“একটি তিন বছরের শিশু এতই শুকনো যে, মনে হল সে যেন মায়ের পেটে থাকাকালীন অবস্থায় ফিরে গেছে। আমি তার হাতটা ধরলাম। মনে হল তার চামড়া আমার আঙ্গুলে মোমের মত লেগে গেছে। এই দুর্ভিক্ষের আর একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান এই যে, বিশ্বস্বাস্থ্ সংস্থার মতে ৫০ লাখ মহিলা আজ নগ্ন দেহ। পরিধেয় বস্ত্র বিক্রি করে তারা চাল কিনে খেয়েছে।
”
“সন্ধা ঘনিয়ে আসছে এবং গাড়ী আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম-এর লরীর পিছনে পিছনে চলেছে। এই সমিতি ঢাকার রাস্তা থেকে দুর্ভিক্ষের শেষ শিকারটিকে কুড়িয়ে তুলে নেয়। সমিতির ডাইরেক্টর ডাঃ আব্দুল ওয়াহিদ জানালেন,“স্বাভাবিক সময়ে আমরা হয়ত কয়েক জন ভিখারীর মৃতদেহ কুড়িয়ে থাকি। কিন্তু এখন মাসে অন্ততঃ ৬০০ লাশ কুড়াচ্ছি- সবই অনাহার জনিত মৃত্যু। ”
উপরের এই প্যারা দুটি প্রখ্যাত তথ্য-অনুসন্ধানী অষ্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক জন পিলজারের লিখা।
লেখাটি ছাপা হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর লন্ডনের ডেইলী মিরর পত্রিকায়।
তার এই কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছিল ১০ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে যখন কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলাট ডাটিয়া পাড়ার এক জেলেপাড়ার বস্ত্রহীন “বাসন্তি” মাছ ধরার জাল পড়ে লজ্জা ঢাকা ছবি ছাপা হয়েছিল।
১৯৭৪ সাল, বাংলাদেশের ইতিহাসে দুঃসপ্নময় একটা বছর, এই বছরই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো। আগস্ট মাসে শুরু হল বন্যা, দেশের দুর্ভিক্ষ চরম আকার ধারণ করে,১৯৭৪ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বরের পত্রিকার শিরোনামে আসতে থাকে বিভিন্ন জায়গায় মানুষগুলোর মৃত্যুর খবর। সে সময় সারা দেশের অবস্থা কেমন ছিল আজ এত বছর পরে সভ্য সমাজে এসে আমরা হয়ত এগুলো অনুভব করতে পারবো না।
একটি শিশু, রিলিফের বস্তার দিকে তাকিয়ে আছে, সে যে তার হাড্ডিসার দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটাই একটা আশ্চর্য।
১৯৭৪ সালের, সকালবেলা। ফুটপাথ থেকে লাশ কুড়িয়ে নিচ্ছে আঞ্জুমান ই মফিদুল ইসলামের লোকেরা। ভিকটিমের নাম হাসনা, বয়স এগারো বছর, ফুটপাথে ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েকটা ঘন্টা আগে মৃত্যু হয়েছে। কারণ অনাহার ও অপুষ্টিজনিত দুর্বলতা।
হাসনার বৃদ্ধা মা নিস্ব, বাকরুদ্ধ তাকিয়ে রয় হাসনার চলে যাওয়া পথের দিকে ।
এরই মাঝে আবার আঞ্জুমান ই মফিদুল ইসলামের ঘাড়ি এসে হাজির লাশ বোঝাই করে ।
স্ট্রেচারে লাশের স্তূপ । নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সৎকার করতে ।
আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম প্রতিদিন শুধু ঢাকা শহর থেকেই তিরিশ থেকে চল্লিশটি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করছিল।
সে কাহিনী ও ছবি আছে সেই সময়কার দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর পাতায় পাতায়। ঢাকায় প্রতি ঘন্টায় ৩-৪ জন লোক মারা যেতে থাকে অনাহারে। এর এক পর্যায়ে আঞ্জুমানের লাশ দাফনের কথা খবরের কাগজে প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়া হয় সরকারি আদেশে।
প্রতিদিনের সংবাদপত্রে ছাপা হয় ক্ষুধাতুর মানুষের ছবি। অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, মাথা গোজাঁর ঠাই নেই।
কোটি কোটি লোক হয় ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুহারা। ৩রা আগষ্ট ইত্তেফাকে ছাপা হয় এসব ছবি। দৈনিক বাংলায় খবর বের হয়, বমি খাচ্ছে মানুষ। [img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/137271/small/?token_id=a03159b0d47c0e73092a2ccab478483e
'কিছু কিছু জায়গায় মানুষ ঘাস-পাতা খেয়ে আছে। এমন কেন হবে? 'এই প্রশ্নের উত্তরে মুজিব বলেন 'দেখুন কিছু কিছু জায়গায় এরকম হতে পারে।
তবে সবজায়গায় আমাদের লঙ্গরখানা আছে।
