মাপমতো কেটে রাখা কাপড়গুলো মেশিনের নিচে ঠেলে দিতে দিতে বারবার বুড়ো আঙ্গুলের দিকে তাকাচ্ছিলো রহিমা বেগম।
সকালবেলায় মেশিন চালু করার পরপরই তার আঙ্গুলে সূঁচের খোঁচা লেগেছে। তেমন মারাত্বক কিছু না; কয়েক ফোঁটা রক্ত বেরিয়েছিলো মাত্র!
এখন আর রক্তও নেই, তবে ব্যথাটা আছে। আঙ্গুলের চেয়ে মনের খচখচানিটাই বেশি পীড়া দিচ্ছে তাকে। কাজের শুরুতেই এরকম একটা বাধা- মনে মনে যেন একটা "কু-ডাক" শুনতে পাচ্ছে সে!
তারা গরীব; তাদের জীবন পাটখড়ির নড়বড়ে ঘরের মতো- কোনমতে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন আশ্রয় দিতে পারে, কিন্তু একদিন ঝড় উঠলেই সব শেষ।
দিন রোজগারে কলা-কচু দিয়ে পেট চালানো যায়, কিন্তু দূর্ঘটনার ধাক্কা সামলাবে কী করে তারা!
রহিমা বেগম নিজেকে বোঝায়- দূর্ঘটনা ঘটার মতো বিশেষ কিছু নেই তাদের।
মা-বাবা তো সেই কবেই দুনিয়া ছেড়ে গেছে, সম্পদ বলতে বাকী আছে- ঢাকার এই গারমেন্টসের সকাল-সন্ধ্যা চাকরী আর বস্তির ওই ভাড়াবাসাটুকু। এর আর কী হবে?
তবু মন থেকে ভয় ভয় ভাবটা কাটছে না। শুকুর আলীকে একবার পেলে ভালো হতো, মানুষটা নরম গলায় স্বান্তনা দিতে জানে। কিন্তু সে আছে লেবার সেক্টরে।
টেইলারিং রুম থেকে তার কাছে যেতে লাঞ্চ ব্রেক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
হঠাৎ কুদ্দুসের কথা মনে পড়ে;
"ছেলেটার কিছু হয়নি তো!"- ধ্বক করে ওঠে তার বুক।
"বালাই ষাট, বালাই ষাট"- বুকে খানিকটা থুতু ছিটিয়ে নেয় রহিমা বেগম।
মায়ের মন তো, সন্তান খারাপ হলেও তার খারাপ সইতে পারেনা।
ট্রাকে মাল তুলছিলেন শুকুর আলী, পরিচিত গলা শুনে পেছনে ফিরলেন।
গারমেন্টসের ট্রাক ড্রাইভার সবুজ, তাদের দেশের বাড়ির ছেলে।
ঃ আসসালামালাইকুম, কাকা, ভালো আছেন?
সালামের উত্তর দিতে দিতে সবুজের মুখের দিকে তাকান শুকুর আলী। ছেলেটাকে বড় ভালো লাগে তার; কুদ্দুসের বয়সী অথচ মেহনত করে নিজে খায়, মা-বাবাকেও খাওয়ায়।
ঃ কাকা, শরীর ভালো তো? কিরাম জানি ঠেকতিছে মুখখানা!
দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন শুকুর আলী,
ঃ আছি বাবা কোনরকম, পোলাডারে নিয়া চিন্তা- শরীরে আর কুলোচ্ছেনা।
একটু কাছে এগিয়ে আসে সবুজ।
ঃ কাকা, আপনারে এটটা জা'গার কথা কই, নিরাময় সেন্টার। কুদ্দুসরে দিয়া দ্যান!
ঃ নিরাময় সিনটার? সেহানে কী হয়,বাবা?
ঃ নিশা করা মানুষগো চিকিস্ִসা করে। আমি এটটা নাম্বার দিচ্ছি খাড়ান।
পাঁচ টাকার নোটটা খুব যত্ন করে ধরে আছেন শুকুর আলী। নোটের একপিঠে সবুজের দেয়া নাম্বার লেখা; নিরাময় সেন্টারের ফোন নাম্বার।
গোডাউনের সামনে বসে আছেন তিনি, অপেক্ষা করছেন রহিমা বেগমের জন্য। একটু পরে লাঞ্চ ব্রেক। খেতে খেতে আলোচনা করবেন দু জনে।
এবার বুঝি ছেলেটাকে ভালো করার একটা উপায় হলো!
রহিমা বেগম টিফিন ক্যারিয়ার হাতে নিচে নামছিলো।
হঠাৎ চিৎকার- চেঁচামেচি শুনে সিড়ির ফাঁক দিয়ে নিচে তাকালো সে!
গাজা টেনে নেশায় বুদ হয়ে আছে কুদ্দুস।
বস্তির একটা ছেলে দৌড়াতে দৌড়াতে গাজার আড্ডায় এলো।
কুদ্দুসকে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো,
ঃ শুনিছো কুদ্দুস ভাই, কাকা-কাকীর গারমেন্টসে আগুন লাগিছে।
কুদ্দুস ঘাড় কাত করে বললো,
ঃএ্যা?
.............................................................................................................................(চলবে)
দ্বিতীয় পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।