ঃডিভোর্স দিবে, তুমি?আমাকে?তাইলেই হইছে।
ঃহ্যা হ্যা আমিই তোমাকে ডিভোর্স দি্ব। হ্যা ডিভোর্স দিব।
ঃতোমার মত মেয়ে দেবে ডিভোর্স, হুমম মেয়ে মানুষ বলে কথা......বাবলুকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ফোনটা রেখে দেয় নীতু। মেয়ে মানুষ বলে জন্ম নেওয়ার গ্লানি আজ তাকে আর অপমানিত করেনা।
ফোনটা আবার বাজতে শুরু করে। সুদুর প্রবাস থেকে ভেসে আসা ফোনটা বাজতেই থাকে।
বারান্দার গ্রীলে হাত রেখে বাইরের অস্ফুট অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। এক ফালি মেঘের পাতলা আবরণ চাদকে ঢেকে রেখেছে। তারপরও দুরের জ্বলজ্বলে নক্ষত্ররাজি যেন স্বপ্নের বার্তা বয়ে আনছে।
নীতুর মনের প্রান্তর থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন স্মৃতিরা আজকাল বড্ড মাথাচাড়া দিচ্ছে। দেহের ভিতরের প্রতিটি কোষ একযোগে বিদ্রোহ ঘোষণা করে,সেদিন পারনাই বলে কি হয়েছে,আজ তোমাকে পারতেই হবে। ঘরের ভিতর থেকে পৃথীলার পড়ার একটানা সুর ভেসে আসছে। নীতু বিড়বিড় করে উঠে হ্যা আমাকে পারতেই হবে।
ঃএই যাসনে দাড়া,দাড়ানা একটু প্লিজ।
ঃহাত ছাড়েন জীবনভাই কেউ দেখে ফেলবে,আতঙ্কিত কন্ঠস্বর।
প্রতিদিনের একসাথে আসাযাওয়া, স্কুল গেইটের অপেক্ষা,দু একটা চিঠি চালাচালি........জীবনটা কতটা স্বপ্নিল হয়েছিল ঐ কয়টাদিনে। কৈশোরের ছটফটে দুরন্ত মনটাকে কি কোমল যতনে আগলে রেখেছিল মানুষটা। যেন সার,মাটি আর ভালবাসার উষ্ণ পরশ দিয়ে সবেকার বাড়ন্ত মনটাকে একটু একটু করে পরিপুর্ণতার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছিল। সেই মানুষটা আজ কোথায় হারিয়ে গেছে?এতটা বছর পর কেমন হয়েছে সে?
মা খেতে দাও খুব খিদে পেয়েছে।
বাস্তবে ফিরে আসে নীতু। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে বিশটি বছর কেটে গেল। একটা দিনের জন্যেও কি সুখী হতে পেরেছে সে? অথচ এই সংসারকে আকড়ে ধরেই সে বাচতে চেয়েছিল,সব ভুলে নতুন করে।
সেদিনের সেই হাতধরাটাই কাল হয়েছিল নীতুর জীবনে। বড়ভাই দেখে ফেলে,খুব দ্রুত জেনে যায় মা,চাচা,চাচী,ছোট ভাইবোন সবাই।
অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সুযোগ্য ছেলে জীবন। তারপরও ভালোবাসা নামক অপরাধের বলি হয়ে একসপ্তাহের মধ্যে বিয়ের পিড়িতে বসতে হল তাকে মায়ের পরিচিত এক আত্মীয়ের ছেলের সাথে। দুমাস বাদে ঘনিয়ে আসা এস এস সি পরীক্ষাটাও আর দেওয়া হলনা।
মেয়েটাও আজকাল তাকে বড্ড অবহেলা করে । কেন করে?সে অসহায় বলে?তার নিজের বলে কিছু নেই বলে?পড়ালেখায় একদিন সেওতো খারাপ ছিলনা।
একটু সুযোগ পেলেই সমাজে সেও নিজের পায়ে দাড়াতে পারতো। কেন সে সামান্যতম সম্মানও কার কাছ থেকে পায়না? অথচ কিই না করছে ওদের সুখের জন্যে। অভিমানে বুকটা কুকড়ে আসে। এই অভিমান কার উপর তার হদিছ পায়না সে। স্বামী সন্তান ভাই বোন সবইতো আছে ।
তবে কেন মনে হয় তার আপনার বলে কেউ নেই।
প্রতিদিনকার লাঞ্জনা, যন্ত্রণা আর আত্মত্যাগের দহনে জীবনের সব মানবিকতা আজ অঙ্গারে পরিণত। যেন সকল বন্ধন চুরমার হয়ে গেলেও আজ আর কোন ক্ষোভ নেই তার।
গত দুই বছর ধরে একটু একটু করে গুছিয়েছে সে নিজেকে মুক্তি দেবার জন্যে। বাবার দেওয়া জায়গাটার অর্ধেক বিক্রি করেছে, সেই টাকায় একটা পার্লার দিবে পাশে একটা টেইলার্স।
নিজে এর জন্যে ট্রেনিংও নিয়েছে। এবার সে যুদ্ধে নামবে। নিজের জন্যে,নিজের সম্মানের জন্যে।
মেঘের নেকাবটা সরে গেছে,জ্যোতস্নাপ্লাবিত সমগ্র পৃথিবীটা যেন অন্ধকার থেকে মুক্তির আনন্দে হাসছেতারপি পরশ গায়ে মেখে নীতুও পৃথীলাকে ভাত দিতে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।