নিজেকে নিজেই বুঝতে পারিনা।
আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তে
নো-ম্যানস ল্যান্ডে নাম না জানা আড়াই’শ শহীদ
মোঃ জিয়াউল ইসলাম,
ভারতের ত্রিপুরা সীমানায় নো-ম্যানস ল্যান্ডে প্রায় অর্ধ একর জায়গা জুড়ে শুয়ে আছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া প্রায় আড়াই শতাধিক বীর। যারা সেদিন দেশমাতৃকার জন্য বিলিয়ে দিয়েছিল প্রাণ আজ তারাই সীমান্তের ওপারে শুয়ে আছেন অবহেলিতভাবে। ওই বীর সেনানীদের গণকবরটি জঙ্গলি গাছ ও লতাপাতায় বেষ্টিত হয়ে আছে। আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সেনারবাদী গ্রামের পাশ ঘেষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের “ ২০২১/আই-এস” পিলারের ওপারে এ গণকবরের অবস্থান।
গত ১০ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভাররেত ত্রিপুরাতে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য উদ্বোধন করতে যাওয়ার প্রাক্কালে আখাউড়া স্থলবন্দরে তিনি সেনারবাদী নো-ম্যানস ল্যান্ডে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরের বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনারবাদী গ্রামটিতে পাকসেনারা সুদৃঢ় কোন অবস্থান নিতে পারেনি। ফলে আখাউড়া, গঙ্গাসাগর, কর্ণেল বাজার, গাজিরবাজার সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যে যুদ্ধ হয়েছে সে সব যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সেনারবাদী কবরস্থানে কবর দেওয়া হত। স্বাধীনতার পূর্ব সময়ে বাংলাদেশ এবং ভারত দু'দেশের লোকজনই এ কবরস্থানটিকে যৌথভাবে ব্যবহার করত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের লাশ দাফন করায় পরবর্তীকালে এলাকাবাসী এ কবরস্থানটিকে আর ব্যবহার করেনি।
ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থ করতেন সেনারবাদী গ্রামের আজিজুর রহমান প্রকাশ আব্দু মেম্বার। তিনি জানালেন, ’৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি তবে নিজ হাতে ওই কবরস্থানে ৭০/৭৫ টি মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করেছেন। তখনকার একটি ইটের ভাটার পাশে লাশগুলো গাড়ি দিয়ে এনে ফেলে যাওয়া হত। পরে সেসব লাশ দাফন করতেন তিনি। সেনারবাদী গণকবরে কমপক্ষে আড়াইশ মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আখাউড়া এলাকাতে যারা মুক্তিযুদ্ধে আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশকেই আগরতলা জিভি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হত। সেখানে যারা মারা যেতেন তাদেরকেও সেনারবাদীর এ গণকবরে পাঠিয়ে দেওয়া হত কবর দেওয়ার জন্য।
তবে এখানকার লাশগুলোর বেশিরভাগরই নাম পরিচয় জানা ছিলনা। তবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে কবর দেওয়ার সময় একটি কিশোর লাশটিকে “আজিজ” বলে শনাক্ত করেছিল। আজিজ ছিলো ফুটবল খেলোয়াড়।
আখাউড়া দেবগ্রাম স্কুল মাঠে তাকে ফুটবল খেলতে দেখেছিল কিশোরটি। শেলের আঘাতে আজিজ শহীদ হয়েছিল। আখাউড়া গাজিরবাজার এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ অনেক মুক্তিযোদ্ধার লাশ এখানে দাফন করা হয়। কবর দেওয়ার সময় আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউপি’র বর্তমান মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক তাকে সহায়তা করেছেন বলে আব্দু মেম্বার জানান। এছাড়াও সহায়তা করেছেন মৃত আলী আহমেদ সরদার, আব্দু মেম্বারের প্রতিবেশি গিয়াস উদ্দিন ওরফে আরজু মিয়াও নিজ হাতে অনেক লাশ দাফন করেছেন।
মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদ ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, কতজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ যে এখানে কবর দিয়েছি তার সংখ্যা সঠিকভাবে এখন বলতে পারব না। তবে সব মিলিয়ে আড়াই’শর বেশি লাশের দাফন হয়েছে ওই গণকবরে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরবর্তী সময়ের শ্রমমন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী ’৭৪ সালের শেষ দিকে সেনারবাদী গণকবর পরিদর্শন করে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দ্যেশে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার জন্য ১০ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ওই গণকবরে শায়িত শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় আর কেউ এগিয়ে আসেনি।
আখাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শহীদুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের নোম্যানসল্যান্ডে অবস্থিত সেনারবাদী গণকবরটি সংরক্ষণের জন্য বিগত সময়ের সরকারগুলোকে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
কিন্তু কোন সরকারই এতে এগিয়ে আসেননি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকার সেনারবাদী গণকবর নিয়ে কিছু করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
আখাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, আখাউড়ায় আমি স¤প্রতি যোগদান করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই গণকবরটি পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।