ছন্দহীন জীবন বড়ই নীরস আগের পর্বের জন্য Click This Link
পর্ব-৩.খ
বাইন্ডারদের জীবনে ঝক্কি-ঝামেলা কম। অন্ধকারের মধ্যে সারাদিন নীরবে কাজ করে যাও। এই কাজটা বাইরে করার যেহেতু কোনোই সুযোগ নেই, তাই ঘরেই থাকো সারাদিন। তবে হ্যাঁ, টেপ রেকর্ডার একটা ছিলো। ফর্মার স্তূপের ওপর বসে বাইন্ডাররা বিনোদনে যোগ দিতো।
। এখন কি তা বাদ দিয়েছে? এখন তো মনে হয় টেলিভিশনে অনেক খারাপ জিনিস দেখে। সেক্ষেত্রে কীসের ফর্মার ওপর তারা বসেছে তা খেয়াল করার কোনো বিষয় না। স্কুলে পড়ার সময় আশরাফুল হক শিখেছিলেন, বই যদি পায়ে লাগে বা নিচে পড়ে যায় তাহলে উঠিয়ে চুমু খেতে হয়।
কয়েকমাস চাকুরি করার পরে ঈদের সময় চলে এলো।
সব বাইন্ডার বাড়ি যাবে। আশরাফুল হক ভাবছিলেন কী করবেন। বেশ কিছু টাকা তখন জমেও গিয়েছিলো হাতে। বেতনের সব টাকা তো আর খরচ হতো না। মালিককে যদি বলতেন, আমি থাকতে চাই ঈদে, ফলাফল উল্টেও যেতে পারতো।
তিনি হয়তো ধরে ফেলতেন, এই ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। তখন চাকুরি শেষও হয়ে যেতে পারতো। একটা সপ্তাহ ঘুরেফিরে কাটিয়ে দেয়া কোনো ব্যাপারই হবে না ভেবে তিনিও অন্যদের সাথে মালিকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পড়লেন।
শুরু হলো ঢাকা শহর মুখস্থ করার পালা। মিটফোর্ড হাসপাতালে জীবনে প্রথম ছিন্নভিন্ন লাশ দেখা, সোয়ারিঘাটে মাছের আমদানিতে মিশে যাওয়া, বুড়িগঙ্গার এপারে ঝোপের মধ্যে সতীত্ব বিনষ্ট হওয়ার সাক্ষী থাকা--এসব করে করে কাটছিলো দিন।
ঈদের দিনটাও একইভাবে কেটে গিয়েছিলো। তবে সবখানে কাগজ কুড়ানো ছেলেদেরকে দেখে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন উশকখুশ করছিলো। শেষ পর্যন্ত একদিন সদরঘাটে এক ছেলেকে ধরে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, 'এই কাগজ কোন জাগায় বেচছ?'
বাইন্ডিং কারখানার গ্রিপারের কাগজগুলোও মালিক বিক্রি করতো। কিন্তু কোথায় বিক্রি করতো তা আশরাফুল হক জানতেন না। ছেলেটা কতক্ষণ তাকে নিরীক্ষণ করলো।
তারপর জবাব দিলো, 'নয়াটোলা চিনছ?'
'না। '
'নয়াটোলা গেলে পুরান কাগজ কিনার অনেক দোকান আছে। আমরা হ্যানো বেচি। '
মনের মধ্যে রেখে দিলেন নয়াটোলা। এরপর আরো দুটো ঈদ চলে গিয়েছিলো।
বাইন্ডিং কারখানায় আর ফেরা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কে্ন্টিনে বয়গিরি করেছেন সেই সময়। প্রত্যেকটা হলে অনেকগুলো কাগজ জমতো। সেগুলো হলেরই কর্মচারীরা গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসতো। আশরাফুল হক এক দুপুরের পরে সিনেমা দেখার নাম করে নয়াটোলা গিয়ে পুরান কাগজের আদ্যোপান্ত জেনে আসে।
হলের কর্মচারী শরিফের সাথে তার চুক্তি হয়, কাগজ বিক্রি করে, একই দাম পাবে। তবে নীলক্ষেতে নয়, আশরাফুল যেখানে ইচ্ছে গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসবে। ভ্যানে করে হলের কাগজগুলো নয়াটোলা নিয়ে বিক্রি করার নতুন অধ্যায় শুরু হলো, যার স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র তিন মাস।
কাগজের দোকানের ছেলেদের সাথে কথা বলে জানতে পারলেন, ছেলেগুলো পুরান বইখাতার মধ্যে টাকা, প্রেমের চিঠি, ছবি, ময়ূরের পালক--এগুলো পায়।
গেণ্ডারিয়ায় দোকান খুঁজে পেয়েও গেলেন আশরাফুল হক।
নিজেই দিলেন পুরান কাগজ কেনার দোকান। সদ্যযৌবনপ্রাপ্তির সাথে সাথে তার ব্যবসারও যৌবনের নদী ভরে উঠতে লাগলো দুইকূলে। সেই পুঁজি দিয়েই ঝুটের ব্যবসা, নিটিংয়ের কারখানা, এরপর সব। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।