আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেদিনও বসন্ত ছিলো (১০)



পূর্ব প্রকাশিতের পর কম্পাস বসে আছে তার মেসের বারান্দায়। বাবা চলে যাওয়ার পর সে এই মেসে উঠেছে। এই কিছুক্ষণ আগে কুরিয়ার সার্ভিসে তার কাছে একটি বই এসেছে। সে ভেবে পেল না এই বই তাকে কে পাঠালো? এ জাতীয় বই এর প্রতি সে কখনো ইন্টারেস্টেড ছিল না। কে পাঠালো এই বই? কেনইবা পাঠালো? খামে বা বইয়ে প্রেরকের নাম নেই।

পুরো ব্যাপারটি তাকে বেশ কৌতূহলী করে তুলেছে। এক সময় টিনএজ ছেলে মেয়েরা বই এর ভেতর প্রেমপত্র লিখে বই আদান প্রদান করতো। এখন আর সেই যুগ নেই। ই-মেইল আছে। যাদের কাছে ই-মেইল সুবিধা এব্যুলেবল না, তাদের মুশকিল আসান করার জন্য আছে মোবাইল এসএমএস এবং কমরেটে কথাবলার সুবিধা।

বইটি খোলে ধরতেই তার চোখে পড়ল একটি কাগজ। A 4 সাইজের কাগজে ছোট্ট অক্ষরে লেখা-Man for Man। নিচে নাম সই করা বাংলাতে, মু..ন। কাগজটি চোখের সামনে থেকে সরাতেই কম্পাসের নজর পড়লো বইয়ের প্রতি... কুকুরের দশটি উত্তম স্বভাব কুকুর একটি নিম্নশ্রেণীর প্রাণী। কুকুর কামড়ালে জ্বলাতংক রোগ হয়।

পঁচা ও নোংরা খেতে পছন্দ করে। কুকুরের লালায় বিষাক্ত জীবাণু রয়েছে। যে জীবাণু মানুষের পেটে গেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানী ঘটবে। এমনকি মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ জন্য কোনো প্লেটে কুকুর মুখ দিলে সেই প্লেটকে কয়েকবার ধুতে হয়।

মাটি দিয়ে ভাল করে ঘসে মেজে পরিস্কার করতে হয়। এছাড়া আরোও অনেক খারাপ দিক আছে কুকুরের। তারপরও কুকুরের মধ্যে এমন দশটি মহৎ গুণ রয়েছে, যেগুলো কোনো মানুষের মধ্যে চলে আসলে সে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যাবে। সেগুলো হচ্ছে- .... এখন কম্পাস যে কাজটি করতে পারে, তা হলো, এই কথাগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে লিখে চাকরীর জন্য জমা দিতে পারে। ভাল বেতনের চাকরী।

হয়ে যাওয়াটা মোটামুটি কনফার্ম। কিন্তু সে তা করলো না। কেউ একজন তার জন্য এই বইটি পাঠিয়েছে। ‘মু..ন’ নামের কেউ। সে অন্যের সাহায্য নিয়ে চাকরী পেতে চায় না।

এভাবে কেটে গেল আরো মাস খানেক সময়। ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরীর ইন্টারভ্যু দিয়েছে সে। চাকরী হয় নি। সে যখন মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো, জীবনে আর কোথাও ইন্টারভ্যু দিতে যাবে না, ঠিক তখন জিসান এসে একদিন তাকে বললো- ‘ কম্পাস, খান গ্র“প অব ইন্ডাষ্ট্রি নামক একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে লোক নিচ্ছে। দেখ্ না ট্রাই করে।

’ কম্পাস বললো- ‘ তার আর কোনো দরকার নেই জিসান। আমি আর ইন্টারভ্যু দেব না। আমি ঠিক করেছি এখন থেকে আমি ইন্টারভ্যু নেব। ’ ‘ইন্টারভ্যু নিবি মানে?’ ‘ মানে-টানে কিছু নেই। আমি ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করবো।

ব্যবসায় দু’একজন কর্মচারী লাগবে না? তাদের নাম কি? বাড়ি ঘর কোথায়? কী সমাচার ইত্যাদি জানতে হবে না?’ অবশেষে বন্ধু জিসানের চাপাচাপিতে কম্পাসকে ইন্টারভ্যু দিতে যেতে রাজি হতে হলো। কম্পাস বসে আছে খান গ্র“প অব ইন্ডাষ্ট্রিজ’র বিশাল ওয়েটিং রুমে। চাকরীর ইন্টারভ্যু দিতে এসেছে সে। একটি পোষ্টের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ঊনত্রিশ জন। সবারই চাকরীটা দরকার।

