গৃহশ্রমে মজুরী হয়না বলে মেয়েগুলি শুধু
৬০-এর দশক, অস্থির এক প্রেক্ষাপটের সময়কাল। শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সমস্ত অবয়বেই এ অস্থিরতা স্পর্শ করেছিল। আর এ অস্থিরতা থেকেই কাউন্টার কালচারের উদ্ভব। কাউন্টার কালচার শিল্প জগতের প্রত্যেকটি ধারাকেই সে সময় স্পর্শ করে। এ কাউন্টার কালচারই পরবর্তীতে পরিণত হয় বিশাল এক আন্দোলন হিসেবে।
সংস্কৃতির এ ধারা উদ্ভবের ক্ষেত্রে ওই সময় রাজনৈতিক এবং অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় প্রধান নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। মূলত, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অন্তসারশূন্যতা থেকে তার উৎপত্তি। যদিও সংস্কৃতির এ আন্দোলন সুস্পষ্ট কোন অবয়ব শেষ পর্যন্ত লাভ করতে পারেনি। ১৯৬০ থেকে শুরু হয়ে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এ আন্দোলন পরিচালিত হতে দেখা যায়। সমাজ জীবনের প্রত্যেকটি ধারাকেই কাউন্টার কালচার যুক্ত করেছিল।
সমস্ত চিন্তা প্রক্রিয়া সূত্রবদ্ধ হয়ে একটা নির্দিষ্ট দার্শনিক ডিসকোর্সে পরিণত হতে ব্যর্থ হওয়ায় এ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত অবস্থায় আর পৌঁছায়নি।
কাউন্টার কালচারের পটভূমি
প্রথমেই বলা হয়েছে তৎকালীন চলমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থার ব্যর্থতা থেকে কাউন্টার কালচারের আগমন। স্নায়ু যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এসপিওনাজ (গোয়েন্দাবৃত্তি) সংস্কৃতির উদ্ভব হতে দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে দুই শিবিরের আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যেই এই এসপিওনাজ প্রথার সূত্রপাত। পুঁজিবাদের বিকল্প হিসেবে সমাজতন্ত্রের আগমন হলেও স্ট্যালিন পরবর্তী ক্রুশ্চেভ প্রশাসন ভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করায় তা ব্যর্থতার দিকে অগ্রসর হয়।
তার ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেকোশ্লাভাকিয়ায় অন্যায় আগ্রাসনসহ বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ করতে আরম্ভ করে। যা তৎকালীন সময়ে বামপন্থি সমর্থকদের হতাশায় নিমজ্জিত করে।
একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের মুক্ত চিন্তা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার শ্লোগান তুলে বিভিন্ন দেশে ওই সময় সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে । কিউবায় বে অব পিগস নাম দিয়ে সামরিক অভিযান, ভিয়েতনামে বছরের পর বছর নাপাম বোমা দিয়ে গণহত্যার মত ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্র সংঘটিত করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন আওয়ারের সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ইউ-২ (গোয়েন্দা বিমান, আমেরিকা থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছিল।
পরে রাশান সেনাবাহিনীর হাতে বিমানের পাইলট গ্রেফতার হয়। তা নিয়ে আমেরিকান প্রশাসন মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। কিন্তু, তাও বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়ে) অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে জনগণের সামনে মিথ্যাচার উন্মোচিত হওয়াসহ আরো বিভিন্ন কারণে প্রচলিত নীতি নৈতিকতার প্রতি মার্কিন জনগণ তৎকালে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠে। অন্যদিকে একই সময় মার্কিন শাসকদের মধ্যেও রাজনৈতিক এবং সামরিক কর্মসূচির বিষয়ে মতামতের পার্থক্য চরমে উঠে। পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তি বা সিয়াটো জোটভুক্ত দেশের প্রতি মার্কিন শাসকদের ভূমিকা কী রকম হবে তা নিয়েও তৈরি হয় ব্যাপক দ্বন্দ্ব।
