আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যোগাযোগমন্ত্রীর ইতিবৃত্ত

কবে যাবো পাহাড়ে... কবে শাল মহুয়া কণকচাঁপার মালা দেব তাহারে.... একদা একদিন সকালবেলায় কাবুল মিয়া টোস্ট বিস্কুট দিয়ে ভিজায় ভিজায় চা খাইতেছিলো। তৃতীয় টোস্টবিস্কুটের সর্বশেষ টুকরা গলধঃকরণ করার পর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে পাশে বসা হোসেনকে বলল, ‘বুঝলা হোসেন, আমি তো চা খাই না। টোস্ট বিস্কুটরে চা খাওয়াই, আমি টোস্টবিস্কুট খাই। হে! হেহ! হে!’ হাসতে গিয়ে তার কাতলা মাছসদৃশ মুখ খুলে এত বিশাল হাঁ হয়ে যায় যে মনে হয় আড়াই কেজি টোস্টের কমে এই মুখ কিছুতেই বুজবে না। কালচে হলুদ রঙের দাঁত দেখে তার খাদ্য টোস্টবিস্কুট না অন্য কিছু- তাই নিয়ে সন্দেহ জাগে।

হোসেন একটু ঢোক গিলে বলে, ‘জ্বে, বুঝসি। ’ কাতলা মাছের মুখ একটু ছোট হয়। ভেতর থেকে প্রশ্ন বের হয়, ‘আচ্ছা বলো তো, তোমার নামের আরবী মানে কি?’ এরই মধ্যে রাজমাতা নাছিমা বেগম এসে উপস্থিত হন। ‘এই কাবুল! আমার দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে দশ কেজি টোস্টবিস্কুট কিনছিলাম- তার মাত্র আধা কেজি অবশিষ্ট আছে। বাকিগুলা কি সব তুই খাইছিস নাকি? সত্যি করে বল!’ কাবুলের মুখ এবার সত্যি সত্যি ছোট হয়ে আসে।

দাঁতগুলাও ভিতরে চলে যায়। ধরা খাওয়া চোরের মতো বলে উঠে, ‘কি করবো আম্মাজান, ফ্রি জিনিস আর পাবলিকের মাল দেখলে লোভ সামলাইতে পারিনা! তয় আমি একা খাইনাই। দলের সবাইরে দিয়াই খাইছি!’ আম্মাজান দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িয়া কইলেন, ‘তোর মধ্যে মন্ত্রী হওয়ার সব গুণই ব্যাপকভাবে প্রকট। আজকাল আমি মন্ত্রীসভা আর ছাগলের খোঁয়াড়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাইনা। ’ হঠাৎ কাবুলের কি যেন মনে হয়; বলে উঠে, ‘আম্মাজান, আমার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করবেন?’ আম্মাজান চরম বিস্মিত হয়ে শুধায়, ‘কেন রে? হঠাৎ দৌড় প্রতিযোগিতা কেন?’ কাবুল বলে, ‘আমি ছোটবেলায় বিস্কুট দৌড় চ্যাম্পিয়ন ছিলাম।

আমার গ্রামের মুদির দোকানের নারিকেল দেওয়া বিস্কুট গুলা বয়াম খুলে বের করে নিয়ে দিতাম এক ভোঁ দৌড়। কেউ কখনো ধরতে পারতো না। অনেক পুরান কথা মনে পইড়া যাইতেছে। আজকে খুব টোস্টবিস্কুট দৌড় দিতে মঞ্চাইতেসে!’ আম্মাজান কাবুলের এরুপ আবোলতাবোল বকরবকর শুনে অভ্যস্ত। ইদানিং আর তাকে ঝাড়িও দেননা।

ঝাড়ি দিয়া আর কি হবে? ছাগল তো ছাগলই। ছাগলকে কখনো কেউ ঝাড়ি দিয়া জিরাফ বানাইতে পারছে? তিনি আনমনে বললেন, ‘তাহলে আমার সাথে কেন? যা- হোসেন, রহিম, করিম, সবুর এদের সাথে দৌড়া। ’ কাবুল রাজমাতার কথা শুনে এক লাফে উঠে দাঁড়ায়ে একটা ‘ইয়াহু!’ বলে চিৎকার দিলো। সেই চিৎকার শুনে পাশে বসে পুঁটি মাছ কাটতে থাকা করিমন বিবি ‘ইয়াল্লা!’ বলে ভিরমি খেয়ে দাঁতকপাটি লাগলো। রাজমাতা চমকায়ে উঠে ‘লা হাওলা..’ পড়তে লাগলেন।