মৃতের সংখ্যার ব্যাপারে জানায় 'আমার এসব তথ্য চেপে রাখার চেষ্টা করিনি। আমরা পার্লামেন্টে বলেছি প্রায় সাতাশ হাজারের মতো মানুষ না খেয়ে ও অসুখে মারা গেছে। ' পিলগার বলেন 'আমি কিন্তু দেখেছি সরকারী লঙ্গরখানাগুলোতে থেকে মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না' 'এটা সত্যি নয়,' মুজিবের উত্তর। 'আপনি যেরকম বললেন সেটা সত্যি হলে কয়েক মিলিয়ন লোক মারা যেত।
'
অন্য আরেক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ মজিবুর রহমান
শেখ মুজিবকে প্রশ্ন করা হলো, খাদ্যশস্যের অভাবের ফলে দেশে মৃত্যুর হার ভয়াবহ হতে পারে কিনা, শেখ মুজিব জবাব দিলেন, ‘এমন কোনো আশঙ্কা নেই। ’ প্রশ্ন করা হলো, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পার্লামেন্টে বিরোধী দল বলে যে, ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। ’ তিনি জবাব দিলেন, ‘তারা মিথ্যা বলেন। ’ তাঁকে বলা হলো, ‘ঢাকার বিদেশি মহলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি বলে উল্লেখ করেন। ’ শেখ মুজিব জবাব দিলেন, ‘তারা মিথ্যা বলেন।
’ প্রশ্ন করা হলো, দুর্নীতির কথা কি সত্য নয়? ভুখাদের জন্য প্রেরিত খাদ্য কি কালোবাজারে বিক্রি হয় না...? শেখ মুজিব বললেন, ‘না। এর কোনোটাই সত্য নয়। ’ (এন্টারপ্রাইজ, রিভারসাইড, ক্যালিফোর্নিয়া, ২৯/০১/৭৫)।
অবশেষে পত্রিকাটি তাদের মন্তব্যে লিখে ‘যেসব সমস্যা তার দেশকে বিপর্যস্ত করছে সে সবের কোনো জবাব না থাকায় শেখের একমাত্র জবাব হচ্ছে তার নিজের একচ্ছত্র ক্ষমতা বৃদ্ধি। জনসাধারণের জন্য খাদ্য না হোক, তার অহমিকার খোরাক চাই।
’ (এন্টারপ্রাইজ, রিভারসাইড, ক্যালিফোর্নিয়া, ২৯/০১/৭৫)।
১৯৭৪ সালের দূর্ভিক্ষের কারন কি ?
নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন তার Poverty and Famines বইয়ে এই বিষয়ে লিখে
" সেসময়ে দুস্থ মানুষকে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানোর জন্য দেশে প্রায় ৬ হাজার লঙ্গরখানা খুলতে হয়েছিল। সেখানে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও রাজনীতিবিদদের লুটপাটে সাধারণ মানুষের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। ড. অমর্ত্য সেন লিখেছেন, খাদ্য আমদানীর উপর নির্ভরশীল সরকার দেশে তীব্র দুর্ভিক্ষ হওয়া সত্বেও খাদ্য শস্য আমদানীতে সাফল্য দেখাতে পারেনি।
১৯৭৩ সালের তুলনায় ১৯৭৪ সালে কম খাদ্যশস্য আমদানী হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের জন্য দরকারি দু’টো মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে খাদ্য আমদানীতে ব্যাপক ঘাটতি ঘটেছিল। দেখা যায়, ১৯৭৩ সালে যেখানে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খাদ্য শস্য আমদানী করা হয়েছিল যথাক্রমে ২৬৩ ও ২৮৭ মেট্রিক টন ১৯৭৪ সালের একইসময়ে সেই আমদানী কমে আসে ২৯ ও ৭৬ মেট্রিক টনে। এদিকে, তখন কিউবাতে পাট রপ্তানী করার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে খাদ্য সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র বারংবার পাট রপ্তানী বন্ধে চাপ প্রয়োগ করলেও শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার সেই চাপকে উপেক্ষা করেছিল।
অনেকেই মনে করেন সেটি ছিল ভুল বাণিজ্য নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি"
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পোভার্টি এন্ড ফেমিনস
খাদ্যশস্যের সূষম বন্টনের অভাব এবং দূর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, পার্শ্ববর্তী দেশে চোরাচালানী ইত্যাদি ছিল দূর্ভিক্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
দুর্নীতিবাজদের খপ্পরে দেশবাসী আতি অসহায়। বঙ্গবন্ধু আফসোস করে বলেছিলেন “সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছিচোরের খনি”, তিনি আরও বলেছিলেন ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর জন্য আট কোটি কম্বল’, আমার কম্বল কোথায় ? (স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবাংলাদেশের মানুষের জন্য বিভিন্ন দেশ ত্রাণ হিসাবে ওষুধ ও খাদ্য দ্রব্যের পাশাপাশি কম্বলও দিয়েছিল। তিনি এই ত্রাণ এর কম্বল প্রসঙ্গেইবলেছিলেন। )
