এ লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আমার যুদ্ধাপরাধ দুই মাসের ছুটি কাটিয়ে আবারও আমরা লিবিয়া ফিরছি। সোশ্যালিস্ট লিবিয়ান এয়ারলাইন্সে কোনও ক্লাস বিভাজন নাই। সবচেয়ে পেছনের সিট থেকেও ককপিটের দরজা দেখা যায়। এয়ার হোস্ট্রেসররা বেশিরভাগই মিশরীয় আর লেবানিজ। ইউরোপীয়ানও ছিলেন কেউ কেউ।
মিশরীয়দের সুবিধা ছিল তারা আরবি আর ইংরেজি, দুই ভাষাই বলতে পারতো। যে কারণে লিবীয় বা বিদেশী সবার সঙ্গেই তাদের যোগাযোগ ছিল। আমার মা-ও আরবি শিখেছিলেন এক মিশরীয় মহিলার কাছে।
সম্ভবত বর্ধমানে সেটেলড ইলিয়াস বা লন্ডনে সেটেলড রহিম আংকেলকে দেখেই বাবার দেশপ্রেম চাঙ্গা হয়েছিল। একটা কানাডীয় কোম্পানির অফারও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি সব সময়ই চাইতেন, আমরা, তার সন্তানরা দেশেই সেটেলড হই। মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামী লীগের অন্ধ ভক্ত এই মানুষটি যে কারণে আমাদের দেশের বাইরে যাওয়ার সব পথই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানের কোনও কাগজপত্র নেই আমাদের দুই ভাইয়ের। দুজনকেই ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছেন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার সব চেষ্টাই করেছেন তিনি।
প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি কি না বা পারবো কি না-- তা জানা নেই। তবে দেশেই রয়ে গেলাম।
কাগজপত্র না থাকলেও স্মৃতিটা রয়ে গেছে খণ্ড খণ্ড। বাবা লিবিয়ার মাটিতে বসেই আমাদের বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর চেষ্টা করতেন তিনি। মা নিজের হাতে আদর্শলিপি লিখেছিলেন আমাদের বাংলা শেখানোর জন্য।
মাতৃভাষার আগাগোড়া আমার তার কাছেই শেখা। বাংলাদেশ থেকে ফেরার পথে আমাদের জন্য প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণীর বই কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিধিবাম। ত্রিপোলি বিমানবন্দরে রাজনৈতিক বই সন্দেহে সেগুলো আটকে দিলো লিবিয়ার কাস্টমস বিভাগ। মা আরবিতে বোঝালেন, তোমরাও নিশ্চয়ই চাও না আমার ছেলেরা তোমাদের দেশে থাকুক এবং বিয়ে করুক।
এতে তোমাদেরই ক্ষতি। কালচার নষ্ট হয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়বে আরব জাতীয়তাবাদ। এরপর কোমড়ে পিস্তল গোজা ওই কাস্টমস কর্মকর্তা ডেকে আনলেন তাদের বসকে। ভাগ্যিস, বস মিশরীয় ছিলেন।
তিনি কাহিনীর কিছুটা বুঝলেন। তবে তিনি মাকে প্রশ্ন করলেন, বইগুলো শিশুদের হলেতো আরও কালারফুল হওয়ার কথা, নিউজপ্রিন্টে ছাপা হওয়ার কথা না। মা জবাব দিলেন, গরীব দেশতো। তাছাড়া শিক্ষার খরচটা বাংলাদেশে সরকার দেয় না। অভিভাবকদেরই বইগুলো কিনতে হয়।
এক ইন্ডিয়ান পুলিশ কর্মকর্তা, শ্রীলংকান ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আর ওই মিশরীয় কাস্টমস কর্মকর্তা প্রায় ৩ ঘণ্টা নানা গবেষণা করে বইগুলো ছাড়লেন। বাঙালি কমিউনিটিতে ওই বইগুলো যে কতোবার ফটোকপি হয়েছে, তার হিসেব নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।