বাংলাদেশের মানুষকে ফিটনেস, খাদ্যাভ্যাস , শরীর চর্চা এবং সুস্থ্য জীবন যাপন সম্পর্কে সচেতন করাই আমার লক্ষ্য |আমার ব্লগ : http://fitnessbd.com প্রিয় পাঠক সালাম ও শুভেচ্ছা| আগের পোস্টে হাঁটার প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়েছিল| নিশ্চয়ই আপনাদের হাঁটার আগ্রহ জন্মেছে? তাই এইবার আপনাদের জন্য হাঁটার কিছু নিয়ম কানুন দেয়া হলো| হাঁটার নিয়মকে আমি দুই ভাগে ভাগ করে পোস্ট দিচ্ছি --১. বাইরে হাঁটার নিয়ম, ২. ট্রেড মিলে হাঁটার নিয়ম এই পর্বে বাইরে হাঁটার নিয়ম দিচ্ছি:- বাইরে হাঁটার সব চেয়ে বড় সুবিধা কোনো যন্ত্রপাতি লাগে না| মুক্ত বাতাসে সুন্দর, নির্মল পরিবেশে, বিশেষ করে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটলে মনটা ভালো হয়ে যায়| সব চেয়ে সহজ ব্যায়াম হতে পারে বাইরে হাঁটা| কিন্তু এই বাইরে হাঁটার জন্যেও আপনাকে সঠিক নিয়ম কানুন জানতে হবে | তা না হলে ইনজুরি হতে পারে অথবা আপনি হাঁটার সঠিক ফল নাও পেতে পারেন| হাঁটার নিয়মের পাশাপাশি ব্যায়ামের কিছু সাধারণ নিয়মাবলী জেনে নিলেও ভালো| বাইরে হাঁটার নিয়ম : প্রথমেই ওয়ার্ম আপ করুন: ওয়ার্ম আপ কি জানতে ক্লিক করুন | ওয়ার্ম আপ করতে-- প্রথমে ধীরে হাঁটা শুরু করুন| প্রথমেই জগিং বা দ্রুত হাঁটতে যাবেন না| প্রথম ৫ মিনিট ধীরে হাঁটুন, তারপর পরবর্তী ৫ মিনিট একটু স্পিড বাড়ান| এভাবে ১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করুন ভালো মত| কমপক্ষে ৫ মিনিট ওয়ার্ম আপ করলে ভালো| এক জায়গায় দাড়িয়ে মার্চ করেও ৫ মিনিট ওয়ার্ম আপ করতে পারেন| শরীর গরম হলে বা হার্ট রেট একটু বাড়লে স্পিড বাড়িয়ে হাঁটা শুরু করুন| স্ট্রেচিং করুন: ওয়ার্ম আপ শেষ হলে ভালো মত স্ট্রেচিং করুন | আপনার calf , quadriceps, hamstring , side এই মাসেল গুলো ভালো মত স্ট্রেচিং করে তারপর দ্রুত হাঁটুন| স্ট্রেচিং করলে মাসেলের স্থিতিস্থাপকতা বাড়বে, ফলে হাটতে সুবিধা হবে | কিছু স্ট্রেচিং জানতে ক্লিক করুন| ধীরে হাঁটার স্পিড বাড়ান: স্ট্রেচিং শেষ হলে ধীরে হাঁটার স্পিড বাড়ান| প্রথমেই বেশি স্পিডে হাঁটতে যাবেন না| আপনার posture বা অঙ্গস্থিতি ঠিক করুন: হাঁটার সময় সঠিক posture এ না থাকলে, আপনার দেহের গঠন নষ্ট হয়ে ব্যাক পেইন, নেক পেইন ইত্যাদি হতে পারে| হাঁটার শুরু থেকেই posture ঠিক রাখতে পা দুটো সোজা রাখুন, পা থেকে কোমর, কোমর থেকে ঘাঁড়, ও মাথা একদম সোজা থাকবে| মাথা ও চোখ থাকবে সোজা সামনের দিকে| দুই কান থাকবে কাঁধ বরাবর |চিন আপ অবস্থায় মাটির সমান্তরাল থাকবে, এতে আপনার ব্যাক ও ঘাড়ে কোনো ব্যথা হবে না| সামনে ১০-২০ ফুট দুরে তাকাবেন| ঘাড়, মাথা ও গলা স্বাভাবিক ও রিল্যাক্স অবস্থায় রাখুন| শ্বাস প্রশ্বাস থাকবে স্বাভাবিক| পেট ভিতরের দিকে টেনে রাখবেন| হাত দুটোকে কাজে লাগান-- হাঁটার সময় হাত দুটো সামনে , পেছনে দুলবে এবং সেক্ষেত্রে কনুই ও হাত থাকবে ৯০ ডিগ্রী কোনে| হাত দুটো থাকবে একটু বাকানো ও খোলা অবস্হায়| হাতের আঙ্গুলগুলো হালকা মুঠো করে রাখবেন| হাত দুটো বেশি চাপা চাপি করবেন না, রিল্যাক্স অবস্থায় রাখুন|একবার ডান হাত, একবার বাম হাত, এভাবে কনুই ভেঙ্গে এক একটি হাত সামনে , পেছনে পেন্ডুলামের মত দুলবে| কাঁধের