ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মেধাবী ছাত্রী দিহান মেহজাবিন ওরফে রিদিতা চেয়েছিল (১৪) বাবা-মা’র সমন্বিত ভালবাসা, আদর-যত্ন। সে মেনে নিতে পারেনি বাবার গোপন বিয়ে। যে কারণে মায়ের সঙ্গে চলে এসেছিল নানার বাড়িতে। এখানে এসেও থেমে থাকেনি রিদিতা। চেষ্টা চালিয়েছে বাবা-মাকে এক করতে।
লুকিয়ে লুকিয়ে বাবাকে ফোন করেছে। বলেছে, তুমি ভাল হয়ে যাও। আমাদের কাছে টেনে নাও। যে মেয়েকে নিয়ে থাকো ওই মেয়ের বয়স আমার চেয়ে সামান্য বেশি। তাকে আমার মা ডাকতে ইচ্ছা করে না।
মেয়ের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে যেতেন হোমিও চিকিৎসক পিতা আলিমুজ্জামান শেখ। ধমক দিতেন। অন্যদিকে, তার মা চাইতো না মেয়ে তার বাবার সঙ্গে কথা বলুক। বাবার সঙ্গে কথা বলা শেষেই রিদিতা দীর্ঘক্ষণ কাঁদতো বলে জানান তার নানা গোলাম মোস্তফা। একদিকে সবার অগোচরে বাবাকে ফোন করা, অন্যদিকে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কাঙ্ক্ষিত ভালবাসা না পেয়ে হতাশার মধ্যে ছিল রিদিতা।
বাবাকে ফোন করার কথা জানতে পারলে মা তাকে বকা দিতো। অনেক চেষ্টা করেও যখন সে বাবা-মাকে এক করতে পারেনি তখন নিজেকেই সরিয়ে নিতে চেয়েছে অভিমানী মেয়েটি। গতকাল সে চিরদিনের জন্য চলে গেছে না ফেরার দেশে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় আত্মহত্যা করেছে রিদিতা। সে ভিকারুননিসা নূন স্কুল আজিমপুর শাখার সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো।
গতকাল সকালে মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়াস্থ চিনুমিয়া রোডের ১৫/এ/৯ নম্বর বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, রিদিতা বাবা-মায়ের কলহ মেনে নিতে পারতো না। নিজের সাধ্যমতো সে চেষ্টা করে গেছে বাবা-মাকে এক করতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তারই পরিণতি রিদিতার এ অকালে চলে যাওয়া।
মেডিকেল সূত্র জানায়, রিদিতার পিতা ডা. আলিমুজ্জামান শেখ যাত্রাবাড়ীতে থাকেন। মা ফাতেমা সুলতানা চৌধুরী ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি মোহাম্মদপুরস্থ পিত্রালয়ে থাকেন। রিদিতাও তার সঙ্গে থাকতে। গতকাল সকাল সাতটার দিকে মা ফাতেমা বাইরে বের হন।
সকাল ন’টার দিকে তার নানি নাশতা করার জন্য ডাকেন রিদিতাকে। কোন সাড়া না পেয়ে ছ’তলা ভবনের দোতলায় তাদের রুমে গিয়ে দেখেন রিদিতার লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। এরপর তার লাশ নামিয়ে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে।
রিদিতার মামা কাওসার চৌধুরী জানান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার পর গত তিন-চার মাস ধরে একমাত্র সন্তান রিদিতাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে থাকছিলেন মা ফাতেমা চৌধুরী। স্বামী আলিমুজ্জামানের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় নারী নির্যাতনের মামলাও করেছেন তিনি। মা-বাবার দ্বন্দ্ব, মামলা ও পৃথক থাকা মেনে নিতে পারেনি রিদিতা। মাঝে-মধ্যেই সে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইতো। তার মা নিষেধ করতেন।
এসব নিয়ে মেয়েটির মানসিক অবস্থা ভাল ছিল না। এ কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। এ ঘটনায় রিদিতার মা ফাতেমা সুলতানা চৌধুরী মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এসআই সিরাজ-উদ-দৌলাকে। রিদিতার নানা গোলাম মোস্তফা গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে জানান, রিদিতা টেলিফোন করলেই বাবা রাগ করতেন।
একজন বাবা তার মেয়েকে এত কষ্ট দিতে পারে তা আমার জানা ছিল না। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে এখনও তার বাবার বাড়ির কেউ আসেনি। তাদের কারণে জানাজা পড়তে বা লাশ দাফন করতে পারছি না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তারা টেলিফোনে জানাচ্ছে, লাশ পাঠিয়ে দিন।
আমরা গ্রামের বাড়ি নিয়ে কবর দেবো। আমি তাদের বলছি, লাশ কাদের কাছে পাঠাবো? আপনারা এসে লাশ নিয়ে যান। অথবা আমরা থানা পুলিশের সম্মতি নিয়ে লাশ দাফন করে ফেলবো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।