসা নদীর সংস্পর্শ।

মানুষের শোচনার শব্দ এখনো বড় কানে লাগে, এখনো বিমূঢ় ভিড়ের ডাক আশ্চর্য নিঃসঙ্গ। না। মগ্ন শৈলের মাতাল সবুজ আমার উদ্দিষ্ট ছিল না। আমি চেয়েছিলাম অগণিত নিরব বিকেলের যাযাবর হতে, চেয়েছিলাম গাছের পাতার হলুদ হয়ে উল্কার মত ঝরা দেখতে। শুধু দেখে যেতে।

কিন্তু দুর্বল একটা শক্তি আমাকে পদ্মফোটা বিল থেকে দূরে রাখে, দুখুর হাওয়ায় মেঘের কুকুর আর ছোটে না, আমাকে অশ্লীল অশ্রাব্য বাস্তবে বেঁধে রাখে। গ্রীষ্মের গোধূলিতে বৃষ্টি তখন খুব থার্ডক্লাস ট্রেনের কামরার অনুভূতি যোগায়। আমি নিজের সূর্যে ফিরতে পারি না। আঁধার নেমে এলে, অভ্যাসবশতঃ হাড়ের স্রোতে ভেসে প্রিয় সঙ্গী আসে, প্রত্যহের মত। হাজার দিনের পরিচিত অনুভব, গোল তাঁবুর মাঝে সৃষ্টিহীন প্রসন্নতা।

আমার সময় কাটে না। যে ভাবে জাহাজের খালাসি সরু চোখে দূরে মাটি খোঁজে, তেমনি প্রচণ্ড অপেক্ষায় বিস্বাদ মুখে চাঁদটাকে ক্যানভাসের টুকরো বানিয়ে ছিঁড়ি, ফর..ফরর.... অন্ধ রাতে এই মিথ্যে বন্দর আমার আর ভালো লাগে না। ২. নিঃশঙ্ক পলায়ন বাজারের ব্যাগটা রাখতেই একগাদা কাজ এসে পড়ে, উদাস হাত নাড়ানিতে সাব্যস্ত করি–– করব না। বাসি চা এবং বাসি কাগজের ভাঁজ খুলি। একগাদা মগজ ও খুলি লেপটে থাকে পাতায়, ক'লাইন পড়তেই ঘেন্না, ইস! কি লিখেছে! দৌড়ে বাইরে যাই––বমি বমি চোখে ঘোলা লাগে ঘরওয়ালির শাসানি সহ্য হয় না, রাস্তা মুখি হই।

ল্যাম্পপোস্টের ঘষাটে হলুদ আলোতে সব কাগজ সাদা দেখায়, আমরা সবাই খুব সুখি এবং সংগঠিত মানবগোষ্ঠী। ক'টা স্কুলব্যাগ কাঁধে বাচ্চা গেল, আরে! এখন তো সকাল কেবল! গোষ্ঠী ভেঙে যায়, উবু হয়ে বিড়ি–টা তুলতে বাধে, সকাল তো, কেউ দেখে ফেলে যদি, এই আমি সিগ্রেট ছেড়ে বিড়ি টানতে পারি––হঠাৎ দুটো পুতুল মেয়ে, পাশ কাটিয়ে বলল, ইস কি দামি ফতুয়া পরেছেন, নিশ্চয়ই আড়ং থেকে কেনা? আমি ওদের মুখে বিড়ি ছুঁড়ে মারলাম, যাঃ! ছুঃ ছুঃ, হ্যাট হ্যাট––কেউ না, আমি তোদের কেউ না। শহর থেকে এক ছুট্টে পালিয়ে এলাম। ৩. দিনগুলি বৃন্তচ্যুত শিউলি আবার ডালে উঠবে জানি ––––––শুধু এ পথ দিয়ে আর –––যাওয়া ––––––হবে না। এই সর্বপ্রথম, সর্বশেষ এবং ––––––সর্বশ্রেষ্ঠ।

সৌন্দর্য অবলোকন যাত্রাপথে একবার মাত্র। আমাদের ––পর প্রজন্ম ––––জানবে না ––––––––শিউলি ––––––কাকে বলে। তাদের সর্বাঙ্গে শুধু আতঙ্ক মিশ্রিত অবাক বিস্ময় : এই ––ফুলগুলো ––––প্রতি ভোরে –––––––ঝরে পড়ে কেন? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.