এ রকম রাজনৈতিক আরো বিভিন্ন বিষয়কে জনগণ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। ফলে এ শূন্যতা ভরাট করার উদ্দেশ্য নিয়েই কাউন্টার কালচারের উদ্ভব। কাউন্টার কালচারের বাংলা তর্জমা হিসেবে বিকল্প সংস্কৃতির টার্ম ব্যবহার করলে হয়তো নানা বিতর্কের উন্মেষ হবে। কারণ, শেষ পর্যন্ত এই ধারার আন্দোলন যে উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তা মাঝখানেই হোঁচট খায়। তারপরও আলোচনার সুবিধার্থে তাকে বিকল্প সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
বিকল্পের সন্ধানে এ আন্দোলন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ড থেকে উদ্ভব হয়। ধীরে ধীরে তা পশ্চিমা অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে তৎকালীন আমেরিকান য্বুব সমাজের বড় একটা অংশ ভিয়েতনাম যুদ্ধ, জাতিতাত্ত্বিক সম্পর্ক, যৌন স্বাধীনতা, নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে প্রচলিত ধারার ভিন্নমত পোষণ করে। মার্কিন সমাজের তথাকথিত ভোগবাদী মানসিকতার বিরুদ্ধ শ্লোগান নিয়ে হাজার হাজার তরুণ সে সময় নানা কর্মসূচি নিয়ে হাজির হয়। পাশাপাশি মারিজুয়ানা, গাঁজা বা বিভিন্ন মাদক দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে মনন জগতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টার উদাহরণও কাউন্টার কালচার সময়কালে দেখা যায়।
বিটলস, হিপি, রাসেল কার্সন
১৯৬০ সালে বিটলসের উদ্ভব এবং পরবর্তী সময়ে তার বিপুল জনপ্রিয়তা কাউন্টার কালচারের অংশ হিসেবে বিবেচিত। সে সময় বিটলস প্রধান জন লেনন বা জর্জ হ্যারিসনদের যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন এবং প্রচলিত সমাজের সবকিছুর বিপরীতে সুন্দরের স্বপ্নে অবগাহণের প্রচেষ্টা তরুণদের স্পর্শ করে। জন লেননের ইমাজিন গানটা শুনলে এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট হওয়া যায়। এ গানের প্রথম কয়েকটি লাইনে দেখা যায়, সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে ধর্মীয় আগ্রাসন, রাষ্ট্র যন্ত্রের শোষণের বিরুদ্ধে শান্তিতে মানুষের জীবন অতিবাহিত হওয়ার বিষয়ে, লেনন তার স্বপ্নান্ধ আবেশ দিয়ে সবাইকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন। ওই সময় বিটলসের মত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আরো বিভিন্ন পপ শিল্প গ্রুপের আবির্ভাব হয়।
৬০-এর দশকে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে হিপি সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ। যদিও হিপি কালচারের ধারাবাহিকতা আরো একটু আগের। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু হয়ে পরবর্তীতে সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়ে। হিপি শব্দটির উৎপত্তি হচ্ছে হিপিস্টার শব্দ থেকে। আর এ শব্দের পেছনে রয়েছে বিস্তৃত পটভূমি।
হিপস্টার শব্দটি মূলত ব্যবহৃত হত ১৯৪০ সালে। ওই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে জাঝ নামক একটি সঙ্গীত গ্রুপের উদ্ভব হয়। আফ্রিকান বংশোদ্ভুত আমেরিকানদের ভিন্ন ধারার সঙ্গীত পরিবেশন ও চর্চার মাধ্যমে এ সম্প্রদায়ের উৎপত্তি। আফ্রিকান এবং ইউরোপিয়ান সুরের ঐকতানের প্রয়াস হচ্ছে জাঝ। তাদের সঙ্গীতের কথা বা সুরের মুর্ছনার মধ্যে তার প্রভাব ছিল লক্ষণীয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মেইনস্ট্রিম ধারার আমেরিকান পপুলার মিউজিকের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়েই জাঝের এগিয়ে যাওয়া। তাদের গানের কথা, রিদম, বাদ্য যন্ত্রের ব্যবহারসহ সমস্ত অবয়বেই ছিল পশ্চিম আফ্রিকার শৈল্পিক ধারার প্রভাব। সে সময় তরুণদের মধ্যে জাঝ’র আকর্ষণ ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এ শিল্পী গোষ্ঠির অনুরক্তরা তাদের মত লাইফস্টাইল গ্রহণ করতে থাকে। তারা জাঝ শিল্প গোষ্ঠীর অনুরূপ পোষাক, কথা বার্তার ধরন, গাঁজা থেকে শুরু করে অন্যান্য মাদক দ্রব্যের ব্যবহার, যৌনতা বিষয়ে প্রচলিত সামাজিক ডিসকোর্সকে অস্বীকার করা ইত্যাদির চর্চা নিজেদের জীবনে নিয়ে আসে।
