মিথ হয়ে যাওয়া রোমান সাম্রাজ্য বা হালআমলের ইতালি; ইউরোপীয়দের রক্তে যে উপনিবেশবাদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তা মুসরাতা দেখলেই বোঝা যায়। আজ পশ্চিমা মিডিয়া যাকে মিসরাতা বলছে, স্থানীয়রা তাকে মুসরাতাই বলে। ছিমছাম শহরটিই লিবিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী। এমন একটা অদ্ভুত সময়ে আমার ওই শহরে বেড়ে ওঠা, যখন মোড়ে মোড়ে ইতালিয়ানদের গির্জার চূড়া বদলে মিনার করা হচ্ছে-- ধর্মান্তরিত হচ্ছে উপসনালয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কেবল লাগছে শহরটিতে।
কৃত্রিম ঝর্নায় যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে পার্ক। সবুজায়নের আগ্রাসনে মরুভূমি, অদ্ভুত সব দৃশ্য। মাইলের পর মাইল ভূমধ্যসাগরীয় ফলের আবাদ। এখানে যেমন গরুর দাপট, ওখানে তেমন উট আর ঘোড়ার দৌরাত্ম। ভূমধ্যসাগর দেখেই সমুদ্রের বিশালতায় মুগ্ধ আমি তখনো জানতাম না, হতভাগা সাগরটার চারদিকই ঘিরে আছে স্থল।
ইতালিয়ানদের তাড়িয়ে স্বাধীনতা এনেছিল লিবিয়া, আমরা যেমন তাড়িয়েছি ব্রিটিশদের। তবে এখনো যেভাবে আমাদের রাষ্ট্রীয় অস্থিমজ্জায় ব্রিটিশ শাসন, সেখানে পুরো বিপরীত!
মরুভূমির সিংহ ওমর মুক্তারের দেশ বলে কথা, সবুজ বিপ্লবের ছোঁয়ায় তা আমুল বদলে গেলো সেখানে। আর শৈশবে আমার সবচেয়ে প্রিয় সেই টেলিভিশনে প্রায়ই দেখতাম ওমর মুক্তারের সিনেমাটি। শিখেছি স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে হয়, উপনিবেশের শোষণমুখী চরিত্র; দেখেছি প্রকাশ্য ফাঁসির দৃশ্যও। অন্তত বাংলা সিনেমা দেখার আগপর্যন্ত আমার ধারণা ছিল, ফাঁসিটা দিনে-দুপুরেই হয়।
অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখে, নিঃশ্বাস ফেলে। আর একটা টুলের ওপর দন্ডিতকে দাঁড় করা হয়। টুলটা ফেলে দিলে দড়িতে ঝুলানো রুই-কাতলার মতো কাতরাতে থাকে দেশপ্রেমিক আসামী, করুণ মৃত্যু হয় তার। যেমন হয়েছিল ওমর মুক্তারের। সিনেমা দেখার ফাঁকে ফাঁকে বাবা শেখাতেন-- এটা হচ্ছে ওমর মুক্তার বাহিনীর কাউন্টার অ্যাটাক, আর ওইটা ছিল এ্যাম্বুশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।