তবুও এদের আটাশজনকেই খালি হাতে ফেরৎ যেতে হবে। হাসিমুখে ফিরতে পারবে মাত্র একজন। অবশ্য এই একজনের ব্যাপারটাও নির্ভর করছে কর্তৃপক্ষের আত্মীয়-স্বজনের দয়ার উপর। যদি এদের কেউ পদটির জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে চাকরীটা তার অলরেডি হয়েই আছে। ইন্টারভ্যু ব্যাপারটি জাষ্ট ফরমালিটি মেন্টেইন।

এর বেশি কিছু না। ইন্টারভ্যু দিতে আসা এক লোক বার বার ঘড়ি দেখছে। না জানি বেচারা তার ঘনিষ্ট কোনো আত্মীয়-স্বজনকে হাসপাতালে অপারেশনের সিরিয়ালে রেখে এসেছে কি না? কুকড়া চুলের এক যুবককে বেশ ফুর্তিতে দেখা গেলো। সে যে কেবল নিজেই ফুর্তিতে আছে, তা না, আশেপাশের সবাইকেও সে ফুর্তিতে রেখেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইন্টারভ্যু, চাকরী, এসব ব্যাপার তার চলমান জীবনে কোনো প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখে না।

তাকে ঘিরে বসেছে অন্যান্য নিয়োগপ্রার্থীরা। তাদের হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে, ইন্টারভ্যু দিতে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা ব্যাপরটা মন্দ না। ভীষণরকম মানসিক চাপ নিয়ে কম্পাস এসেছে ইন্টারভ্যু দিতে। বাবা চলে গেছেন আমেরিকায়। যতদিন দেশে ছিলেন, ততদিন তাকে দেখলেই গা জ্বালা করতো।

মনে হতো এই লোক তার মায়ের হত্যাকারী। তিনি চলে যাবার পর এই প্রথম কম্পাসের মনে বাবার জন্য ভালবাসা তৈরি হয়েছে। তার মনে হচ্ছে বাবার প্রতি সঠিক আচরণ সে করে নি। যতটা বাজে ব্যবহার সে করেছে বাবার সাথে, সম্ভবত ততটা বাজে আচরণ পাবার মত কোনো অন্যায় তিনি করেন নি। নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো তার।

এই বোধটি তার মনে উদয় হতে এত দেরি হলো কেন? এমন ডজনখানেক সমস্যা মাথায় নিয়ে কম্পাস এসেছে চাকরীর ইন্টারভ্যু দিতে। এখানে এসে আবার অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। কোনো মানে হয়? কম্পাস মোটামুটি নিশ্চিত, কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঐতিহাসিক মাথাব্যথা শুরু হয়ে যাবে। মাথা ব্যথাকে ‘নো এন্ট্রি’ জানাতে হলে এই মুহুর্তে সাময়িক ভাবে হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়া দরকার। ব্রেইনের রিলাক্স দরকার।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কম্পাস গিয়ে যোগ দিল হাসির মজলিসে। কুকড়া চুল এই মাত্র একটা গল্প শেষ করেছে। হাসাহাসি পর্ব এখনো শেষ হয় নি। সে নব উদ্দমে আরেকটি গল্প শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে হাসির গল্প বলে লোকজনকে হাসাতে পেরে সে বেশ আরাম পাচ্ছে।

এই লোকের পেটের ভেতরে নিশ্চই গল্পের খনি আছে। আপাতত সে তার পরবর্তী গল্পের ভূমিকা দিচ্ছে---- “ বুঝলেন ভাইয়েরা, এখানে আমরা সবাই চাকরীর জন্য ইন্টারভ্যু দিতে এসেছি। তবে এ জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করতে লাগবে, সেটা কর্তৃপক্ষ এবং আল্লাহ পাক ছাড়া কেউ জানে না। তাই সময়টা অন্তত হাসিখুশিতে কাটানো দরকার। এবারে আমি ইন্টারভ্যু সংক্রান্ত একটি গল্প বলবো।

অনেকদিন আগের গল্প। ভাল কথা, আপনাদের মধ্যে কারো নাম অজয় বা বিজয় নেই তো?” সবাই আবার হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। কম্পাস ভেবে পেল না এই কথায় হাসির ব্যাপার কোন্টি? সবাই হাসছে কিন্তু সে এখানে হাসির কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না কেন? না কি তার লাফিং এবিলিটিই নষ্ট হয়ে গেছে। এক সময় তো সে নিজেও কোনো কারণ ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা হাসতে পারতো। তবে তার একজনের হাসতে পারা না পারায় কিছু যায় আসে না।

