মোনে আমার শিক্ষার ক্ষুদা মিটাবেন কি মোনের জ্বালা।
যান কুণ্ডলের শহর ঢাকা। যেদিকে তাকাই শুধু গাড়ি আর গাড়ি। এই গাড়ির ভিড়ে গন্তব্যে যাওয়া প্রায় মুশকিল। রাস্তা জুড়ে থাকে প্রাইভেটকার, বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও রিকশা।
ভ্যানগাড়ি ঠেলাগাড়িও পিছিয়ে নেই। গাড়ির এই মিছিল চলছে পঙ্গু লোকের লাঠি ভর করে চলার মতো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে রয়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল। একদিকে চলছে গাড়ির পর গাড়ি, অন্যদিকে জমছে গাড়ির পর গাড়ি। সকালবেলা ঘর থেকে বের হয়েই চোখে পড়ে এই চলা আর জমার খেলা।
কখনো কখনো এই গাড়ি জমার লাইন বিস্তৃত হচ্ছে পুরো আধা মাইল জুড়ে। যানজটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে প্রাইভেটকারকে। প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছে নতুন নতুন প্রাইভেটকার। এ সমস্ত প্রাইভেটকার ব্যবহারকারীদের রাস্তা দিতে বন্ধ করতে হচ্ছে রিকশার চলাচল। সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে রিকশার রাস্তা।
কিন্তু যানজট কমছে না। বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ।
সরকার এবং নগর পরিকল্পনাকারীরা হিমশিম খাচ্ছেন ঢাকা শহরের যানজটসংক্রান্ত বহুমাত্রিক সমস্যা সমাধান করতে। যানজট নিরসনের জন্য পাতাল রেল বা ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।
কিন্তু আমাদের দরিদ্র দেশে এমন ব্যয়বহুল প্রকল্প সম্পাদন করে যানজট নিরসন করা দিবাস্বপ্নের মতো। ফ্লাইওভার যানজট কমাতে পারে না। এই ফ্লাইওভার এক জায়গার যানজট অন্যত্র সরিয়ে নেয় মাত্র। যানজট নিরসন ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ফ্লাইওভার কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বর্তমানে ঢাকায় ২১০০ কিলোমিটার রাস্তা আছে।
এই সমস্ত রাস্তায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে রিকশা চলছে ৫ থেকে ৬ লক্ষ। ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত গাড়ি চলছে ৫ লক্ষের ওপরে। এই যানজট থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রথমত ঢাকা শহরকে পাতলা ও হালকা করতে হবে। আর ঢাকাকে হালকা করতে হলে শিল্প কারখানা ঢাকা থেকে সরিয়ে ঢাকার বাইরে নিতে হবে। এটা যদি সফলভাবে স্বল্প সময়ে করা যায় তবে যানজট থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে ঢাকা নগরী।
ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই। অথচ ঢাকা নগরীর যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে এই দিকটি চরমভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। দেখা যায় ঢাকার রাস্তার দুপাশে যে ফুটপাত তা হকারদের দখলে। আবার অনেক এলাকায় প্রধান রাস্তায় যখন যানজট তখন মোটর সাইকেল আরোহীরা ফুটপাত ব্যবহার করছে নির্দ্বিধায়। রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটপাত অবৈধ দখলে রয়েছে।
ফুটপাতে গড়ে তোলা হচ্ছে বাজার। মাছ থেকে শুরু করে কাঁচা তরকারি, ফলমূল-হাঁসমুরগি কী পাওয়া যায় না সেখানে। ফুটপাতে রয়েছে টেলিফোন জংশনের বক্স, বইয়ের দোকান। কোথাও কোথাও
ফুটপাত এবং রাস্তার কিছু অংশ দখল করে চলে গাড়ি মেরামতের কাজ। ওয়ার্কসপ, ঝালাই কারখানা এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসাও চলে রাস্তা দখল করে।
রাস্তার পাশে আসবাবপত্রের দোকান। সোফা বা খাট তৈরি করা হয় রাস্তার ওপরেই রাস্তাটাকে নিজের বাপ-দাদার সম্পত্তি মনে করে। কেউ কিছু বলে না। কারণ ব্যস্ত নগরীর সকলেই ব্যস্ত। আবার অনেক এলাকার রাস্তার ফুটপাত সংকীর্ণ, ভাঙাচোরা, কোথাও কোথাও এমন সংকীর্ণ যে একজন মানুষও হাঁটতে পারে না।
ফুটপাত সংকীর্ণ করা নয় বরং প্রয়োজন হলে আরো প্রশস্ত করতে হবে। পথচারীদের অবাধ যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেগুলো মেরামত করা ছাড়াও অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। যেহেতু আমার মতে, ঢাকার যানজট নিরসনে স্বল্প দূরত্বে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।