বুড়িগঙ্গার ঠিক মধ্যখানে খোলা নৌকায় দাঁড়িয়ে আছে কম্পাস। হাতে পাসপোর্ট। আমেরিকাগামী ফ্লাইটের রি-কনফার্ম করা টিকেট। সকাল দশটায় কম্পাসের ফ্লাইট। ন’টা সাঁইত্রিশ বাজে।
তাহলে কম্পাস এখানে কেন?
আবার কেমন জানি এবনরম্যাল মনে হচ্ছে তাকে। উস্কো-খুস্কো চুল, পরনে মলিন কাপড়, উদাস চেহারা। পা দু’টি কাঁপছে। দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
ভাব দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে পাসপোর্ট-ভিসা নদীতে ফেলে দিতে পারে। নিজেও ঝাপ দিয়ে দেয় কিনা-কে জানে!
কম্পাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নোমান হিসাব মেলাতে পারছে না। কম্পাস এমন এক কারেকটার, যে কিনা কোনো কারণ ছাড়াই এক নাগাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হাসতে পারে। জিজ্ঞেস করলে বলে-
‘আরে ব্যাটা! জীবন আর ক’দিনের রে? যখন যা হবার, তা তো হবেই। অযথা এ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে টেনশন বাড়িয়ে লাভ কি?’
নোমানের ধারণা কেউ যদি হঠাৎ করে এসে কম্পাসকে খবর দেয়, ‘এই কিছুক্ষণ আগে রোড অ্যাক্সিডেন্ট করে তোমার বাবা দু’টি পা’ই ভেঙে ফেলেছেন! তিনি এখন পঙ্গু হাসপাতালের...’
তাহলে কথা শেষ করতে না দিয়েই সে সহাস্যে বলবে-
‘ও আচ্ছা।
তাই নাকি? তারপর দোস্ত, তোর কী খবর বল। আজকাল তোকে আর দেখাই যায় না, ব্যাপার কি রে?’
এই হলো কম্পাস। সমস্যা এবং দুশ্চিন্তা, এই দু’টি শব্দের সাথে যার কোনোই সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে তার একটি নিজস্ব বক্তব্যও আছে, যার সার সংক্ষেপ হলো-
‘মানুষ তখনই দুশ্চিন্তা করে যখন সে কোনো সমস্যায় পড়ে। সমস্যার সমাধান খোঁজে বের করার জন্য দুশ্চিন্তা শুরু করে।
যার ফলে ব্রেইনের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। মস্তিস্কে গোবলেট লাগিয়ে দেয়। ফলে ব্রেইন আর ফ্রি থাকে না। আর তখন অই মস্তিস্ক দ্বারা স্বচ্ছভাবে চিন্তাও করতে পারে না।
এ জন্য যে কোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম শর্ত হলো সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করা।
তাহলে মস্তিস্ক চাপমুক্ত অবস্থায় ফ্রেশ থেকে সমাধানের পথ খোঁজে বের করতে চেষ্টা করবে। ’
সমস্যার সৃষ্টি হলে দুঃশ্চিন্তাকে তো আর দাওয়াত করে আনতে হয় না। এমনি এমনিই চলে আসে। তাহলে দুঃশ্চিন্তা ব্যাপারটিকে দূরে রাখা যাবে কেমন করে?
এ ব্যাপারেও বেশ জোরালো যুক্তি রয়েছে কম্পাসের ঝুড়িতে। তার ভাষায়,-
‘সমস্যা বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে আসতে পারে। তবে সমস্যা যাই আসুক এবং যেভাবেই আসুক, তার সব’চে খারাপ পরিণতির জন্য মানসিক প্রস্তুতি সেরে নিন। দেখবেন, সমস্যা আপনার মাঝে কোনো দুঃশ্চিন্তার জন্ম দিতে পারছে না।
আপনি অসুস্থ হয়েছেন? সেটাও একটা সমস্যা। এই সমস্যা নিয়েও আপনার দুশ্চিন্তা হবে।
এবারে আপনি একটি কাজ করতে পারেন। অসুস্থতার চূড়ান্ত পরিণতি মৃত্যুর জন্য তৈরি হয়ে যান। মনে মনে ভাবুন, না হয় মরেই গেলাম। মৃত্যুই যদি কপালে লেখা থাকে, তাহলে সেটাতো আর আমি মুছে ফেলতে পারবো না। তাহলে খামাখা চিন্তা করার দরকার কী? দেখবেন, অসুস্থতা নিয়ে আপনার মাঝে আর কোনো টেনশন কাজ করছে না।
অতএব, হাসুন মন খোলে। হাসি আবার হার্টের জন্যও উপকারী। ’
এই হলো কম্পাস। সদা হাস্যোজ্জ্বল টগবগে তরুণ। কম্পাস এবং নোমান খুবই কাছের বন্ধু।
একই প্রতিষ্ঠানে তারা চাকরী করতো। সেই থেকে সম্পর্ক। যা আস্তে আস্তে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। সেই বন্ধুত্ব এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে, তাদের উভয়ের মাঝে প্রাইভেসি নামক কোনো দেয়াল আর থাকে না। একজন অন্যজনের চোখের দিকে তাকিয়েই পেটের ভেতরের কথা বুঝে নিতে পারে।
অথচ আজ...
আজ নোমান বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে বুড়িগঙ্গার পারে। বিব্রত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে নদীর মধ্যখানে পাসপোর্ট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কম্পাসের দিকে। কিছুই বুঝতে পারছে না। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে এখন কী করবে? সে কি আরেকটি নৌকা নিয়ে চলে যাবে তার কাছে? কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলবে, ‘কী হয়েছে তোর? তুই এখন এখানে এই অবস্থায় কেন? আমাকে বল। আমি সবকিছু ঠিক করে দেব’
এরই মধ্যে হঠাৎ করে...
প্রিয় পাঠক! এর পরের ঘটনা জানতে হলে কম্পাসের জীবনের গল্প জানতে হবে।
সময় এবং ধৈর্য্য থাকলে চলুন আমার সাথে, কম্পাসের জীবনের গল্পে প্রবেশ করি।
অবশ্য কারো যদি এত ধৈর্য্য না থাকে, তাহলেও সমস্যা নেই। সর্ট-কাট একটি বুদ্ধি বাতলে দিচ্ছি। ডট (...) চিহ্নগুলোর পরে ধাক্কা মেরে কম্পাসকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিন। মনকে একটু শক্ত করতে পারলে ওকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলুন।
খেল খতম, কাহিনী শেষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।