No truth can cure the sorrow we feel from losing a loved one.
No truth, sincerity, strength, no kindness can cure that sorrow.
All we can do is see it through to the end and learn something from it,
but what we learn will be no help in facing the next sorrow that comes to us without warning.
# Norwegian Wood : Haruki Murakami
_______________________________________
জনকের সঙ্গে আমার বাক্যলাপ নেই, মানে ছিলো না বহুবছর। প্রায় বছর আট। লম্বা সময়.. নয়?
কেন, তার পেছনে কোন বড়সড় কারণ নেই আসলে। সেরকম তারায় তারায় খোদিত কিংবা খোচিত অর্ন্তদ্বন্দের মূল উৎস খুঁজে পাইনি কখনোই।
বছরগুলো উড়ে যায় খাঁচা ভেঙে পালানো পাখির মতো।
আমি টেনেটুনে পাবলিক পরীক্ষাগুলোর গণ্ডি পার হই, পোস্ট- গ্রাজুয়েশান শেষ করি, শিক্ষানবিশি শেষে পাকা চাকুরে হই। ছায়ার মতো আমার পাশে থাকেন মা, সাধ্যের চাইতেও অ-নেকবেশি সর্মথন নিয়ে। স্বজনদের কাছ থেকে চাওয়ার আগে বই উপহার পাই, না চাইতেই ভালবাসা। আর্থিক দৈন্যতার রূপ দেখতে হয়নি আমাকে, তেমন করে কখনোই। শুধু তীব্র মানসিক দৈন্যতা নিয়ে আমার কৈশোরের শেষ সময়টাও পার হয়ে যায়।
মেয়েদের জীবনের প্রথম পুরুষ বাবা বলে হয়তো সেজন্যেই তাবৎ বিপরীতলিঙ্গের ওপর আমার ভরসা রাখার মতো জায়গা তৈরিই হয় না কখনো। বন্ধুদের মধ্যে ফাদার ফিগার খুঁজি অজান্তেই, ঘনিষ্ঠতা বাড়ে গড়পড়তাভাবে সিনিয়রদের সঙ্গেই।
সর্ম্পকহীনতায় আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, একসময় ফাঁকা ঘরের আরামটাও জিভে টের পাই। পৃথিবীর কোথাও আটকায় না কিছুতেই।
বাতিঘর থেকে কিনে আনা বইয়ের রাশে ডুব দিই, সস্তা সাইবারশটে ইতিউতি ছবি তুলি, রাতজেগে শেষ করা ক্যানভাসে শেষ আঁচড় পড়ে।
শুধু ছবি বাঁধিয়ে আনার পর সরাসরি জনকের চোখে পড়বে, এমন কোথাও তা ঝোলানো হয় না।
বয়স যতটুকু বাড়ে, শরীর আর মনের ভারে বৃদ্ধ হয়ে উঠি তারো বেশি। রোজ ঘুমুবার আগে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবি, আগামি সকালটা দেখতে না পেলেই বা কি এমন ক্ষতি হবে? কখনো আবার ফুরফুরে মুডে থ্রি কমরেডস কিংবা বিদায় গুলসারির পাতা মুড়ে বাতি নেভাবার আগে ভাবি কালকের কুয়াশামাখা দিনটায় হয়তো নতুন করে জন্মাবো, নতুন করে পাবো বলে। নাহ, হয় না তাও, পারি না আসলে। ...পেসিমিস্টদের ঈশ্বর থাকে না, তাদের গল্পও এভাবে লেখা যায় না।
পেসিমিস্টদের মন থেকে ঈশ্বর একটা সময় পরে আপনা আপনি মরে যায়!'
একখানা ফরেন ডিগ্রি বাগানোর শখ মেটাতে দেশ ছাড়ার জেদ নিয়েছিলাম বছরখানেক আগে। শখের আর দোষ কি, ভিখারিদের কি ডাকাত হতে ইচ্ছে করে না একদিনও?
এ গলি থেকে ও গলি ছোটাছুটির দু'মুখো চাপ সামলাতে না পেরে চাকরি ছেড়ে দিলাম একসময়। পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে অ্যামবেসি ইন্টারভিউ প্রায় একা হাতে সামলে চট্টগ্রামে ফেরার পর বাকি মোটে তিনটে দিন। সচলসুত্রে পাওয়া ঘনিষ্ঠতম বন্ধু- বোনেরা থলে ভরে দিল উপহারে। কথায় কথায় গোপনে চোখ মুছে নেন মা, খালারা অফিস-সংসারের কাজকে কাঁচকলা দেখিয়ে শপিং সারেন, লিস্ট মিলিয়ে দরকারি-অদরকারি সমস্ত জিনিস গুছিয়ে দেন, নানুমণি শক্ত করে হাত ধরে রাখেন..যেন এখনো আমি সেই ছোট্ট তিথী, ছেড়ে দিলেই টুপ করে হারিয়ে যাব ভিড়ে! বড়মামা হাজির হন চেকবই নিয়ে , এত ডিএসএলআরের শখ তোর, বল কোন মডেলটা কিনবি? আমি হেসে ফেলি।
বাবা সবই দেখেন, থাকেন নির্বিকার।
ঠিক শেষমুহূর্তে বড় অদ্ভুতভাবে আমার পিতার মুখাবয়ব বদলে যায়। সবাইকে প্রবল বিস্মিত করে তিনিও বাকিদের মতোই উচ্ছসিত অশ্রুজলের ঝোলাসমেত এয়ারপোর্টে হাজির হন। আমি খর্বকায় মানুষ, কিশোরি কাজিনেরা প্রায় সবাই অলরেডি উচ্চতায় জেষ্ঠাকে ছাপিয়ে গেছে। তবু সাতবোন চম্পার ফ্যাঁচফ্যাঁচানি থামাতে বেগ পেতে হয় বিস্তর! আমার বাবাও দৌহিত্রীকে জড়িয়ে ধরে আকুল হয়ে উঠেন কান্নায়।
কিছুই আমাকে বিচলিত করে না, পাথরের মতো মুখ নিয়ে তাঁর পা ছুয়ে সালাম করি। তারপর নিজের চাইতেও ভারি দুটো লাগেজ ঠেলে চেক-ইন সারতে ছুটি। বিদায় বলা অনেক ক'টা মুখের কান্নাভেজা হাসি, পেছনে ফেলে আসি...