সাথে হাত দুটো সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রী কোনে সামনে ও পেছনে দুলবে| পেছন থেকে কনুই শরীরের মাঝ রেখা বরাবর আসবে, সামনে নয়| হাত থাকবে পায়ের বিপরীতে-- অর্থাত যে পা আগাবে সেই হাত পেছনে যাবে| এভাবেও বুঝতে পারেন ডান পা আগালে বাম হাত সামনে, তখন বাম পা পেছনে ও ডান হাত পেছনে | হাত দুটো শরীরের কাছাকাছি বা কনুই প্রায় শরীরের সাথে বা শরীরের মাঝ রেখা বরাবর লেগে থাকবে| শুধু মাত্র হাতের কব্জি শরীরের সামনের দিকে যাবে| হাঁটার সময় হাত দুটোকে কাজে লাগান, এতে আপনার বেশি ক্যালরি খরচ হবে, হাঁটায় শক্তি আসবে এবং শরীরের ব্যালান্স ঠিক থাকবে| পায়ের সাথে হাতেরও স্পিড বাড়বে| এতে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকার পাশাপাশি স্পিড উঠাতে সুবিধা হবে| পায়ের স্টেপ --সামনের পায়ের স্টেপ ফেলার ক্ষেত্রে পায়ের হিল বা গোড়ালি দিয়ে শুরু হবে, ঘুরিয়ে পায়ের আঙ্গুলের দিকে যাবে ও পা সামনে যাবে | তারপর পায়ের পাতা পেছনে নেবেন| পেছনে নেয়ার সময় calf muscle এ হালকা চাপ দিয়ে নেবেন| পেছনের পা স্টেপ ফেলার সময় টেনে পেছনে নিবেন, তারপর একই ভাবে অন্য পা সামনে নেবেন| তারপর ঘুরিয়ে পেছনের পা সামনে নিবেন| উপরের ছবির মত| এভাবে একটি ছন্দে হাঁটতে হবে ও প্রতিটি স্টেপ ফেলতে হবে|ছোট ছোট ও দ্রুত স্টেপ ফেলতে হবে| সামনের পায়ের চেয়ে পেছনের পায়ে চাপ দেবেন বেশি| পেছনের ও সামনের পা শরীর থেকে মোটামুটি বাইরের দিকে বা দুরে যাবে| খুব বেশি নয়| কোমর/ হিপ হালকা সামনে পেছনে ঘুরবে বা টুইস্ট করবে| হাঁটার মাঝে দম নিন ও ছাড়ুন: হাঁটার মাঝে মাঝে শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখতে লম্বা ও গভীর দম নিন ও ছাড়ুন| নাক দিয়ে দম নিয়ে, মুখ দিয়ে ধীরে ছাড়ুন|এতে আপনার শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও আরো হাঁটার শক্তি পাবে| কিছুদিন পর পর আপনার কেমন উন্নতি হচ্ছে, তা লক্ষ্য করুন| যেমন: ওজন কত কমলো, বা ফিতা দিয়ে মেপে দেখুন স্বাস্থ্য কেমন কমলো ইত্যাদি| আপনার হাঁটার গতি, কত মাইল কত সময়ে হাঁটছেন,ইত্যাদি লক্ষ্য করুন ও কেমন উন্নতি হচ্ছে তা জানুন| প্রয়োজনে লিখে রাখুন| এতে করে আপনার উন্নতি দেখে ভালো লাগবে ও আরো উন্নতি করার অনুপ্রেরণা পাবেন| পানি খাবেন: হাঁটার ১০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি খাবেন | সারাদিন এক ঘন্টা পর পর এক গ্লাস করে পানি খেলে হাঁটার সময় পানিশুন্যতা হবে না| হাঁটার সময় প্রতি ২০ মিনিটে এক কাপ করে পানি খাবেন| হাঁটার শেষে এক থেকে দুই গ্লাস পানি খাবেন| সব সময় একই স্পিডে না হেটে মাঝে মাঝে স্পিড বাড়ান|হাঁটার সময় হার্ট রেট বেড়ে গেলে বা ক্লান্ত লাগলে স্পিড কমিয়ে দিন| হার্ট রেট কমে আসলে আবার স্পিড বাড়ান| হাঁটার সময় এভাবে স্পিড বাড়ালে ও কমালে আপনার ক্যালরি বেশি বার্ন হবে| তবে যারা নতুন হাঁটা শুরু করেছেন বা করবেন তারা ধীরে ধীরে স্পিড বাড়াবেন, কিছুদিন হাঁটায় অভ্যস্ত হয়ে তারপর| কুল ডাউন করুন: হাঁটা শেষ হলে কুল ডাউন করুন| কুল ডাউন মানে আপনার হার্ট ও মাসেল গুলোকে রিল্যাক্স করা| হঠাত করে হাঁটা বন্ধ করলে আপনার মাসেল পুল,ইনজুরি, হার্ট ফেইল ইত্যাদি হতে পারে|কুল ডাউন করতে