আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্য কোনও জুলিয়েট'দের গল্প

মাথায় অনেক গল্প আসে; কিন্তু লেখার মত পর্যাপ্ত ধৈর্য-শ্রম-অধ্যবসায় নেই। গল্পগুলোকে তাই ছোট করে কবিতা বানাই.... রোমিও উদাসীন, অন্য পথের পানে চলে যাচ্ছে, দেখছো না? জুলিয়েট জুলিয়েট - কান্নায় ভেঙে পড়ে, 'হারিয়ে যাচ্ছি আমি, সোনা !' রোমিও শুনছেনা, আমিও শুনছিনা হয়তো হবে না আর শোনা..." তবে, গল্পটা শুরু এখান থেকে: অথবা গল্পগুলো সব অন্যরকম হতে পারত হয়তো বা পারত না খুব একটা তফাৎ কি হয় তাতে? যেমন ধরো, 'তিলা'র গল্পটা মেয়েটা'কে কখনও দেখেনি আগে মিস-কলে পরিচয়। যেকোনও কমিটমেন্টে জড়াতে ভয় পেত বলে হানিফ সভয়ে কথা না বলে রেখে দিতে চাইত ফোন'টা তবু তিলা 'কল' করত অনেক অনেক রাতে হানিফ মিথ্যা করে জানাতো, খুব সকালে উঠতে হবে - সাড়ে পাঁচটায় এখন যে রাখতে হয়... মৃদু কন্ঠে পৃথিবী'র সমস্ত সম্ভাব্য শুভকামনা একসাথে বলে ফেলে কথা হত শেষ - আপাতত। ভোর সাড়ে পাঁচটায় হানিফের কর্কশ রিংটোনে ঘুম ভেঙে যেত রুমের সবার বিরক্তি ছাপিয়ে যেত অবাক - তিলা? সেই মৃদু কন্ঠ, "ঘুম ভাঙেনি তোমার, না?" "তুমি এত সকালে উঠলে?" "ঘুমাইনি তো", একটু থেমে, "যদি তোমায় জাগাতে ঘুমটা না ভাঙত? এখন ঘুমাতে যাব কিছুখন" পৃথিবীর এইসব মানুষেরা কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনও কোচিং-ট্রেনিং ছাড়া এতটা নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসা শিখে নিতে পারে ! হানিফের ভয়টা গাঢ়তর হতো সে জানে সে জড়াবে না কারও সাথে এখনই তবু এই মেয়েটা কী কষ্টটা পাবে এই ভেবে তার রাতের ঘুম হালকাতর হয়ে আসত "যদি তোমায় জাগাতে ঘুমটা না ভাঙে?" পৃথিবীর এইসব ছোটোখাটো মানুষেরা... অথচ এদের মাঝে থেকেও - এদের মত হতে পারিনি আমি। কতজনকে কী ভীষণ কষ্টে রেখে হাসতে হাসতে ঘুমাতে চলে যেতাম - আমি মানুষের মত মানুষ ছিলাম : স্বার্থপর।

হানিফের মতই - জড়াবো না জানতাম কারও সাথে তখনই তবুও 'না' বলতাম না কাওকেই 'হ্যাঁ'-ও বলতাম না অবশ্যই নিজেকে ভালরকম নির্দোষ ভাবতাম ভাবতাম, কথা তো দিই নি কাওকেই তবু কথা বলা হত প্রতিটা রাতেই তবু 'হ্যাঁ' না-বলেই আরও অস্থির করে রাখতাম নিশিকে, রুবাকে, কেউ একজনকে, অন্য একজনকে অসংজ্ঞায়িত পাপে পাপে নিজেকে তুখোড় করছিলাম ক্রমাগত 'পাপ' নাকি? হয়তো জানতাম - স্বীকার করতাম না অথবা স্বীকার করতেও জানতাম না ! জীবনের এইসব দিনগুলো অদ্ভূত আলোতে কেটে গেল অতঃপর জানি না কত ভিন্ন ভিন্ন নোনা জলের হ্রদের গভীরতায় আমার মরণ লেখা হয়ে গেছে সাঁতারও যে জানি না ! জীবনের এমন অনেক গল্প থেকে যায় যেগুলো কেউ কাউকে বলবে না কোনওদিন আর। সেদিন বৃষ্টির দিনে - জান্নাতের সাথে হেঁটেছি সময় ভুলে সেই প্রথম কাওকে কদম ফুল দেয়া গাছ থেকে তাজা পেড়ে এরপর আর দেখাও করিনি তার সাথে এটুকুই যথেষ্ট মনে হয়েছিল বলে। কেউ বলত ভীষণ পাপ করছি আমি, আমার মনে হত না। একটিবারও না। এখনও মনে হয় না।

জীবনের এইসব গল্প স্মৃতি হয়ে আলোড়নে আলোরং হয়ে অদ্ভুত রাতেও হাসি ফোটায় আমার চোখে তাদের চোখেও কী নয়? কেন নয়??? আমি এখনও বিশ্বাস করি - রোমিও'র উচিৎ হয়নি ওভাবে মরে যাওয়া সে কি পারত না আরেকটু উদাসীন হতে? আরও সহজ চোখে জীবনটা দেখতে? রাত দু'টা পঁচিশে ঘাসের বুকে শুয়ে 'তারা'দের দেখে যারা আকাশের, উজ্জ্বলতম 'Sirius' অথবা অর্ফিয়াসের কটিবন্ধনী দেখে যারা প্রাচীন গ্রীকদের মত মিশরীয়-এশিরিয়দের মত পথ খুঁজে পেতে চায় দূরের পথে তারা জানে এ জীবন কী ভীষণ তুচ্ছ ! তারা জানে রোমিও'র ভুল ! ওই বিশাল পর্দায় আজও দেখি অবিরাম ছায়াছবি চলে। অন্য কোনও রোমিও-জুলিয়েটের গল্প সেটা, আমার মতন যারা। আমার চোখের মত জ্বলজ্বলে দু'টো প্রজেক্টরের লম্ব অভিক্ষেপে অবিরাম অবিরাম সেই একই প্রতিচ্ছবি আজও দেখে যাই: রোমিও উদাসীন, অন্য পথের পানে চলে যাচ্ছে, দেখছো না? জুলিয়েট জুলিয়েট - কান্নায় ভেঙে পড়ে, 'হারিয়ে যাচ্ছি আমি, সোনা !' রোমিও শুনছেনা, আমিও শুনছিনা হয়তো হবে না আর শোনা... মরে গিয়ে রোমিও ভুল করেছিল আমার গল্পে কোনও রোমিওরা-প্রেমিকেরা ওইসব ভুল করবে না ! 'ভালবাসা' না-পারাটা খুব যদি দোষ হয় - চুপচাপ সরে যাবে। দোষ রবে না। আবেগে খুন হওয়া খুব বড় ভুল- আবেগকে খুন করা ঢের নির্দোষ ! স্বীকার কর ! - তোমরা সবাই স্বীকার কর ! আমি নিষ্পাপ হই।

(যাকে ছেড়ে চলে যায়, সে-ই কেন সবসময় কবিতা লিখে? যে চলে যায়, সে-ও তো লিখতে পারে। তার-ও কিছু বলার থাকতে পারে) উৎসর্গ: আমাকে। আর আমার মত যারা আছে, তাদেরকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.