আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামকরনের স্বার্থকতা

গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র! সম্ভবত ক্লাস এইটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের‘ছুটি’ গল্পটা আমাদের সিলেবাসে ছিল। ঐ সময়ের কমন একটা প্রশ্ন ছিল ‘নামকরনেরস্বার্থকতা’। যেমন, “অমুক গল্পের নামকরনের স্বার্থকতা আলোচনা কর। ” তো, একবার ক্লাসে লিখতে দিল ‘ছুটি’ গল্পটারনামকরনের স্বার্থকতা। আমি বরাবরই সৃজনশীল মানসিকতার – তাই ভাবলাম যেহেতু নামকরনের স্বার্থকতা আলোচনা করতে বলেছে,সেহেতু নামকরন স্বার্থক হয়েছে কিনা নিজের বিচার ও বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে একটাস্বিদ্ধান্তে আসা এবং সেই অনুযায়ী আলোচনা করা আপাতত কর্তব্য।

এমন তো বলেনি যেনামকরনটি স্বার্থক হয়েছে – তাহলে আর এ বিষয়ে আলোচনার কী থাকলো? অর্থাৎ নামকরনটাস্বার্থক না-ও হতে পারে। তো, আমি লিখলামঃ “ছুটি গল্পটির নামকরন মোটেও স্বার্থক হয়নি। ছুটি বলতে আমরা একটা আনন্দের ঘটনা বুঝি। যেমন ক্লাস ছুটি হওয়া মানে খেলাধুলার সময়শুরু হওয়া। বার্ষিক ছুটি মানে সকল কাজ ফেলে আনন্দ করা।

অর্থাৎ ছুটি সব দিক দিয়েইএকটি অত্যন্ত কাম্য এবং আনন্দের একটি বিষয়। আবার এই সকল ছুটির-ও একটা শেষ থাকে,যেমন প্রতিদিনের স্কুল ছুটির পর আবার পরেরদিন স্কুলে আসতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে স্কুল থেকে টি,সি, খাওয়ারপর-ও এই খেলাধুলার অবকাশ হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু তখন তা আর আনন্দের থাকে না,আমাদের কাম্য-ও হয় না। ‘ছুটি’ গল্পটির প্রধান চরিত্র ফটিকের কাম্য ছিল তার এইকারাজীবন থেকে মুক্তি, কিন্তু পৃথিবী থেকে বিদায় নয়। এই গল্পের শেষাংশে ফটিক পৃথিবীথেকে বিদায় নেয় – চলে যায় না ফেরার দেশে।

সুতরাং, এটিকে তার ছুটি হিসেবে বিবেচনাকরা অনুচিত। অতএব, গল্পটির নাম ‘ছুটি’ না রেখে ‘ফটিকেরমহাপ্রয়ান’ অথবা ‘ফটিকের পরাজয়’ রাখলে বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিসঙ্গত হতো। ” …… লেখা শেষ করে বসে আছি। বাংলা স্যার সাধারনতএইসব ক্লাস ওয়ার্ক চেক করতেন না। সেদিন তার কি মনে হোল কে জানে, তিনি ক্লাসে ঘুরেঘুরে সবার লেখা পড়া শুরু করলেন।

এক পর্যায়ে আমার লেখা টা পড়ে ফেললেন। কেন যেন তারমনে হোল তাঁকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অপমান করা হয়েছে। তিনি আমার কান ধরে টানতে টানতেক্লাসের সামনে নিয়ে গেলেন। তারপরের ঘটনা বলাই বাহুল্য! আমিও বুঝলাম, সৃজনশীলতা সবার জন্য না। ((আমাদের মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমার সব সময়ই ব্যপক আপত্তি ছিল।

বিশেষ করে ‘বাংলা সাহিত্য’ (বাংলা ১ম পত্র) বিষয়টিতে ছোট বেলায় আমাদের ছড়া মুখস্তকরে হুবহু ডেলিভারি দেয়া লাগত। কেন রে ভাই? কয়েকটা লাইন ছন্দ দিয়ে মনে রাখাটা কীএমন বাহাদুরির ব্যাপার? বরঞ্চ বাংলা সাহিত্য শেখার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ সাহিত্যরচনা করতে শেখা। সেক্ষেত্রে হয়ত ছড়া মুখস্ত করাটাকে উৎসাহিত না করে ছড়া রচনা করাকেউৎসাহিত করা উচিৎ। এতে হয়ত সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটতো। এটা গল্প বা উপন্যাস বাসাহিত্যের অন্যান্য ধারার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ।

)) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.