আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাইস্কুল [পর্ব-৩.গ]

ছন্দহীন জীবন বড়ই নীরস এখন তার সামনে থেকে জোছনা তার পা টিপে দেয়। তার হুকুমের সাথে সাথে কাজ হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও অন্য অনেক মানুষের মতো তিনিও নস্টালজিয়ায় ভোগেন। মাঝেমধ্যেই মনে হয় আবার কাগজের ব্যবসাটা শুরু করি। নাইন-টেনের কোনো বইয়ের মধ্যে কিশোরী মেয়ের প্রেমের চিঠি পেয়ে পড়া শুরু করে দিই।

অনেকেই মনে করেন ব্যবসায়ীরা শক্ত মনের মানুষ। তারা শুধু লোভ আর ভোগ চেনে। কিন্তু তাদের ভেতরেও উপলব্ধি থাকে। তারাও তো মানুষ। কিন্তু সেই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটানো হয়ে ওঠে না।

কখনো সেটা সময়ের অভাবে; কখনো বা বস হওয়ার কারণে। জোছনাকে তিনি হঠাৎ প্রশ্নটা করেই ফেললেন, 'জোছনা কি কখনো প্রেম করেছো?' এমন প্রশ্নে মেয়েটা হতভম্ব হয়ে গেলো। এটাও ভাবলো কি না যে, তার স্যার পাগল-টাগল হয়ে গেছে হয়তো। সে বললো, 'গরিব মানুষের কি স্যার প্রেম করার সময় থাকে?' হাসিমুখেই বললো কথাটা। 'প্রেম করোনি ভালো কথা।

কখনো কি প্রেমে পড়োওনি?' এই প্রশ্নে আবার সে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়লো হয়তো। আশরাফুল হকের দিকে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। হয়তো ভাবছে একথাটা বলা ঠিক হবে কি না। তাই ওকে সহজ হওয়ার জন্য তিনি আবার বললেন, 'শোনো জোছনা। একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের ভালো লাগতেই পারে।

এতে দোষের কিছু নেই। সে তাকে নিয়ে স্বপ্নও দেখে অনেক সময়, অনেকদিন। কিন্তু স্বপ্নগুলো কিন্তু স্বপ্ন হয়েই থাকে। তুমি বলতে পারো আমার কাছে। ভয়ের কিছু নেই।

এমনিতেই প্রশ্নটা করলাম। জোছনা নিচের দিকে তাকিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলের নখ খুঁটতে খুঁটতে বললো, 'আমাদের ক্লাশে একটা ছেলে পড়তো। সে প্রতিদিন একটা শার্টই পরে আসতো। কিন্তু শার্টটা সবসময় পরিষ্কার থাকতো। সম্ভবত সে ঈদের সময় একটা জামা পেতো।

সেই জামাই ছিলো তার স্কুলের ইউনিফর্ম। এতেই চলতো পুরো বছর। আমরাও গরিব ছিলাম। কিন্তু সে মনে হয় আমাদের চেয়েও বেশি গরিব ছিলো। ' 'আচ্ছা; তারপর?' 'তারপর আর কী? স্কুল শেষ হওয়ার পর সে হয়তো কোনো কলেজে ভর্তি হয়েছে।

আমরা মেয়েরা থানাসদরের একটা গার্লস কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। ' 'ছেলেটার বাড়ি তো তোমাদের গ্রামেই। পরে জানতে পারোনি সে কী অবস্থায় চলে গেছে?' 'কলেজে পড়ার সময় আব্বা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েন। সেজন্য তখন একটা কঠিন সময় পার হয়েছে। এই সময় যদিও মেয়েরা অনেক মাতামাতি করে, কিন্তু আমার মন অন্য কোনোদিকে দেয়ার মতো অবস্থা ছিলো না।

তারপর আমার পরীক্ষার সময়ই তো আব্বা মারা যান। মা আমাকে পরীক্ষার পরপরই খালার বাসায় পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে ঢাকায়ই আছি। ' 'তবে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়?' 'আব্বা মারা যাওয়ায় আমাদের পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ অবস্থায় চলে যায়। আমার ছোট ভাইটা কেবল ইন্টার পরীক্ষা দিলো।

তখন ও পড়তো সিক্সে। আমি সপ্তায় পাঁচটা টিউশনি করিয়েছি। সেই টাকা পাঠিয়েছি মায়ের কাছে। সেটা দিয়েই আমার মা আর ভাই কোনোমতে চলতো। ' আশরাফুল হক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

ইবনে খালদুন বলেছেন বারো মাইল পরপর একেকটা অঞ্চলের মানুষের কালচারে পরিবর্তন দেখা যায়। মানুষের জীবনটাও কি এরকম? পাঁচ বছর পরপর বদলে যায়? জীবন বদলেনি এমন মানুষ তিনি কমই পেয়েছেন। অনেকে এই বদলটা ধরতে পারে না। কারণ বেশিরভাগ মানুষ অর্থনৈতিক পরিবর্তনটাকেই কেবল পরিবর্তন হিসেবে দেখে। অন্যকিছু তাদের চোখে পড়ে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.