আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধারাবাহিক উপন্যাস::হাইস্কুল::পর্ব-৩

ছন্দহীন জীবন বড়ই নীরস পর্ব ২-এর জন্য Click This Link আশরাফুল হক দুই ক্যালকুলেটর টিপে যাচ্ছেন সমানে। সামনে বসে তার পা টিপে দিচ্ছে জোছনা। দুই ক্যালকুলেটর একসাথে চালানোর কৌশল তিনি শিখেছেন নবাবপুর রোডের আলাউদ্দিনের কাছ থেকে। বাড়ি করার সময় আলাউদ্দিনের কাছ থেকে লোহার অনেক জিনিসপাতি কিনতে হয়েছিলো। আলাউদ্দিনের সামনেও দুই ক্যালকুলেটর থাকে।

ভুঁড়ি এত বড়, চেয়ারে বসার পর মনে হয় টেবিলে ভুঁড়ি বিছিয়ে দিয়েছে। কাস্টমার গেলে কাস্টমারকে খাওয়াতে হয়। সেই সাথে সেও না খেয়ে পারে না। দুই কাস্টমারের ফিরিস্তি সে শুনতে থাকে আর ক্যালকুলেটর টিপতে থাকে। একসাথে দুইজনকে বলে দেয় আপনার বিল সত্তুর হাজার ছয়শো, আপনার তিপ্পান্ন হাজার।

এরপর তিনি নিজে নিজে চেষ্টা চালিয়ে দেখলেন এটা অসম্ভবের কিছুই না। এবং অনেকেই এরকম কাজ চালায়। জামাকাপড় বানাতে গিয়ে সেখানেও দেখলেন তিনজন মাপ নিয়ে বলে যাচ্ছে আর একজন লিখছে। অথচ আগেও তিনি জামাকাপড় বানাতে গেছেন। তখন খেয়াল করেননি।

আমরা খেয়াল করলে অনেক কিছুই জানতে পারি। আশরাফুল হক প্রতিদিন ব্যবসার পুরো হিসাব মিলিয়ে বাড়ি ফেরেন। সন্ধ্যাবেলা অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাছ থেকে প্রত্যেকটা ব্যবসার অপারেশন শিট নিয়ে বসে যান নিজের চেম্বারে। সাথে থাকে জোছনা। জোছনার আসল কাজ আশরাফুল হকের পা টিপে দেয়া নয়।

ওর কাজ হলো প্রতিদিন অন্তত তিনটা ছবি দেখে সেগুলোর কাহিনী বলবে। সাথে পত্রিকার খবরগুলো তো আছেই। ব্যবসায়ীদেরকে সবকিছুর খবর রাখতে হয় সবার আগে। রাজনীতিবিদরা দেশ চালায় আর রাজনীতিবিদদেরকে চালায় ব্যবসায়ীরা। আশরাফুল হকের গার্মেন্টসের ব্যবসা।

নিটিং ডাইং এবং ফিনিশিং—তিনটাই তার এখানে হয়। কর্মচারী আছে দেড় হাজার। বিভিন্ন শিফটে যখন শ্রমিকরা গার্মেন্টসে ঢোকে কিংবা বের হয় তখন আশরাফুল হকের গর্ব অনেকটা বেড়ে যায়। রাজনীতিবিদদেরকে দেড় হাজার লোক জড়ো করার জন্য অনেক কসরৎ করতে হয়। অবশ্য আদর্শিক কোনো দল হলে আলাদা কথা।

কিন্তু তিনি ইচ্ছে করলেই এই লোকগুলোকে একত্র করতে পারেন। টাকার কাছে মানুষ বাধ্য হয়েই ছুটে আসে। অবশ্য তিনি অতটা খারাপ লোক না। বেতন-বোনাস ভালোই পায় তার শ্রমিকরা। তবে ওরা যাতে বিগড়ে না যায় সেজন্য তিনি একমাসের বেতন আটকে রেখেছেন সবার।

জানুয়ারি মাসের বেতন হয় গিয়ে মার্চের দশ তারিখ। জীবনের এতটা পথ হেঁটে এসে আশরাফুল হক শিখেছেন মানুষকে ব্যবহার করতে হয় কীভাবে। এককালে তার নিজের জীবনটা কেটেছে অনেক কষ্টে। দুর্ভিক্ষের সময় একসের চালের আশায় তার মা শিকদারবাড়ির ঢেকিতে পাড় দিতে গেছেন। এরপর সেই চাল দিয়ে পুরোপুরি ভাত রান্না হতো না।

ফ্যানে-ভাতে মাখামাখি করে ওঠানো হতো। আটার জাউ খেতে খেতে ঘা হয়ে যাওয়া মুখে সেই ভাত যে কেমন মজার লাগতো! জৈষ্ঠ্যের খা খা রোদ্দুরে নাও নিয়ে বাপ যেতো বিলে মাছ ধরতে। কোনো বাতাস নেই। সব স্থির। পাখিগুলো হা করে বাতাস নেয়ার চেষ্টা করছে।

এসময় কোনো মাছ পানির ওপরে ওঠে না। তবুও শমসের আলী ছিপ ফেলতেন। আধা পোয়া নুন কেনার জন্য বেশ পরিমাণ মাছ ধরতে হতো। আশরাফুল হকের আর ভালো লাগে না। শরিয়তপুর থেকে পদ্মা পার হয়ে চলে এলেন এপার, রাজধানী ঢাকায়।

তখন তার বয়েস আর কত--বারো কি চৌদ্দ। মুড়ির টিন নামের সদরঘাট-কুড়িল সার্ভিস চলতো তখন। সামনের দিকটা ছিলো বর্তমানের বেডফোর্ড ট্রাকের মতো। বাসের জানালাগুলো ছিলো টিনের। তিনি এসে নেমেছিলেন গেণ্ডারিয়া।

কীভাবে এসেছিলেন এখন স্পষ্ট মনে নেই। হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতেন গুলিস্তান, হাইকোর্ট মাজার, ফুলবাড়িয়া। সেদিনের দৃশ্যটা আজো তিনি ভুলতে পারেন না। হাইকোর্ট মাজারের সামনে এক লোক ভক করে বমি করে দিলো, আরেক লোক তা খেয়ে ফেললো। কার্জন হলের সামনে এখনো যারা আছে, তারা হয়তো একজন আরেকজনের বমি খায় না; কিন্তু ওপরতলার ঝুটা খেয়েই তারা বাঁচে।

এভাবেই তারা সন্তান জন্ম দিয়ে যাচ্ছে; চুলোচুলি করছে; দিন পার করছে। আশরাফুল হক লেগে গিয়েছিলেন বাইন্ডিংয়ের কাজে। বড় বড় নখের মধ্যে আঠা ঢুকে সবসময় কালো হয়ে থাকতো। সেগুলো নিয়েই বাইন্ডাররা ভাত খেতো, শরীর চুলকাতো, মালিকের কাছ থেকে মজুরি নিতো। নখ বড় রাখার কারণ ছিলো ফর্মা ভাঁজ করতে এবং আঠা লাগাতে গেলে এই নখ খুব কাজে দেয়।

আর ভালো লাগছে না। পরে লিখবো। কেমন হচ্ছে জানাবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।