আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চূড়ান্ত চুক্তি কাল

বাংলার জনগন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে কাল বুধবার সকালে। পাবনার রূপপুরে দুটি ইউনিটে মোট দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি স্থাপনের এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। রাশিয়ার পক্ষে স্বাক্ষর করবেন সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী (২৩ মার্চ থেকে ২৩ আগস্ট ১৯৯৮) সের্গেই কিরিয়েনকো। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু করপোরেশনের প্রধান।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি অনুস্বাক্ষরিত হয়। তখন চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে—চুক্তি স্বাক্ষরের পর আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী বছরের (২০১২) মধ্যে কেন্দ্রটির বাস্তব কাজ (গ্রাউন্ড ব্রেকিং) শুরু করা এবং ২০১৭-১৮ সালে প্রথম ইউনিটটি থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। নিরাপত্তা প্রসঙ্গ: প্রলয়কারী ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়। এ দশেও তার অভিঘাত লেগেছে।

এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আলোচনা করেছে। সর্বশেষ গত জুন মাসে জেনেভায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানেও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে কোনো দেশ কিংবা ব্যক্তি দ্বিমত করেননি। বর্তমানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যে প্রযুক্তি তাতে কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সামান্য ব্যত্যয় সৃষ্টি হলেও কেন্দ্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিঅ্যাকটর হচ্ছে, ‘প্রেসারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাকটর’। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতিই ব্যবহার করা হবে। এর নিরাপত্তাব্যবস্থা সর্বোত্তম। সর্বোপরি, নিরাপত্তার বিষয় দেখার জন্য আইএইএ (ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন) সব সময় প্রস্তুত। যে দেশেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র হোক না কেন, তার শুরু থেকে আইএইএ নিরাপত্তার দিকটি সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

ভারতের ৬০ হাজার মেগাওয়াট: ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৬০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে সে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাতটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলছে। বর্তমানে পৃথিবীতে বিভিন্ন আকারের ৪৪৯টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে। নির্মাণাধীন আছে আরও প্রায় ৩০টি। সর্বত্র অত্যাধুনিক ‘প্যাসিভ সেফটি সিস্টেম’ অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।

জ্বালানি ও বর্জ্য: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তিন ধরনের বর্জ্য হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বর্জ্য হচ্ছে ‘স্ত্রেন্ট ফুয়েল’। সাধারণত ৩০ বছর এই বর্জ্য সংরক্ষণ করতে হয়। তারপর এর ক্ষতিকর প্রভাব বা তেজস্ক্রিয়তা কমে। এই বর্জ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করার প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য।

তবে বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ। এই ‘স্ত্রেন্ট ফুয়েল’ ২৫ বছর পর্যন্ত নিয়ে যেতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্যান্য বর্জ্য তেমন মারাত্মক নয় এবং তা ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি বিদ্যুৎকেন্দ্রেই থাকবে। আর অনেকে যে তেজস্ক্রিয়তার ভয় পায়, সেটা অনেকটা অকারণ। কেননা, একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাম্পাসে বসবাস করলে একজন মানুষের শরীরে যেটুকু তেজস্ক্রিয়তা ঢুকবে, তা একটি টেলিভিশন সেটের সামনে বসলে যেটুকু ঢোকে তার সমান।

অর্থাত্ তা মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর জন্য অসহনীয় মাত্রার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.