মানুষজন হাসতে পারছে। এই লোকের সামান্য রসিকতায় কত প্রাণখুলে হাসছে! বাঙালি কত অল্পে তুষ্ট জাতি। অতি অল্প কারণেও হেসে তুষ্ট হতে পারে, তৃপ্ত হতে পারে, খুশি হয়ে যায়। কম্পাস ভেবে পায় না এই জাতিকে এদেশের সরকারগুলো কেন খুশি রাখতে পারে না। কুকড়া চুল গলা খাকারী দিয়ে তার নতুন গল্প শুরু করলো- “ অজয় ও বিজয় ছিল দুই বন্ধু।

অজয় ছিল পড়ালেখায় মেধাবী। আর বিজয়ের অবস্থা ঠিক উল্টো। বলা যায় গাধাবী। ক্লাশ ওয়ান থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয় বসেছে অজয়ের পেছনে। অজয়ের খাতা দেখে দেখে প্রায় হুবহুই মেরেছে সে।

রেজাল্ট বেরুনোর পর দেখা গেছে দু’জনেই পাশ। এভাবে একদিন তারা দু’জনেই বিএ পাশ করে ফেললো। এবারে চাকরী খোঁজার পালা। একদিন একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তারা গেল ইন্টারভ্যু দিতে। অজয় যখন সাক্ষাৎকার দিতে ভেতরে ঢুকতে যাবে, তখন বিজয় গিয়ে কানেমুখে১ বললো, ‘দোস্ত, তুই তো জানিস, আমার অবস্থা হচ্ছে চাঁদের মত।

চাঁদের যেমন নিজস্ব কোনো আলো নেই, সুর্যের আলোয় সে আলোকিত, তেমনি আমার সমস্ত ইলিমই তো তোর সৌজন্যে। এ পর্যন্ত এসেছি তোর উপর ভরসা করে, তোর সাহায্য নিয়ে। আজ আমাকে শেষ সাহায্যটুকু কর। ’ অজয় বললো, ‘আমাকে কী করতে হবে?’ বিজয় বললো, ‘তোকে যখন ওরা প্রশ্ন করবে, তখন উত্তরগুলো একটু জোরে দিস, যাতে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আমি শুনতে পাই। ’ সম্মতিসূচক মাথা দুলিয়ে অজয় ভেতরে ঢুকে গেল।

দরজায় কান পেতে রইলো বিজয়। নিয়োগদাতারা অজয়কে মোট তিনটি প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বটি ছিল নিম্নরূপ ঃ প্রশ্নকর্তা ঃ ‘মিষ্টার অজয়, খুব সহজ একটি প্রশ্ন করছি। বলুন দেখি বাংলাদেশ কবে স্বাধীন হয়েছিলো?’ অজয় ঃ ‘প্রক্রিয়াটি তো স্যার শুরু হয়েছিল সেই সাতচল্লিশের পর থেকেই। অবশেষে ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর এসে চূড়ান্ত সাফল্য আসে।

’ প্রশ্নকর্তা ঃ ‘গুড। তো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মোট কতজন লোক শহীদ হয়েছেন? কতজন বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন? তাদের কয়েকজনের নাম বলুন তো?’ অজয় ঃ ‘লক্ষ লক্ষ লোকের অবদান আছে স্যার। দু’একজনের নাম বলে বাকীদের খাটো করতে চাই না। ’ প্রশ্নকর্তা ঃ (খুশি হয়ে) ‘অত্যন্ত চমৎকার করে বলেছেন তো। আপনার জন্য শেষ প্রশ্ন, মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেছে।

সা¤প্রতিক গবেষণায় সেটা বেরিয়ে এসেছে। বলুন দেখি এ ব্যাপারে অগ্রগতির সর্বশেষ অবস্থা কী?’ অজয় ঃ ‘এ ব্যাপারে স্যার গবেষণা চলছে। এখনো চূড়ান্ত করে কিছু বলা হয় নি। চূড়ান্ত রেজাল্ট পাওয়া গেলে আপনারাও জানতে পারবেন, আমিও জানতে পারবো। ’ প্রশ্নকর্তা ঃ ‘অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

’ এবার বিজয়ের পালা। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, সে ইউত্তরগুলো শুনেছে ঠিকই, কিন্তু প্রশ্নগুলো শুনতে পায় নি- ...চলবে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.