ভোগবিলাসের মার্কিন সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে প্রচুর তরুণ নিজেদের জীবনে স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে দারিদ্রতাকেও গ্রহণ করে। জাঝের অনুরক্ত এ শিল্পগোষ্ঠীকে সে সময় হিপস্টার নামে আখ্যায়িত করা হত। উল্লেখ্য, হিপি শব্দটি এই হিপস্টার থেকে উৎপত্তি হয়েছে। সুতরাং, হিপিদের সংঘবদ্ধ জীবনে এ প্রভাব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় দেখা যায়। কাউন্টার কালচার প্রেক্ষিতের বিশাল একটা জায়গা জুড়ে হিপিদের আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মূলত, তৎকালীন সমাজের প্রতি বিদগ্ধ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে হিপি কালচারের উত্থান হয়।
পরিবেশ আন্দোলনের ক্ষেত্রে রাছেল কার্সনের প্রসঙ্গ এ সময় বিশ্ব জুড়ে আলোচনা তৈরি করে। কুখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানি মনসান্তো সে সময় ডিডিটি উৎপাদন এবং বাজারজাত করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করছিল। কিন্তু মশক নিধনের উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহৃত ডিডিটি পরিবেশের জন্য ছিল বেশ ক্ষতিকর। বিষয়টির প্রতিবাদে রাছেল সোচ্ছার হয়ে উঠেন।
তিনি ক্ষতিকর ডিডিটি নিষিদ্ধের জন্য আন্দোলনের সূচনা করেন। বিপরীতে, মনসান্তোসহ অন্যান্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি রাছেল কার্সনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অপপ্রচার শুরু করে। ১৯৬২ সালে রাছেলের বিশ্ব খ্যাত গ্রন্থ সাইলেন্ট প্রীং প্রকাশিত হয়। বইয়ে তিনি ডিডিটি ব্যবহারের কারণে পাখিসহ বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব কীটপতঙ্গের ধ্বংসের হয়ে যাওয়ার চিত্র উপস্থাপন করেন। কিন্তু, তারপরও দীর্ঘদিন সরকার ডিডিটি নিষিদ্ধ না করে বহুজাতিকের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট ছিল।
যা হোক, এক পর্যায়ে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিডিটি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। রাছেলের পরিবেশ রক্ষার এ আন্দোলনও কাউন্টার কালচার আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত।
মানুষ হিসেবে সমঅধিকারের আন্দোলন
১৯৬০ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত বিস্তৃত কাউন্টার কালচারের বড় অধ্যায় জুড়ে রয়েছে মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ৬০-এর দশকের পূর্ব পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সমঅধিকারের আইন বাস্তবায়িত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আফ্রিকান বংশোদ্ভুত নাগরিকদের শেতাঙ্গদের তুলনায় নিম্ন পর্যায়ের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হত।
তার বিরোধিতা করে ১৯৫৫ সালে জন অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সূচনা হয়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠার্থে ৬০-এর দশকে এই আন্দোলন এক পর্যায়ে তুমুল ঝড় তোলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে তখনো পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার ছিল না। মানুষ হিসেবে সাম্যের কণ্ঠ নিয়ে জেগে উঠা আন্দোলন পরবর্তীতে বিভিন্ন ধারায় বিকশিত হয়। তার একটি হচ্ছে ব্ল্যাক পাওয়ার মুভমেন্ট বা কালোদের অধিকার আন্দোলন।