তাজউদ্দীন ছিলেন শেখ মুজিবের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু।
দুর্ভিক্ষের ওইদিনগুলিতে ব্যাক্তিগতভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রী কে বহুবার অব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে সতর্ক করে সংকট উত্তরণের পথে ব্যাপক পরামর্শ দিয়েছেন। মন্ত্রীসভা বৈঠকেও তিনি কয়েকবার তার মতামত তুলে ধরেন।
এতে কাজ না হওয়ায় এই সৎ ও মানবতাবাদী রাজনীতিবিদ বিদেশ সফর শেষে ঢাকায় ফিরে '৭৪ -এর ১৩ অক্টোবর বিমানবন্দরে প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্ভিক্ষের সত্যতা স্বীকার করে বলেছিলেন,
" বিদেশে বাংলাদেশের যে ইমেজ দেখে এসেছু তাতে আমার মন ভেঙে গেছে। বাইরে গেলে বাংলাদেশকে চেনা যায়। পত্রিকায় লেখা হয় মিঃ ফোর্ড বঙ্গবন্ধুর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
এতে দেশের ইমেজ নষ্ট হয়। ব্যক্তি বড় জিনিস নয়। জনগণ যদি মনে করে আমি যোগ্য নই, তাহলে গদীতে থাকার কোন অধিকারই আমার নেই। মানুষকে বাঁচাতে হবে। ভিক্ষের চাল দিয়ে পেট ভরে না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব দেশেই হয়। কিন্তু এমন অবস্থা হয় না। এ অবস্থার জন্য আমি আপনি দায়ী। পয়সা আনাটা বড় জিনিস নয়। "
প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে ১৯৭৪ সালের ২৬ শে অক্টোবর সকাল ১১ টায় শেখ মুজিব তার অর্থমন্ত্রীকে লিখলেন, --
" প্রিয় তাজউদ্দীন আহম্মদ,
বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আপনার মন্ত্রীপদে অধিষ্ঠিত থাকা সমচিন নয় বলে আমি মনে করি।
তাই আপনাকে আমি মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এই সাথে আপনার স্বাক্ষরের জন্য পদত্যাগপত্র পাঠানো হল।
ইতি
শেখ মুজিবুর রহমান "
ওইদিন বেলা ১২ টা ২২ মিনিটে তাজউদ্দীন আহম্মদ প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন। শেখ মুজিবের নির্দেশে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া তাজউদ্দীন আহম্মদ বিকেল বেলা সাংবাদিকদের বলেছিলেন,
" আজকের দিনটি আমার কাছে খুবই পবিত্র। "
ক্ষমতায় থেকেও দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে না পারার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েই হয়তো তার সেই দিনটিকে 'অত্যন্ত পবিত্র ' বলে মনে হয়েছে।
কিংবা সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থার অবস্থানে তাকে আর শরিক হতে হবে না ভেবেই তার সেই উপলব্ধি তা বলা কঠিন।
শুধু বলা যায় মন্ত্রীত্ব হারানোর দিনটি তার কাছে ' অত্যন্ত পবিত্র '।
কারন ২
=====
১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর প্রকাশিত লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় জেকুইস লেসলীর কলাম অনুসারেঃ “একজন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,আর অসহায় দুষ্টিতে তার মরণ-যন্ত্রণাকাতর চর্মসার শিশুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হতে চায় না, তাই কথাটি বোঝাবার জন্য জোর দিয়ে মাথা নেড়ে একজন ইউরোপীয়ান বললেন, সকালে তিনি অফিসে যাচ্ছিলেন,এমন সময় এক ভিখারি এসে হাজির। কোলে তার মৃত শিশু।
বহু বিদেশী পর্যবেক্ষক মনে করেন বর্তমান দুর্ভিক্ষের জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। “দুর্ভিক্ষ বন্যার ফল ততটা নয়,যতটা মজুতদারী চোরাচালানের ফল”-বললেন স্থানীয় একজন অর্থনীতিবিদ। .. প্রতি বছর যে চাউল চোরাচালন হয়ে (ভারতে) যায় তার পরিমাণ ১০ লাখ টন। ”
এইসব চোরাচালানকৃত পণ্যের মধ্যে ছিল ধান, চাল, গম, পাট, যুদ্ধাস্ত্র, ঔষধ, মাছ, গরু, বনজ সম্পদ ইত্যাদি। একটা নবগঠিত স্বাধীন দেশের সম্পদ ভারতে পাচার করা হতো কার স্বার্থে? কারা এসবের মদদদাতা ছিল? জনতার মুখপত্র, ১ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত সংবাদ হিসেবে সেই সময়ে ভারতে পাচার হয়ে যায় প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার পন্য।
