আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিপুরায় রবীন্দ্রনাথ

i would like to read and write কোন চিৎকার চেচামেছি নেই। নেই কোন বিলবোর্ড, পোস্টারের ছড়াছড়ি। শান্ত পরিবেশ, সুন্দর ছিমছাম রাস্তা। দু’পাশে সবুজ বৃক্ষরাজি। শ্যামলিমার মায়ায় চোখ জুড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশের পাশে থেকেই এরা কত পরিচ্ছন্ন। উন্নয়ন কর্মী জাহিদ ছিল সাথে। বলল, এখানে কি মোবাইল কোম্পানি নেই? এইডসের ছড়াছড়িও কি নেই? জাহিদের হঠাৎ এমন প্রশ্ন অবান্তর মনে হয়। পরক্ষণেই বুঝি ঢাকার সঙ্গে তুলনা করছে সে। ঢাকার শত শত বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডের কথা বলছে।

আগরতলা ত্রিপুরার রাজধানী। কারো কাছে মনে হতে পারে মোটে একটা জেলা শহর। আখাউড়া পার হওয়ার পরই বোঝা গেছে ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন রাজ্যে পদার্পণ করেছি। জাহিদ ঠিকই বলেছে, আমাদের শহরটা বিলবোর্ড, পোস্টার, সাইনবোর্ডের ভার যেন আর সইতে পারছে না। শ্রীহীন করে তুলেছে শহরের সৌন্দর্য্যটাকে।

আর এসবে প্রয়োগকৃত ভাষাও কখনো কখনো অশালীন, অরুচিকরও বটে। যদিও শালিনতা আর অশালিনতা নিয়ে একের সঙ্গে আরেকের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে। তবে একথা মানতেই হবে যে, শ্রীহীন করে দেয়, অমানবিক ও মূল্যবোধে ক্ষয় ধরাতে পারে, এমন কোন প্রচারই কাম্য হতে পারে না। ত্রিপুরার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সে কথাই মনে হল। আর সে কারণেই বুঝি ত্রিপুরায় নতুন করে রবীন্দ্রনাথকে আবিস্কার করলাম।

রবীন্দ্র রচনাবলীতে মানবিকতা আর মূল্যবোধের যে চিত্র আমরা পাই তাই বুঝি ত্রিপুরাবাসী ধরে রাখতে চাইছে। রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা দেখে মনে মনে বললাম, ধন্যবাদ ত্রিপুরা সরকার। বাংলার মান ধরে রাখতে তোমাদের প্রয়াস অুন্ন থাকুক। ত্রিপুরায় রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির কথা পড়েছি। ত্রিপুরায় রবীন্দ্রনাথ এমন শিরোনামে সাহিত্যপাতায় একাধিক লেখাও পড়েছি।

সেই থেকে রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা মনে বিঁধে আছে সমানভাবে। তাই ত্রিপুরা আসার সুযোগ হওয়ায় বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলাম। শুধু রবীন্দ্রনাথই নয়, রবীন্দ্রনাথের পরিবারের সঙ্গে ত্রিপুরার শাসকদের দীর্ঘদিনের যোগসূত্র ছিল। ১৮শ’ শতকের মাঝামাঝিতে ত্রিপুরার সংকটকালীন সময়ে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাই রবীন্দ্রনাথ ও তার পরিবারের সঙ্গে ত্রিপুরার সম্পর্ক এক ইতিহাসও বটে।

এমনকি ত্রিপুরার শাসকদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ পরিবারের এই সম্পর্কের চিড় ধরেনি কখনো। বরং তা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এমনকি রবীন্দ্রনাথ আজ নেই, কিন্তুু ত্রিপুরার বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজেও রবীন্দ্রনাথের একজন ‘ভক্ত’। আগরতলার রাস্তায় রাস্তায় রবীন্দ্রনাথের বানী ও তার জন্মের সার্ধশত বর্ষের আয়োজন দেখেও তাই মনে হল। ত্রিপুরায় ১৬ জুলাই ২০১০ তারিখে মানিক সরকার উদ্বোধন করেছেন রবীন্দ্র চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর।

যেখানে প্রদর্শিত হয় রবীন্দ্রনাথের ওপর সত্যজিত রায়, তপন সিনহা, পুর্নেন্দু পত্রীর নির্মিত ছবি। ত্রিপুরার বর্তমান সরকারের রবীন্দ্রপ্রীতির আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে- ত্রিপুরা সরকার কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে লিখেছে আগরতলা বিমান বন্দরের নাম বদলিয়ে রবীন্দ্রনাথের নামে করা হোক। রবীন্দ্রনাথ ‘দ্য গ্রেট পোয়েট’, ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন সাতবার। সময়টা ছিল ১৮৯৯ সাল থেকে ১৯২৬। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শেষবার তথা সপ্তমবার ত্রিপুরা সফরে যান।

সেই সময়ে তিনি থাকেন বর্তমান গভর্ণর হাউজ(রাজ ভবন), তৎকালীন পু®পভান্ত প্যালেস। এই প্রাসাদের বয়স ৯৩/৯৪ বছর। এখানে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির অুন্ন রাখতে রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর ও গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও নেয় ত্রিপুরা সরকার। এসব জেনে মনে হলো রবীন্দ্রনাথের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে একটুকুও কার্পণ্য নেই ত্রিপুরাবাসীর। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য যোগাযোগ ভাল।

ভবিষ্যতে আরো শুভযোগাযোগ হবে এমনটি আশা ব্যবসায়ীদের। কিন্তুু সাংস্কৃতিক যোগাযোগের বলয় সেভাবে গড়ে ওঠেনি ত্রিপুরার সঙ্গে। আমাদের রবীন্দ্রনাথ হতে পারে সেতুবন্ধন। যেখানে আমাদের অতি নিকট প্রতিবেশী ত্রিপুরাবাসী, ভাষা আর ঐতিহ্যে আমাদের সমগোত্রীয়। এমনটি ভাবতে ভাবতে সামনে হাটি আর দেখি, রবীন্দ্রনাথের উদ্বৃতি।

যেগুলো তুলে ধরা হয়েছে রাস্তার পাশে। তৈরি করা হয়েছে রুচিশীল বিলবোর্ড। আগরতলা শহর ঘুরেফিরে মনে হলো রবীন্দ্রনাথ যেন ত্রিপুরাতেই আছেন। অবশ্য জীবদ্দশাতেই ত্রিপুরা রবীন্দ্রনাথকে এত কাছে টেনেছিল যে, অনেক গান তিনি লিখেছেন ত্রিপুরায়। এখানকার মানুষকেও ভালবেসেছেন তিনি।

লিখেছেন বিসর্জন, মুকুট, রাজর্ষি প্রভৃতি গ্রন্থ। বিপরীতে আজও তিনি আছেন ত্রিপুরার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.