চারপাশে টোল খাওয়া একটা টিনের থালায় ভাত বেড়ে রহিমা বেগম সেটাকে একরকম ছুঁড়ে দিলো কুদ্দুসের দিকে। তার ধাক্কায় উল্টে পড়ে গেলো পানিভর্তি গ্লাস। আহত পশুর মতো খেকিয়ে উঠলো কুদ্দুস-
ঃ কুত্তার মতোন ব্যাবার করস ক্যালা?
দ্বিগুণ জোরে ফুঁসে ওঠে রহিমা-
ঃ আল্লার ধারে শুকর কর যে এইটুক পাইছোস। তুই তো কুত্তার চাইতেও খারাপ।
কথা বাড়ালোনা কুদ্দুস।
কলাভর্তা মেখে ভাত মুখে পুরতে থাকে।
আজকের হাওয়া এমনিতেই খারাপ। ৫টাকা পাওয়ারও আশা নেই। তার উপর চেঁচামেচি করলে এই ভাত টুকুও জুটবেনা, নির্ঘ্যাত থালা কেড়ে নেবে রহিমা বেগম!
একচালা একটা ঘর; চারপাশে পাটখড়ির বেড়া, উপরে টিন। রুম-টুমের কোন বালাই নেই।
যেখানেই রান্না সেখানেই শোওয়া একপ্রকার। প্রাকৃতিক কাজ সারতে বস্তির গণল্যাট্রিনে লাইন দিতে হয়! এর ভাড়াই মাসে এক হাজার টাকা।
ঘরের বাসিন্দা তিনজন- রহিমা বাগম, তার স্বামী শুকুর আলী আর তাদের একমাত্র ছেলে কুদ্দুস।
কুদ্দুস বড় হয়েছে বলে ঘরের দুই-তৃতীয়াংশে একখানা ছেঁড়া শাড়ি টানানো।
সংকীর্ণ অংশটিতে কুদ্দুস থাকে।
বাকী অংশের এককোণে একটা মাটির চুলা আর গুটিকয়েক হাড়িপাতিল। তারপাশেই একটা ছেঁড়া তোশকে থাকে দুই স্বামী-স্ত্রী, রহিমা বেগম আর শুকুর আলী। দুজনেই গার্মেন্টসকর্মী।
কুদ্দুস ভাত খাচ্ছিলো মাটিতে বসেই। তার ধূলোবালি নিয়ে কোন ভাবনা নেই।
গত দেড়মাস ধরে সে একই জামাকাপড় পড়ে আছে- এটা নিয়েও তার কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয়না! আগে রহিমা বেগম জোর করে এসব ধুয়ে দিতো। এখন সেও হাল ছেড়ে দিয়েছে বিরক্ত হয়ে।
শুকুর আলী একটা ছেঁড়া খবরের কাগজ বিছিয়ে বসলেন কুদ্দুসের পাশে। তার থালায় ভাত রাখা ছিলো। হাত বাড়িয়ে ভাতের থালা নিতে নিতে শান্ত গলায় বললেন,
,ঃ বাবা, আব্দুল কুদ্দুস, আমরা যে আর পারিনা, বাবা।
এবার যে তোমার কিছু একটা করতিই হয়।
কুদ্দুস মাথা না তুলেই বললো,
ঃ এইতো,করবো, আব্বা।
ঃ তোমার জনমের সময় তোমার মা'র কী হয়া গেলো, ছেলেপুলেও আর হলোনা।
আমাগের দায়িত্ব তো তোমারেই নিতি হবি। বয়েস হয়েছে, শরীরে তো আর আগের মতো জোর পাইনে।
তুমী বড় হয়েছো, কিছু যদি না করো…
কুদ্দুস খুব ব্যস্তভাবে বললো,
ঃ করবো আব্বা, ঠিক করিছি ব্যবসা-পাতি কিছু একটা করবো। কিছু টাকার দরকার আমার।
একখন্ড কাঠের উপর বসে ভাত খাচ্ছিলো রহিমা বেগম। তার চোখ দিয়ে এবার আগুন বের হয়-
ঃ ব্যবসা করবি,*শ্যাগিরি করগে যা।
পয়সা দ্যাও ওনারে, আর উনি সেই পয়সা নিয়ি নিয়ি গাঞ্জার কলকিতি ঢুকাবি।
আমার বড় পাতিলডা কাইল বেচে খাইছে। পয়সা তোর গু*র মধ্যি ভরে দিবানি।
একঝটকায় উঠে দাঁড়ায় কুদ্দুস। অর্ধেক ভাতও তার শেষ হয়নি।
ঃ নে বেটি, তোর পয়সা তুই খা।
বলেই ভাতের থালা রহিমা বেগমের মুখের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
গতকাল গাজা টেনে মেজাজ ফুরফুরে হয়েছিলো। আজ সকাল সকালই গেলো সেটা বিগড়ে!
যাঃ শালা- ভাতমাথা হাতটা প্যান্টে মুছে নিতে নিতে বস্তি থেকে বের হয়ে যায় কুদ্দুস।
রহিমা বেগম তখনও তারস্বরে গালাগাল দিয়ে চলছে আর শুকুর আলী মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া ভাত তোলায় ব্যস্ত। এই মানুষটি অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির, কিন্তু ভাগ্য তাকে এ কোন সাজা দিয়ে চলছে নিরন্তর!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।