১৯৬৬ থেকে শুরু হয়ে এ আন্দোলন ১৯৭৫ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলে। লড়ায়ের প্রধান দাবি হিসেবে যে সব বিষয় সামনে আসে তা হচ্ছে, যথাযথ জাতিগত মর্যাদা প্রাপ্তি, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ শেতাঙ্গদের সর্ব প্রকার নির্যাতন থেকে মুক্তি অর্জন করে তাদের সমতুল্য হিসেবে রাষ্ট্রের তরফ থেকে স্বীকৃতি আদায় করা। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠার্থে ওই সময় বেশ কিছু সংগঠন জোরালো ভূমিকা রাখে। সংগঠনগুলো হচ্ছে এনএএসিপি, এসএনসিসি, কোর এবং এসসিএলসি।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের কর্মসূচি হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য এলাবামার রাজধানী মন্টগোম্যারিতে ১৯৫৫ সালে শুরু হয় সর্বাত্মকভাবে বাস বয়কট আন্দোলন।
তখন মন্টগোম্যারিতে পাবলিক বাসে চড়ার ক্ষেত্রে শেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ছিল বৈষম্য। কোন শেতাঙ্গ বাসে উঠলে কৃফঙ্গদের সিট ছেড়ে দেয়ার বিধান ছিল। তাছাড়া শেতাঙ্গদের জন্য আলাদাভাবে বাসে আসন সংরক্ষণেরও নিয়ম কার্যকর ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় বাস বয়কট আন্দোলন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে, যে সব কৃষ্ণাঙ্গ বাস ড্রাইভার ছিল তারা পরিবহণ চালানো বন্ধ করে দেয়।
এদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কৃষ্ণাঙ্গদের সমর্থনে অনেক মানবতাবাদী শেতাঙ্গও এ আন্দোলনে অংশ নেয়। আন্দোলনের জের ধরে কৃষ্ণাঙ্গ ড্রাইভাররা বাস চালানো বন্ধ করে দিলে শহরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ে। ওই কর্মসূচিতে মার্টিন লুথার কিংসহ আরো অনেকে অংশগ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে আফ্রিকান বংশদ্ভোত এক আমেরিকান মহিলা শেতাঙ্গকে আসন ছেড়ে দিতে নারাজ থাকায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এমতাবস্থায় আন্দোলন আরো বেগবান হয়। পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে ১৯৫৬ সালের ২০ ডিসেম্বর এলবামা রাজ্য সরকার বেষম্যমূলক এ আইন তুলে নিলে আন্দোলনের অবসান হয়। এ বিজয়ের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের অন্যান্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। সমঅধিকারের এ আন্দোলন ছিল অহিংস। সে সময় এ অহিংস কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের আরেকটি উদাহরণ তৈরি করে নর্থ ক্যারোলিনায় অবস্থিত এগ্রিক্যালচার অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজ ছাত্ররা। ওই সময় নর্থ ক্যারোলিনার গ্রীনসবুরে্যাতে অবস্থিত উলওয়ার্থ কোম্পানির ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ার সময় শুধুমাত্র শেতাঙ্গদের বসার ব্যবস্থা ছিল। কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের চেয়ারে বসার কোন অধিকার ছিল না। বৈষম্যমূলক এ প্রথার বিরুদ্ধে চার জন ছাত্র প্রথমবারের মত প্রতিবাদ জানায়। ১৯৬০-এর ১ ফেব্রুয়ারি জিব্রীল খাজান, ডেভিড লেইনহেইল রিচমন্ড, জোসেফ আলফ্রেড ম্যাকনীল এবং ফ্রাঙ্কলীন ম্যাককেইন এ নিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
প্রথম দফায় তাদের সাথে আন্দোলনে ২৭ জন অংশগ্রহণ করে। কিন্তু, পরবর্তীতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজ, বেন্নেট কলেজ এবং ডুডলি হাই স্কুলের ছাত্ররা দলবদ্ধভাবে যোগ দেয়। পরবর্তীতে শেতাঙ্গরা এ আন্দোলনে বাধা প্রদানও করে। এতে আন্দোলন আরো জোরালো হয়ে উঠে এবং পাশ্ববর্তী রাজ্য ও শহরে দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
উইনস্টন-সালেম, ডুরহাম, রেলিজি, চারলট্টেসহ ক্যারোলিনার আরো বিভিন্ন শহরে তা বিস্তৃত হয়। আন্দোলনে টেন্নেসাস, ভার্নিজিয়াসহ আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যের কৃষ্ণাঙ্গ এবং মানবতাবাদী শেতাঙ্গরা স্বতস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেনআওয়ার আন্দোলকারীদের প্রতি একাত্ম প্রকাশ করেন। এ আন্দোলনও সফলভাবে সমাপ্ত হয়।
পরবর্তীতে দেখা যায়, আন্দোলনের তীব্রতায় কৃষ্ণাঙ্গদের বিভিন্ন অধিকার একে একে প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে।