মেজর অব: মো: রফিকুল ইসলাম বীরোত্তমের “শাসনের ১৩৩৮ রজনী” পৃ: ১১৯-১২৬ তে উনি লিখেছেন, “দীর্ঘ ৩ টি বছর আমরা এমনটি প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের চোখের সামনে চাল-পাট পাচার হয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে, আর বাংলার অসহায় মানুষ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে। ”
২৫শে অক্টোবর ঢাকার সংবাদপত্রে বের হয় ট্রাক বোঝাই ধানচাল ভারতে পাচাঁর হচ্ছে। এসময়ে ২৫শে অক্টোবর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি জনাব কামরুজ্জামান দাবি করেন, “দেশের প্রচলিত আইনে চোরাচালানীদের দমন করা হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে সংসদে চোরাচালানীদের গুলি করে হত্যা করার বিধান পাশ হয়।
কিন্তু কাউকে কোন দিন ঐ বিধানে হত্যা করা হয়নি। ”
কারন ৩:
======
৭১-৭২ এ যে বিপুল পরিমান সাহায্য এসেছিল তার বেশিরভাগ লোপাট হয়ে যাওয়াতে আবারো বাংলাদেশে সাহায্য পাঠাতে প্রবল অনীহা দেখা দেয় দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে। লুটের সিংহভাগ হয়েছে রেডক্রসের মাধ্যমে। ৭৪ সালেই জরুরী অবস্থা চালু হয়। সে যাইহোক অনাহারে হু হু করে মানুষ মরছিল।
.। .। ইত্যাদি .। ।
তৎকালীন সরকারের গৃহীত পদ্ধক্ষেপ ঃ
২৩শে সেপ্টেম্বর সারাদেশে ৪৩০০ লঙ্গরখানা খোলার কথা ঘোষণা করা হয়।
সে সমস্ত লঙ্গরখানার ইতিহাস আর এক করুণ কেলেঙ্কারীর ইতিহাস। নওগাঁর আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য ২৪শে সেপ্টেম্বর এক বিবৃতি দিয়ে জানান যে, সারা জেলার মানুষ গত ৩-৪ দিন ধরে না খেয়ে আছে। [img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/137279/small/?token_id=a03159b0d47c0e73092a2ccab478483
এরই মাঝে মার্চ ১৭, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের ৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৫৫ পাউন্ড ওজনের কেক কাটেন শেখ মুজিব নিজেই!!!
৬ই অক্টেবর ইত্তেফাক খবর দেয় যে, ২১ লাখ টাকার বিদেশী মদ ও সিগারেট আমদানি করা হয়েছে সরকারি টাকায়। ঐ দিনই খাদ্যমন্ত্রী বললেন, “তখন পর্যন্ত অনাহারে কতলোক মরেছে সরকারের তা জানা নেই।
যখন হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মরছে তখন শেখ কামাল এবং শেখ জামালের বিয়ে হলো সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই বিয়ে হয়েছিল নতুন গণভবনে। বিশাল আয়োজন। অগুনিত অতিথির ভীড়। মনে হচ্ছিল পুরো ঢাকা শহরটাই এসে উপস্থিত হয়েছে বিয়েতে। বর্নাঢ্য জাকজমক পরিবেশে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
বিয়ের মন্ডপে কামাল-জামাল দুই ভাই সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে বর সেজে বসেছিল। বিয়ের পরদিন প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকায় বড় করে ছাপানো হল প্রধানমন্ত্রীর দুই ছেলের সোনার মুকুট মাথায় পড়ে বিয়ের খবর। একই পাতায় ছাপানো হয়েছিল দুর্ভিক্ষপীড়িত, অনাহারক্লিষ্ট, হাড্ডিসার মুমুর্ষ মানুষ নামি কঙ্কালের ছবি এবং দুর্ভিক্ষের খবর
পরিশেষে John Pilger Bangladesh, An Unfashionable Tragedy কিছু কথা দিয়ে শেষ করলাম
The truth is Bangladesh and Britain have been caught in the same blizzard of inflation, energy crisis and shortage. With the one difference -- when prices go up in Britain no one dies but in Bangladesh thousands died. This is no longer a question of pity and charity, to hell with that. Their struggle to survive is our struggle, beat it in Bangladesh and you will beat it in Britain. Its really a simple choice that has little to do with brotherhood of man. The alternative is that we are all expendable. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।