আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিবিয়া জীবন: ১৪

এ লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আমার যুদ্ধাপরাধ মাখরুনাই ছিল শৈশবে আমার প্রিয় খাবার। অনেকদিন পরে ২০০৩/০৪-এর দিকে দেখলাম সেটাই ইতালিয়ান প্যাটেন্ট পেয়েছে ম্যাকারনি নামে। তাহলে দুর্গম মরুদ্যানগুলোতে কিভাবে কয়েক শ বছর ধরে মাখরুনার চল, আমার মাথায় আসে না। লিবিয়ায় ইতালিয়ান উপনিবেশ কিন্তু উত্তরের উপকূলীয় এলাকাগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিশাল সাহারা মরু পেরিয়ে রাজ্যবিস্তারের চেষ্টা ইতালিয়ানরা করেনি।

মিশর, আলজেরিয়ায় যা করেছিল ফ্রান্স। যা হোক, উপনিবেশবাদ যে আক্ষরিক অর্থেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর খাবার ছিনতাই করতে পারে, তা শিখলাম মাখরুনা দেখে। কুসকুসি-ও দারুণ টেস্টি। সুজি তেলে ভেজে এক ধরনের হলুদ খাবার। আরও ছিল এক ধরনের রুটি, খুবজা।

বেকারিগুলোতে আশরা গুরুশ-এ (১০ পয়সায়) ৪টা খুবজা পাওয়া যেত। নিচতলায় মিশরীয় মহিলা জামালাতের গোটা দশেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে আমি কুসকুসি খেতাম। আমাদের দেশে গরুরে খড় খাওয়ার সেই প্রকান্ড পাত্র চারি'র মতো সাইজের একটা বউলে অনেক কুসকুসি দিতেন জামালাত। ওটার চারপাশে বসতাম আমরা। সবার হাতে চামচ।

সবাই একসঙ্গে খাচ্ছে একপাত্রে। ডাল-মাছ-মাংস-ভাত মিশিয়ে তবলিগি খাওয়ার মতো ঘেন্না লাগার সুযোগ নেই শুকনো শুকনো কুসকুসিতে। অদ্ভুত এক দৃশ্য। একটায় আরেকটারে খাওয়ায় দিচ্ছে। একটা আবার আরেকটার চামচে বাড়ি দিচ্ছে।

তবে চামচের যুদ্ধ ছিল এই খাওয়ায় সবচেয়ে বড় পাপ। জামালাত নামের দৌত্যের মতো বিশাল মহিলাটি ভীষণ রাগতেন তখন। গরুর মাংসের ঝোলে ডুবিয়ে খুবজা খেতাম বাসায়। আর বাঙালি বাবা-মা অবশ্য ভাতেই ঢুবে থাকতেন। শ্রীলংকা থেকে প্যাকেটজাত চিংড়ি আসতো।

চিংড়িগুলো কালো কালো বিশ্রি ‌দেখতে হলেও বেশ সুস্বাদু। একবার ঘানা থেকে ২ জাহাজ কলা এসেছিল। খবর পেয়ে সুক-তালাতায় লম্বা লাইন। মাথাপিছু এক ডজন করে কলা বিক্রি হয়েছিল। শুনেছি কলার লাইনে মারামারির ঘটনাও ঘটেছিল।

এরপর অনেক দিনের জন্য কলা আমদানি বন্ধ ছিল লিবিয়ায়। নাকবোচা কোরিয়ানরা নাকি মানুষ খায়-- গুজবটা খুবই বিশ্বাস করতাম শৈশবে। কোরিয়ান শ্রমিকরা নাকি এক পাগড়িওয়ালা ইন্ডিয়ান শিখকে জবাই করে খেয়েছে। কোরিয়ানদের ফ্রিজে নাকি ওই শিখ ব্যাটার রানও পাওয়া গেছে। এমন উদ্ভট সব তথ্য।

পার্কে, মাঠে-ময়দানে কোরিয়ান দেখলেই ভো দৌড়! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।