আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেদিনও গাদ্দাফির চোখে ভয় দেখিনি

হুনাইশ নাসের একজন উপজাতি। ৩০ বছর ধরে গাদ্দাফির ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। শেষদিনেও ছিলেন গাদ্দাফির সঙ্গে। মালিককে কখনও বাজে আচরণ করতে দেখেননি তিনি। কিন্তু প্রিয় মালিকের নির্মম পরিণতির সাক্ষী হতে হল তাকেই।

ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া নাসেরের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরেছেন তানজীর মেহেদী ‘সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে’Ñ বললেন লিবিয়ার প্রয়াত রাষ্ট্রনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির ব্যক্তিগত গাড়িচালক হুনাইশ নাসের। গত সপ্তাহে এনটিসি যোদ্ধাদের হাতে আটক হওয়ার মুহূর্তের কথা স্মরণ করে নাসের বলেন, ‘বিপ্লবীরা আমাদের দিকে তেড়ে আসছিল। তাদের দেখে তিনি (গাদ্দাফি) মোটেও ভয় পাননি। কিন্তু কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। জীবনে প্রথমবার আমি তাকে অতটা বিচলিত হতে দেখলাম।

’ পর মুহূর্তেই উৎফুল্ল সেনারা দখল করে নিল গাদ্দাফির সর্বশেষ ঘাঁটি সিরত। অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের দেখেই দুহাত ওপরে তুলে আত্মসমর্পণ করেন নাসের। কিন্তু রাইফেলের বাটের ধাক্কায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। চোট পেয়ে কালো হয়ে যায় বাঁ চোখ। এরপরই পাইপ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করা হয় গাদ্দাফিকে।

নাসের দেখলেন তার মালিকের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে বিদ্রোহীরা। গাদ্দাফির কাছের লোকদের মধ্যে এখনও বেঁচে আছেন নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধান মনসুর দাও এবং গাড়িচালক নাসের। গাদ্দাফির চূড়ান্ত দিনের সাক্ষী হয়ে আছেন দুজন। মিসরাতা মিলিটারি ব্যারাকে আটকে রাখা হয়েছে নাসেরকে। তিনি বললেন, ‘আমার সঙ্গের অন্যরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তাদের কপালে কী ঘটেছেÑ কিছুই জানি না।

কেউ হয়ত বিপ্লবীদের হাতে আটক অথবা মারা গেছে। ’ সিরতে যুদ্ধের সময় ডান কানটা একেবারেই গেছে নাসেরের। ওই কানে প্রায় কিছুই শুনতে পান না এখন। তাই প্রশ্ন বোঝার জন্য হা করে চোখের দিকেই চেয়ে থাকেন। শেষ ৫ দিন গাদ্দাফির সঙ্গেই ছিলেন নাসের।

যোদ্ধাদের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে ‘ডিস্ট্রিক্ট-২’ নামের এলাকার এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি করেই কেটেছে দিনগুলো। ৬০ বছর বয়সী নাসেরের গায়ে এখনও লেগে আছে গত বৃহস্পতিবারের সেই রক্তবর্ণ চেক শার্ট। তিনি জানান, ‘আমার মালিক সেদিনও বুঝতে পারেননি, আসলে তার চারপাশে কী হচ্ছে। তিনি বেশ অদ্ভুত মানুষ। ’ নাসের আরও বলেন, ‘দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে পশ্চিমপানে তাকিয়ে থাকতেন।

কিন্তু কখনই তার মধ্যে ভয় দেখিনি। ’ উপজাতি সম্প্রদায় থেকে আসা নাসেরের বেতন ছিল মাসে ৮শ দিনার। একটা বাড়িও ছিল সিরতে। বললেন, ‘৩০ বছর ধরে তার সঙ্গে আছি। আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, তার মধ্যে কখনও কোনও খারাপ আচরণ দেখিনি।

তিনি সবসময় আমার মালিক ছিলেন। আমাকে বেশ পছন্দ করতেন। ’ নাসের আরও জানান, ‘যখন বলা হল আমরা খারাপ মানুষের বিপক্ষে যুদ্ধ করছি, আমি বিশ্বাস করেছি। ’ এমনকি এ বছরের মার্চে তাকে অবসরে যেতে বললেও, গাদ্দাফির প্রতি অনুগত ছিলেন নাসের। ‘১৭ মার্চেই আমার দায়িত্ব শেষ বলে জানিয়েছিলেন তারা।

পরে আমি সিরতে চলে আসি’ বললেন নাসের। সেপ্টেম্বরে যখন মনসুর দাও, নতুন গাড়িচালক মোহাম্মদ ফাহিমা, নিরাপত্তা প্রধান ইজেদিন আল-শিরা, আবদুল্লাহ খামিসকে নিয়ে গাদ্দাফি ত্রিপোলি ছেড়ে আসেন, তখন গাদ্দাফির সঙ্গে পুনরায় দেখা হয় নাসেরের সঙ্গে। কিন্তু সাবেক মালিককে এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন নাসের। তিনি জানালেন, সম্ভবত ১০ অক্টোবর ছিল দিনটা। গাদ্দাফির খাস কামরায় গঠন করা হল বিশেষ বাহিনী।

‘তারপর একটা শিবির থেকে আমাকে ওই বিশেষ বাহিনীতে নিয়ে আসা হল। ’ মঙ্গলবার সকালের দিকে, গাদ্দাফির অনুগত এ চালককে একটি ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মরুভূমির দিকে। সেখানেই তিনি দেখেছেন তার সাবেক মালিক শুয়ে আছেন বালির নিচে, যেখানে ছিল না কবরের কোনও নিশানা। বালি এসে ঢেকে দিয়েছে চিহ্ন। নিজের চোখে ভুল-ত্র“টির ঊর্ধ্বে থাকা মানুষটির এমন পরিণতি আশা করেননি নাসের।

মালিকের সঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার ভাগ্যটাও। গার্ডিয়ান ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.