সরকারি চাকরি এবং বাসস্থানের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি যে বৈষম্য আরোপ করা ছিল তা নিরসনে ১৯৬৪ সালে সিভিল রাইট অ্যাক্ট পাস করা হয়। ১৯৬৫ সালে প্রণীত হয় ইমিগ্রেশান অ্যান্ড ন্যাশনালিটি সার্ভিস অ্যাক্ট। কাউন্টার কালচার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সফলতা ছিল মানুষ হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
মুক্ত চিন্তার আন্দোলন
বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত চিন্তার পাদপীঠ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। আর এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যায় অনাবিল ভবিষ্যতের দিকে।
শাসক শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যুগের প্রয়োজনে নতুন জ্ঞান যেমন সৃষ্টি করে , তেমনি অতীত জ্ঞান আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সংরক্ষণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন অপরিহার্য। কিন্তু, অদ্ভুত হলেও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রে ৬০-এর দশকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন পরিপূর্ণ মাত্রায় ছিল না। কাউন্টার কালচার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত চিন্তার ভূমি হিসেবে গড়ে তোলার জন্যও আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আন্দোলনের সূত্রপাত।
কৃষ্ণাঙ্গদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ওই সময় মিসিসিপি রাজ্যে বিভিন্ন সংগঠন যৌথভাবে ফ্রিডম সামার প্রজেক্ট বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার রদ করার উদ্দেশ্যে সে সময় মিসিসিপি’র প্রশাসন নানা রকম আইনী বেড়াজাল তৈরি করে। তখনকার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, মাত্র ৬.৭ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রেশনে তালিকাভুক্ত হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে অত্যাধিক হারে নির্বাচনী কর আদায়ের পাশাপাশি কঠিনভাবে স্বাক্ষরতা পরীক্ষাসহ উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা সমস্যা তৈরি করা হত। তাছাড়া, আগে থেকে নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত থাকায় তারা এমনিতে ছিল পশ্চাদপদ।
ফলে তাদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মত যোগ্যতায় নিয়ে যাওয়া এবং শেতাঙ্গদের উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষার্থে সামার প্রজেক্টের আয়োজন করা হয়। এ প্রজেক্টের জন্য তখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণচাঁদা সংগ্রহসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু, সে সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞ বজায় ছিল। এক পর্যায়ে ১৯৬৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ক্যাথারিন টাওয়েল ক্যাম্পাসে গণচাঁদা সংগ্রহ, ক্যাম্পাস বহির্ভূত ইস্যু নিয়ে কর্মসূচি পালন, বহিরাগত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আগমনসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করে।
এমতাবস্থায়, ১ অক্টোবর ক্যাম্পাসের প্রাক্তন ছাত্র জ্যাক উইনবার্গ সমঅধিকারের রাজনৈতিক বলয়ভুক্ত সংগঠন কোর’র টেবিলে বসা অবস্থায় পুলিশ তাকে চার্জ করে। ক্যাম্পাসের পরিচয় পত্র দেখানোর জন্য পুলিশ তাকে আদেশ করে। কিন্তু, এ আদেশ উইনবার্গ দৃঢভাবে প্রত্যাখ্যান করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি ক্যাম্পাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার তৈরি করে। হাজার হাজার ছাত্র তাৎক্ষণিক পুলিশের ভ্যান ঘেরাও করে ফেলে।
প্রায় ৩ হাজার ছাত্রের বেস্টনি পুলিশকে ৩২ ঘন্টা আটকিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে পুলিশ উইনবার্গের উপর অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিলে ছাত্রদের আন্দোলন নিরসন হয়।
