আমেরিকা
১৯ শতাব্দীতে ব্রিটিশ অধিবাসী প্রথম উত্তর আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইন ডের ধারণা নিয়ে আসে। ১৮৪৭ সালের দিকে ভ্যালেন্টাইন ডে ছড়িয়ে যায় পুরো আমেরিকায়। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে গিফট কার্ড আদান-প্রদানের রীতি এলো। সে সময় কার্ড এবং গোলাপ ছিল ভ্যালেন্টাইনসের মূল উপহার। ১৯৮০ সালের দিকে ডায়মন্ড কোম্পানিগুলো ভ্যালেন্টাইন ডে প্রমোট করা শুরু করে।
সেই থেকে জুয়েলারি চলে আসে প্রচলিত গিফটের তালিকায়। 'ভালোবাসা' সবচেয়ে আদিম ইমোশন হলেও ভালোবাসা দিবসটিকে আমেরিকায় চরম কমার্শিয়ালাইজড করা হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে বেশি কার্ড ও উপহার বিক্রি হচ্ছে। এ দিনকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা তাই নানা আয়োজন করেন। মূল লক্ষ্য ক্রেতা।
এদিন মূলত কার্ড, চকোলেট, ফুল বিনিময় হয়। দেশটিতে নানা জায়গায় ভ্যালেন্টাইন ডিনার, ড্যান্স পার্টির ব্যবস্থা থাকে। অনেকে বাসায় প্রাইভেট পার্টি থ্রো করে। শিশুরাও থাকে অনেক ব্যস্ত। স্কুলগুলোতে আয়োজিত হয় গান, নাচ ও নাটক।
কানাডা
কানাডায় ভালোবাসার বিশেষ দিনটি বেশ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়। সারা দেশে বল ড্যান্স এবং পার্টি থাকে। এদিন স্বামী-স্ত্রীকে; স্ত্রী-স্বামীকে; প্রিয়জন-প্রিয়জনকে জানায় ভালোবাসার কথা। গোলাপের প্রাধান্য এখানে বেশি। এরপর চকোলেট, কার্ড, ক্যান্ডি তো আছেই।
শিশুরা বন্ধুদের সঙ্গে কার্ড বিনিময় করে। নিজের হাতে উপহার বানিয়ে শিক্ষক এবং বাবা-মাকে দেয়। দিনটিকে উদযাপন করতে স্কুলের সিনিয়র সেকশনে থাকে ড্যান্স পার্টি।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় অনেকটা একই ধাঁচে উপহারের আদান-প্রদান হয়। তবে এখানে এসএমএস, ইমেইল মিডিয়া ব্যাপক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ছেলেরা ভালোবাসার ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি উদার। এদিন উপলক্ষেও ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি উপহার কেনে।
ব্রিটেন
ভালোবাসা দিবস ভ্যালেন্টাইন ডে মিথ-এর জন্ম এই ব্রিটেনে চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীতে। তাই ব্রিটেনের উল্লাস একটু বেশিই থাকার কথা। বলা হয়ে থাকে, ভ্যালেন্টাইন ডেতে ব্রিটেন এবং ইতালির অবিবাহিত মেয়েরা সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠত।
তারা বিশ্বাস করত, সূর্যোদয়ের পর প্রথম যে পুরুষকে তারা দেখবে, সে অথবা তার মতোই কোনো পুরুষ এক বছরের মধ্যে তাদের জীবনসঙ্গী হবে। এ ছাড়া অবিবাহিত মেয়েরা কাগজে পছন্দের ছেলের নাম লিখত। সেই কাগজ মাটির বলে পেঁচিয়ে পানিতে ফেলত। যে নামের কাগজ সবার আগে ভেসে উঠত, ধারণা করা হতো তার সঙ্গেই বিয়ে হবে মেয়েটির।
জাপান
মেয়েরা ভ্যালেন্টাইন ডেতে চকোলেট উপহার দিতে ভীষণ আগ্রহী থাকে।
