i would like to read and write
পিতামাতা মাত্রই সন্তানের কল্যাণে আকুল। একই সঙ্গে সন্তানকে নীতি আদর্শে গড়ে তুলতে চান তারা। নিজেদের ম করে ‘মানুষের মত মানুষ’ হিসাবে গড়ে তোলার অভিপ্রায় সব পিতামাতারই আছে। লেখক আবদুল আউয়াল মিন্টুর বইতে তার প্রমান স্পষ্ট। তাইতো দূরে থেকেও সন্তানকে ‘কাছে রাখা’র মতই পত্রযোগে আদর্শ, ন্যায় নিষ্ঠা ও জীবনে বড় হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন।
এটা যদিও তার ছেলেদের তিনি লিখেছেন, তবু একজন পিতার দৃষ্টি দিয়ে আমরা যদি দেখি তাহলে বলতে হবে, সর্বকালের সব পিতার কথাই বইটিতে তিনি বিধৃত করেছেন। এর আবেদন সময়োপযোগি। এ থেকে শিক্ষা নেয়ার মত বিষয় আছে।
সমাজে কর্মব্যস্ত বাবারা সাধারণত সন্তানের বাড়ন্ত সময়গুলো টের পান না। কিংবা মায়েদের ওপর ওদের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
সেদিক থেকে আবদুল আউয়াল মিন্টু ব্যতিক্রম। শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি একজন পিতা হিসাবে সঠিক দায়িত্ব পালনে বিরত থাকেননি। এখানেই তার স্বার্থকতা। পিতা হিসাবে তিনি সফল। বইয়ের চিঠিগুলোর মূল প্রতিপাদ্য হিসাবে বইটির ভূমিকায় তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘তাদের মনে কৌতুহল জাগিয়ে তোলা।
কেন মানুষের জ্ঞানার্জন করা উচিত। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে মানুষ কিভাবে নিজেদেরকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে পারে। কেন ও কেমন করে তা করা যায় ইত্যাদি।
উঠতি বয়সের ছেলেরা যখন সঙ্গের কারনে নানা বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে ওঠে, তখনি জ্ঞানার্জনের জগতে তাকে কৌতুহলী করে তোলার এই প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয়। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতাও তৈরি করা যায় চিঠিগুলোর মাধ্যমে।
বইয়ে উদ্বৃত চিঠিগুলো পড়ে মনে হবে কি নেই এতে? কিন্তুু সব কিছুই আছে। আবেগ, অনুভূতি থেকে মানবিক গুণাবলী সব কিছুরই সাবলীল বিবরণ রয়েছে। খাবার টেবিলের আচরণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সংবাদপত্র, সংবাদের গুণগত মান, বয়সন্ধির বছর সব কিছুরই বর্ণনা আছে চিঠিগুলোতে। গাড়ি চালানোর জন্যও রয়েছে ২৯টি পরামর্শ। খাবার টেবিলে তরুনী বান্ধবীকে কোন পাশে বসাতে হয় সেটাও রয়েছে।
আছে বিভিন্ন দার্শনিকের বক্তব্য। বইয়ের শুরুতে আছে প্লেটোর রিপাবলিকান থেকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বৃতি। চিঠিগুলো পড়লে বোঝা যাবে ‘জীবন হারজিতের জুয়াখেলা নয়’।
সাতটি ভাগে বিভক্ত বইটিতে প্রথম ভাগেই রয়েছে মাতৃত্ব-পিতৃত্ব নিয়ে আলোচনা। পরিবার, সমাজ, শৈশব-কৈশোরের নানা বিষয় ছাড়াও সন্তানকে চিঠি লেখার গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যাবে প্রথম ভাগে।
দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে উচ্চ শিক্ষার্থে ছেলের বিদেশ যাওয়ায় পিতার অনুভূতি ও শিক্ষা প্রশ্নে পরামর্শ। তৃতীয়ভাগে শিক্ষা, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন, ভ্রমণ, বিদেশে একাকী জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ় প্রত্যয় প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। চতুর্থভাগে মানবিক গুনাবলী, পঞ্চম ভাগে জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, ষষ্ঠ ভাগে ডিগ্রী অর্জন ও চিন্তার মানস তৈরি এবং শেষ খন্ডে কয়েকটি প্রবন্ধ রয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের নানা প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে লিখিত চিঠিগুলো সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক।
বইটির মুখবন্ধে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেছেন, ‘এই পত্রগুচ্ছের মূল সূর কোন নিছক নীতিকথামূলক নয়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ধ্যানধারণা ও বংশ পরস্পরায় প্রাপ্ত মূল্যবোধের আলোকে প্রবাসী পুত্রকে পিতৃসুলভ পরামর্শ দান।
এই প্রক্রিয়ায় পরামর্শক পিতার নিজের পরিচয় স্পষ্ট হয়েছে। পত্রগুচ্ছের পাঠকের কাছে বইটির মূল্য সেখানেই। ’
লেখক সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘.... এর মধ্য দিয়ে আমরা একজন বহুদর্শী, সমাজ সচেতন, জীবনের সকল আনন্দের রসাস্বাদনে এবং জীবনকে তার পরিপূর্ণতায় উপভোগে বিশ্বাসী, ধর্মভীরু হয়েও বিজ্ঞানমনস্ক, ব্যক্তির ও মানুষের সামুহিক প্রগতির প্রতি আস্থাবান, একজন প্রকৃত অর্থেই আধুনিক মানসতার ব্যক্তির পরিচয় লাভ করলাম। ’ তার এই বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় কেবল সফল ব্যবসায়ী নন, একজন লেখক হিসাবেও আবদুল আউয়াল মিন্টু সফল।
‘সন্তানকে পিতার কথামালা’ বইটি প্রকাশ করেছে অনুপম প্রকাশনী।
কাইয়ুম চৌধুরীর আাঁকা প্রচ্ছদে দৃষ্টিনন্দন বইটির মূল্য ৬শ’ টাকা। বইটি তাদের জন্য বেশি প্রয়োজনীয় যারা অপর্যাপ্ততার অচলায়তন পেরিয়ে সাফল্য লাভ করতে চায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।