ওই বছর ডিসেম্বরের তিন তারিখ রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞসহ আন্দোলকারী চার ছাত্রের উপর একাডেমিক শাস্তির বিরুদ্ধে প্রউল হলে ছাত্ররা অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে। এটা ছিল আন্দোলনকারীদের শেষ আশ্রয়স্থল। কারণ, এখান থেকেই তাদের শাস্তি প্রত্যাহারের একমাত্র শেষ সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু, পর দিন ছাত্রদের কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা প্রদান করে এবং ৮ শ’ ছাত্রকে গ্রেফতার করে। অধিকাংশ আন্দোলনকারীকে একদিন পর ছেড়ে দিলেও এক মাস পর তাদের উপর বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক শাস্তি ঘোষণা করলে ক্যাম্পাস আবারো অশান্ত হয়ে উঠে। সহিংসতা এবং ছাত্র আন্দোলন রোধকল্পে কর্তৃপক্ষ এবার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। পরবর্তীতে ৩ জানুয়ারি ১৯৬৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে মার্টিন মেয়েরসন দায়িত্ব নেয়ার পর ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপরও ষাটের দশক ব্যাপী আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বিক্ষোভের ক্ষেত্রে ছাত্রদের প্রধান দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার অধিকারসহ অবাধ স্বায়ত্তশাসন দেয়ার অঙ্গিকার রাষ্ট্র পক্ষকে মেনে নিতে হবে। তাদের বিভিন্ন দাবি সে সময় সফলতাও পেয়েছিল।
আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাউন্টার কালচার
মুক্ত চিন্তা আন্দোলনের সাথে আরেকটি ধারা যুক্ত হয়। তা হচ্ছে- ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্বদেশে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠা। হাজার হাজার মার্কিন ছাত্র ভিয়েতনামে স্বদেশি শাসকদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে রাজপথে নেমে আসে।
সে সময়ের এক জরিপে দেখা যায়, ১৯৬৫ সালের আগস্টে ভিয়েতনামে হামলার সমর্থক হচ্ছে ৬১ শতাংশ। কিন্তু ১৯৭১ সালে সমর্থনের পরিমাণ কমতে কমতে তা ২৮ শতাংশে এসে পৌঁছে। যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের গতি কী রকম ছিল তা দু’একটি উদাহরণ দিলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। স্বদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশের অংশ হিসেবে ১৯৬৫-এর ২ নভেম্বর নরম্যান মরিশন নামক এক আন্দোলনকারী পেন্টাগন কার্যালয়ের সামনে নিজের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করে। ওই মাসের ৯ তারিখ ক্যাথলিক ওয়ার্কার মুভমেন্টের সদস্য রগার অ্যালেন লাপোর্টে জাতিসংঘের সদরদপ্তরের সামনে একইভাবে শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আত্মহুতি দেন।
এসব ঘটনা বহির্বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজ ক্রমাগত নিষ্প্রভ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মম আগ্রাসনে তখন ভিয়েতনামের হাজারো জনপদ মানুষ শূন্য। নাপাম বোমার ছোবলে শুধু মানুষ নয়, ভিয়েতনামের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে কোন জীবেরই অস্তিত্ব ছিল না। এ সময় ছাত্রদের পাশাপাশি রাজপথে নেমে আসেন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী নোম চমেস্কী, মাইকেল প্যারেন্টিসহ আরো অনেকে ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধের বিরুদ্ধে নোম চমেস্কী দ্যা নিউইয়র্ক রিভিউ অব বুকসসহ আরো বিভিন্ন কাগজে একাধিক সমালোচনামূলক প্রবন্ধে স্বদেশী শাসকদের ব্যাপক মাত্রায় সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে এ যুদ্ধের নেপথ্য নায়ক হিসেবে তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রবার্ট ম্যাকনামারা বহুলভাবে ঘৃণিত হয়েছেন। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
ফেমিনিজম এবং নিউ লেফট ভাবাদর্শের উদ্ভব