জাপানে দুই ধরনের চকোলেট রয়েছে। 'গিরি-চকো' কেনা হয় বন্ধু, বস, কলিগ এবং ঘনিষ্ঠ ছেলেবন্ধুর জন্য। এ ধরনের চকোলেটের সঙ্গে কোনো রোমান্টিক সম্পৃক্ততা নেই। 'হন মেই' চকোলেট হলো স্পেশাল। এই চকোলেট এঙ্চেঞ্জ হয় স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে।
জাপানি মেয়েরা মনে করে, 'হন মেই' কিনে উপহার দিলে ভালোবাসা প্রকাশ পায় না। তাই তারা নিজের হাতে 'হন মেই' তৈরি করে প্রিয়জনকে উপহার দেয়। জরিপে দেখা যায়, পুরো বছরে যত চকোলেট বিক্রি হয়, তার অর্ধেক হয় ভ্যালেন্টাইন ডেতে। জাপানে ১৪ মার্চ পালিত হয় আরেক ভালোবাসা দিবস 'হোয়াইট ডে'। এদিন ছেলেরা তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে।
১৪ ফেব্রুয়ারি যারা তাদের উপহার দিয়েছিল, তাদের পাল্টা উপহার দেওয়ার পালা এবার। এদিন সাদা রঙের চকোলেট দেওয়া হয়ে থাকে। দুটো দিবসে সাধারণত ২০ বছরের কম বয়সীদের উৎসাহ থাকে বেশি।
ফ্রান্স
ব্রিটেনের মতো ফ্রান্সের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ভ্যালেন্টাইন ডের জন্মকথা। তাই এখানেও উৎসাহ থাকে অনেক।
ভালোবাসা দিবসে কার্ড উপহারের প্রথা শুরু হয়েছে ফ্রান্স থেকে। চার্লস নামের এক ব্যক্তি প্রথম ভ্যালেন্টাইন কার্ড লেখেন। অভিজাত কার্ডে উপহার রীতি রয়েছে এখানে।
ইতালি
ইতালিতে ভ্যালেন্টাইন ডে বসন্ত উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এক সময় খোলা আকাশের নিচে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হতো।
যুবক-যুবতীরা গান, আবৃত্তি শুনত। এরপর ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে বাগানে ঘুরে বেড়াত তারা। কিন্তু কয়েক শতাব্দী ধরে এই ট্রেন্ড হারিয়ে গেছে ইতালিতে। এখন ইতালিতে আমেরিকার মতো ছুটির দিন থাকে। অনেকটা হ্যালোইন আর মাদারস ডের মতো।
ভালোবাসা আদান-প্রদান তো চলেই। উপহারের তালিকায় থাকে চকোলেট, পারফিউম, গোলাপ, ডায়মন্ড।
ভারত
এদিন আবেগের আদান-প্রদান করতে প্রেমিকরা মূলত ভিড় জমায় রেস্টুরেন্ট, ডিসকো, সিনেপ্লেঙ্, পাব অথবা পিৎজা পার্লারে। শুধু প্রেমিক নয় বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধুদেরও ভালোবাসা জানায়।
চীন
চীনাদের নিজ সংস্কৃতিতে ভালোবাসার জন্য আলাদা একটি দিন আছে।
চায়নিজ ক্যালেন্ডারে সপ্তম চান্দ্র মাসের সপ্তম দিনে থাকে এই বিশেষ দিনটি। দিনটিকে বলা হয় কি-জি। অথবা 'দ্য নাইট অব সেভেনস'। গতানুগতিক ভ্যালেন্টাইন ডে থেকে দিনটি অনেক আলাদা। নির্দিষ্ট রিচুয়াল রয়েছে দিনটিকে কেন্দ্র করে।
এ ছাড়া ফুল, চকোলেট, কার্ড আদান-প্রদানও চলে।
দক্ষিণ আফ্রিকা
সাধারণত রোমান্টিক ডেটে যায় কাপলরা, মনের কথা জানায় বিশেষ দিনটিতে। এ ছাড়াও কোনো কোনো জায়গায় পালিত হয় 'লিউপারক্যালিয়া' নামে রোমান ফেস্টিভ্যাল। এখানে যার যার পোশাকে তাদের প্রেমিক-প্রেমিকার নাম প্রিন্ট করা থাকে। এ ছাড়াও আয়োজন থাকে পাব ও রেস্টুরেন্টে।
ড্যান্স পার্টি তো আছেই। তবে লাঙ্ারিয়াস রিসোর্টগুলোতে প্রতি বছরই থাকে চমক। তাই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রোমান্টিক জুটিরা এখানে আসে দিনটি উপভোগ করতে।
রকমারি ডেস্ক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।