শেষ ৫-১০ মিনিট ধীরে ধীরে হাঁটুন| তারপর আবার ভালো মত স্ট্রেচিং করুন|আগের স্ট্রেচিং গুলোই করতে পারেন| কিছু কুল ডাউন স্ট্রেচিং জানতে ক্লিক করুন| ভালো হাঁটার গড় স্পিড হতে পারে ঘন্টায় ৩/৪ মাইল | ধীরে ধীরে এই স্পিডে হাঁটতে চেষ্টা করুন, একদিনে এই স্পিডে হাঁটা আয়ত্ব করা সম্ভব না| সপ্তাহে কতদিন ও কতক্ষণ হাঁটবেন? সপ্তাহের অধিকাংশ দিন, যেমন: ৪-৬ দিন, ৩০-৬০ মিনিট হাঁটুন| সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন শরীরকে বিশ্রাম দিন|শরীরকে বিশ্রাম দিলে আপনার ব্যায়াম ভালমত কাজ করবে| কারণ, বিশ্রামের ফলে মাসেল তৈরী হবে, শক্তি ফিরে আসবে ও ব্যায়াম কাজ করবে| আবার এক,দুই দিনের বেশি বিশ্রাম দিতে যাবেন না, তাহলে হাঁটার ফল পাবেন না| হাঁটার সাথে আর কি ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন? হাঁটার ব্যায়ামের পাশাপাশি স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম, weight training ইত্যাদি করতে পারেন| সেক্ষেত্রে আগে ওয়ার্ম আপ করতে হবে ভালো মত| তারপর স্ট্রেচিং, ও weight training করবেন| পেটের ব্যায়াম করবেন সবার শেষে| কারণ হাঁটা শুধুই কার্ডিও ব্যায়াম| flexibility ও strength training এর উপকারিতা পেতে স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম, weight training ও করতে হবে| তাহলেই আপনার স্লিম, সুন্দর ও সু-স্বাস্থ্য হবে| সেক্ষেত্রে কোনদিন হাঁটার সাথে কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন তা আগে থেকে রুটিন তৈরী করে নিন| কখন হাঁটবেন? আপনার সুবিধামত সময়ে হাঁটতে পারেন| তবে শরীরের কথা চিন্তা করলে বিকালে হাঁটা সবচেয়ে ভালো| কারণ তখন মাসেল ও joint flexible থাকে| শরীরের তাপমাত্রা সকালের চাইতে বেশি থাকে| তখন সব কাজ শেষ করে টেনশন মুক্ত হয়ে হাঁটা যায়| তবে খুব কাজের চাপ থাকলে হয়ত হাঁটার রুটিন মিস হতে পারে| কিন্তু সকালে হাঁটলে মাসেল ও joint শক্ত হয়ে থাকে| তাই হাঁটার ফল ঠিক মত পাওয়া যায় না| আবার শরীরও ওয়ার্ম আপ হতে সময় বেশি লাগে| তাই বিকালে হাঁটা উত্তম| কিন্তু বিকালে পরিবেশ দূষণ বেশি থাকে এটাও সমস্যা| সকালে দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটা যায়| তবে আপনি যখনি সময় পান সুবিধা মত সময়ে হেটে নিবেন| চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটতে| কোথায় হাঁটবেন? চেষ্টা করুন সুন্দর, দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটতে| হাঁটার জায়গা যেন সমতল ও পরিষ্কার হয় তা লক্ষ্য রাখুন| বাড়ির বাগান, পার্কে, পরিষ্কার ফুটপাতে বা যেকোনো খোলা জায়গায় হাঁটতে পারেন| মাঝে মাঝে হাঁটার রাস্তা বা জায়গা বদল করুন| এতে একঘেয়েমি কাঁটবে| হাঁটার ক্ষেত্রে সব সময় যা যা মনে রাখতে হবে তা হলো-- পুরা শরীর কে সঠিক posture এ রেখে, হাত ও পা ব্যবহার করে, মন স্থির করে, পর্যাপ্ত শক্তি দিয়ে হাঁটতে হবে| তাহলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে|হাঁটার সময় সঠিক posture কেমন হবে জানতে ক্লিক করুন| বাংলাদেশের লেখা ভালো লাগলে, ইমেইলে নিয়মিত নতুন পোস্ট পেতে ফিটনেস বাংলাদেশ ব্লগে subscribe করুন |
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।