এ সময় ফেমিনিজম বা নারীবাদী আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হয়। নারী অধিকারের প্রথম পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ভোটাধিকার, সম্পত্তির অধিকার বা নারীর সর্বাঙ্গীন স্বাধীনতা প্রাপ্তির বিষয়টিকে কার্যকর করা।
পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি গ্রন্থে ফ্রেডরিক এঙ্গেলস নারীদের ঐতিহাসিক পরাজয়ের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আলোকপাতে প্রথম পর্যায়ের আন্দোলনে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। জন স্টুয়ার্ট মিলের আন্দোলন বা সিমোন দ্যা ব্যুভোয়ারের দ্বিতীয় লিঙ্গে নারী অধিকারের বিষয়ে যে আলোকপাত করা হয়েছে তা অনকটা প্রথম পর্যায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু, দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনের ব্যাপক সূচনা দেখা যায় ১৯৬০-এর প্রথম থেকে ৭০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে নারী আন্দোলন কর্মসূচিতে সামাজিক এবং প্রশাসনিকভাবে নারী পুরুষের বৈষম্য রোধ, পরিবার-অফিস থেকে শুরু করে যৌন স্বাধীনতা এবং পুনরুৎপাদনমূলক কাজে নারীর ভূমিকাকে যথাযথ স্বীকৃতির দাবি উঠে। কাউন্টার কালচার আন্দোলনের ফসল হিসেবে উদ্ভব ঘটে র্যাডিক্যাল ফেমিনিজম এবং এনভাইরনমেন্ট ফেমিনিজমসহ বিভিন্ন ধারার।
এ সময় বামপন্থি আন্দোলনের আরেকটি নতুন ধারার উদ্ভব হয়। নিউ লেফট হিসেবে এ ধারাকে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। মূলত, মার্কসবাদ এবং লেনিনবাদের ক্যাসিক্যাল তত্ত্ব থেকে বের হয়ে এসে নিউ লেফটের উদ্ভব। ৬০ এবং ৭০-এর দশকে নিউ লেফট বেশ গতি অর্জন পায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনসহ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কমিউনিজমের প্রয়োগ যথাযথ না হওয়ার শূন্যতা থেকে নিউ লেফটের উদ্ভব বলে অনেকের অভিমত।
নিউ লেফটের সুনির্দিষ্ট ডিসকোর্স গড়ে না উঠলেও মার্কসবাদ যেভাবে দু’ শ্রেণীকে বিভক্ত করে সমাজকে বিশ্লেষণ করেছে, এহেন ধারণার বিপরীত অবস্থানে নিও লেফট অনুসারীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। নিও লেফটদের নিউ ক্যালাসিক্যাল মার্কসীস্ট বা নিও মার্কসীস্ট হিসেবেও অভিহিত করা হয়। নিও মার্কসীজম তত্ত্বের প্রয়োগ দেখা যায়, ফ্রাঙ্কর্ফুট ঘরণার তাত্ত্বিকদের। জার্গেন হ্যাবারমাস, লিও লোয়েনথাল, ওয়াল্টার বেঞ্জামিন, থিওডোর অ্যাডার্নোসহ হার্বাট মারকুইসেদের তাত্ত্বিক চিন্তায় এর প্রভাব দেখা যায়। তাদের মতে, লিঙ্গ বৈষম্য, জাতি দ্বন্দ্ব প্রভৃতি বিষয়ে মার্কসীজমের যে ঘাটতি সেখান থেকেই নিউ লেফটের উত্থান বলে।
এর বাইরেও কাউন্টার কালচার ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ আন্দোলন, প্রযুক্তি, চলচ্চিত্র আন্দোলন, সঙ্গীত, মূলধারার মিডিয়ার বিপরীতে অলটারনেটিভ মিডিয়াসহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিন্তার জন্ম দেয়। কিন্তু, একটা বড় সময়জুড়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ব্যাপকতা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। অন্যান্য মতবাদের ক্ষেত্রে, সুনির্দিষ্ট দার্শনিক ভিত্তি, সমাজ পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক কাঠামোসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটা অবয়ব লক্ষ করা যায়। কাউন্টার কালচার মানুষের সমাজ জীবনের প্রত্যেক ধারাকে স্পর্শ করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তা একটা ডিসকোর্স হতে পারেনি। ফলে সে সময় যত চিন্তা তৈরি হয়েছিল তা প্রত্যেকটি বিচ্ছিন্নই রয়ে যায়।
আবার বিপরীত চিন্তার সাথে ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে নতুন ভাবনার তৈরিও উল্লেখযোগ্য নয়। ফলে ১৯৭৪ পরবর্তী কাউন্টার কালচার আর খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।