দুবাইয়ে যাত্রাবিরতির সময় স্ক্রিনে চোখ পড়ে- ঢাকা এখন ২২০৩.৫৯ মাইল দূরে। প্রায় সাড়ে আট হাজার মাইলের দূরত্বে পৌঁছে পয়লা দু'দিন কাটে এক সহৃদয়া বাঙালি তরুণীর বাড়িতে। তারপর নিজের ঘর খুঁজে নেই, সম্বলহীন পরবাসের বরফছুঁয়ে নামা কনকনে ঠাণ্ডায় ফায়ারপ্লেসে টুকরো কাঠ গুঁজে দিয়ে এসে কম্বল মুড়ি দিয়ে খোঁজা আরামদায়ক উষ্ণতার সাময়িক আশ্রয়, শুধুই আমার লালনীল সংসার।
নূতন শহরের অচেনা পথে পথ হারিয়ে ঘুরপাক খেতে হয় প্রথম কিছুদিন। বিশাল ক্যাম্পাসে থই খুঁজে না পেয়ে আধ ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পর ছুট পায়ে ভারি ব্যাকপ্যাক সমেত হাঁপাতে হাঁপাতে ক্লাসে ঢুকি। রবিবারে যাই গ্রোসারি অভিযানে.. ধুর, ইণ্ডিয়ান স্টোরটা কেন যে এতো দূরে! ফেরার পথে হুডির ফাঁক দিয়ে সন্ধ্যার তারাজ্বলা আকাশের দিকে চোখ পড়ে। অপরিচিত পৃথিবীতে এই একটা জিনিসই চেনা মনে হয় কেন যেন....আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়।
চায়ের পানি চাপানোর পর ফ্রিজে উঁকি দিয়ে চোখে পড়ে আধখাওয়া কোকের ক্যান আছে, হাফবাটি নুডুলসও।
যাক,আজ রাতটা না রেঁধেই পার করা যাবে তাহলে।
আম্মুর রান্না মিস করি অনেক। দেখা হয় ল্যাপির পর্দায়, নিজে নিজেই তিনি এখন স্কাইপেতে লগ-ইন করতে পারেন।
বাবার সঙ্গেও কথা হয় এখন। তিনিও হয়তো সাগ্রহেই ছুটির দিনের এই কথোপকথনের জন্য অপেক্ষা করেন।
একদিন মৃত্যুকামনা করেছিলেন যদিও।
প্রায় একজীবনের শূন্যগর্ভ স্মৃতির অপ্রীতিকর অংশটুকুকে ধামাচাপা দিয়ে আমি খুব স্বাভাবিকভাবে গল্প করার চেষ্টা করি। জানাই আজ প্রফেসর হাতে ফ্র্যাকচারসমেত লেকচার দিতে এসে কেমন রসিকতা করেছেন নিজের ব্যান্ডেজ নিয়েই, পরিচয় হয়েছে এক বাঙালি দম্পতির সঙ্গে..পরমাসুন্দরী মেয়েটি বুয়েটিয়ান, তবে আমারই ব্যাচমেট, খিচুড়ির মশলার অনুপাত ঠিকঠাক শিখে গেছি এখন। যত যাই হোক, না খেয়ে থেকো না-- পিতা বলেন। আমি বাধ্য কন্যার মতো ঘাড় নাড়ি..
নিখিলেশ আমি এরকমভাবে বেঁচে আছি এখন।
আমি বেঁচে আছি অন্যদের সময়ে, অন্যদের জীবনে, অন্যদের চোখে জীবনকে জানার অক্ষম চেষ্টায়। জীবন তো উপভোগের, সত্যি করে কেউ বুঝিয়ে দিতে পারে না-- আমার কাছেই এমন বোঝা বলে মনে হয় কেন, এখনো!
শুরু করার সময় আমার শুধু ইচ্ছা করছিল যাচ্ছেতাই লেখার। হয়তো লেখা যায় আরো অনেককিছু, কিন্তু আমার আসলে কিস্যু নেই আর লেখার মতো। আমার প্রশ্নগুলো উত্তরবিহীন।
অর্থ নয়, বিত্ত নয়, স্বচ্ছলতা নয়-- আমি বোধহয় অন্যকিছু চেয়েছিলাম, মন থেকে চাইতে পারিনি ঠিকঠাকমতো।
শুধু খামোখাই কী যেন একটা আটকে থাকে গলার কাছটায়।
ভুলে যাওয়া শূন্যতা, দলা পাকানো বোকা কষ্ট, মুখোশ পাল্টানো বন্ধুরা আর ট্র্যাশক্যানে ফেলে দেওয়া আটবছর আগের একদিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।