কাবুল ততক্ষণে মুক্তকচ্ছ হয়ে ছোটা শুরু করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোথা থেকে যেন একটা সাপের বাঁশি নিয়ে হাজির সে। ততক্ষণে তার চিৎকার শুনে রহিম, করিম, সবুর- সবাই ছুটে এসেছে হলরুমে। এর মধ্যে রাজমাতা একটু সামলে নিয়েছেন, আর করিমন মুর্ছা গেছে। রাজমাতা আজ্ঞাইলেন, ‘যাওতো বৎসরা! কাবুলের খুব শখ টোস্টবিস্কুট দৌড় করবে।

তোমরাও একটু দৌড়াও। দৌড়াইলে সাস্থ্য ভালো থাকে। পুলিশের দৌড় খাওনাই বহুদিন। এমনভাবে শরীরে জং আর হার্টে কোলেস্টেরল পড়বে। ’ সকালবেলায় সুগ্রীবের খোক্ষসচিৎকারে ঘুম ভেঙে সবার মুখ তখন মেনী মাছের আকার ধারণ করেছে।

বিমর্ষমুখে সবাই সামনের উঠানে দৌড়াতে গেলো। কাবুল শুধাইলো, ‘জিতলে পুরষ্কার কি?’ রাজমাতা বললেন, ‘যা চাও তাই পাবা!’ এই কথায় কাবুল ব্যাপক খুশি হয়ে রাজমাতার হাতে সাপের বীণ ধরায়ে দিলে বললো, ‘রাজমাতা, আপনে বাঁশি বাজান। বাঁশি বাজানো শুরু করলে দৌড় শুরু, আর শেষ করলো দৌড় শেষ। ’ রাজমাতার চেহারা দেখে বোঝা গেলো, তাঁর বাঁশি বাজানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই। তবে কাবুলকে এইভাবে নিবৃত করা যাবেনা।

বাঁশি তাঁকে বাজাইতেই হবে। তাই কথা না বাড়ায়ে তিনি বাঁশি বাজানো শুরু করলেন। রহিম, করিম, সবুর, হোসেন কারোরই দৌড়ানোর শখ ছিলোনা। তারা দৌড়াইলো ম্যারাথন, আর কাবুল দৌড়াইলো ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। এর মধ্যে রাজমাতা নাসিকাগহ্বরে সুড়সুড়ি অনুভব করায় একটা হাঁচি দিয়ে বসলেন।

সাপের বীণ একটা চিকন কুৎসিত আর্তনাদ করে থেমে গেলো। সঙ্গে সঙ্গেই তার চেয়েও কুৎসিত আরেকটা চিৎকার শুনা গেলো: ‘জিতসি! জিতসি!!’ মুহুর্তের মধ্যেই বগল বাজাইতে বাজাইতে কাবুলের পুনর্প্রবেশ। ‘আম্মাজান, আমাকে এইবার পুরষ্কার দেন!’ আম্মাজান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, ‘কিন্তু, আমার তো হাঁচি আসছিলো। আমি তো...’ কাবুল খ্যানখ্যান করে কাঁদতে আর হাত-পা ছুঁড়তে লাগলো। ‘না, না! আমি জিতসি! আমি জিতসি!! আমার পুরষ্কার চাই!!!’ রাজমাতা হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা বলো।

কি পুরষ্কার চাও?’ এরপরে কাবুল যা বললো, তাতে নাছিমা বেগমের রাজ্যের ইতিহাস চিরতরে পাল্টায়ে গেলো। সে দাঁত কেলায়ে আকর্ণবিস্তৃত হাসি হেসে বললো, ‘আম্মা, আমি যোগাযোগমন্ত্রী হবো! ’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.