রাস্তার ধার দিয়ে কুদ্দুস খানিকটা উদাস মুখে হাটতে থাকে। খালি পা, ছেঁড়া গেঞ্জি আর ময়লা প্যান্ট দেখে সহজেই তাকে মাদকসেবী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
উদাস চেহারা আর নোংরা বেশভূষার একটা সুবিধা হলো- সহজেই পার্টনার খুঁজে পাওয়া যায়! গাজার কলকের ভাগ দেয়া বন্ধু হলো পরম বন্ধু। বড় রাস্তায় ঘুরলে অবশ্য এরকম বন্ধু পাওয়া ভার। ঘুরতে হয় অলিগলিতে।
তার মতো নোংরা একজনকে পেলেই অসঙ্কোচে কাঁধে হাত দিয়ে বলা যায়-
"দোস্ত, টানবা নি?"
লোকটা নেহাত পাগল না হয়ে মাদকসেবী হলে ভাব জমে যায় তখুনি! এরা চেনা অচেনা সবার সাথেই সদ্ভাব রাখে, কারণ, ফিফটি- ফিফটি পার্টনারশীপ ছাড়া হেরোইন-গাজার দাম কুলানো মুশকিল!
কুদ্দুস অবশ্য তার গতকালের পার্টনারকে খুঁজছে।
গতকাল গাজার বিল মিটিয়েছিলো সে নিজে, আজ তার খাওয়ার পালা।
ভাঙা লোহা লক্কড়ের একটা গলিতে ঢুকতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কে যেন হাক দিলো,
ঃ ওওওও .... কুদ্দুস ভাই।
কুদ্দুস পেছনে ফেরে। বস্তির সুপরিচিত নারী-শিকারী ১৯ বছর বয়সী মোতাহার!
মোতাহার নোংরা দাঁত বের করে হেসে বললো,
ঃ টানতি যাচ্ছো বুঝি?
কুদ্দুস উত্তর দেয়না।
এইসব ছেলে-ছোকরাদের তার ভালো লাগেনা। মায়ের দুধ ছাড়ার আগেই এরা বস্তির মেয়েদের সাথে অসভ্যপানা শুরু করে।
এসব তার পছন্দ নয়, এর চেয়ে গাজা ঢের ভালো।
উত্তর না পেয়ে নিরুৎসাহিত হলোনা মোতাহার। একপা এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
ঃ রাঙামাসীর বাড়ি একটা নতুন মা'য়া আইছে, কী ফিগার মাইরি।
নাচতিও জানে। ক্যাটরিনা ফেইল একবারে!
যাবা নাকী?
ঃ না।
সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে সামনে পা বাড়ায় কুদ্দুস। ক্যাটরিনা কে সে জানেনা। নাচ দেখারও তার দরকার নেই।
পেছন থেকে মোতাহার তবু তাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়; নতুন খদ্দের ধরে দিয়ে রাঙামাসীর মোটা বখশিস হাতছাড়া করতে চায়না সে!
বেশ খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরির পর কুদ্দুস তার পার্টনারকে পেয়ে যায়। ঘাড়ে হাত রেখে বলে,
ঃ বন্ধু, চলো।
পার্টনারটি দাঁত বের করে বলে,
ঃ কুদ্দুস ভাই, আইজ এখনো কোন ব্যবস্থা করতি পারলামনা যে।
কুদ্দুস পাল্টা হেসে পিঠ চাপরে বলে,
ঃ দুর ব্যাটা, এইডা কোন কথা হইলো!
চল্ִ দেখি, কিছু উপায় করা যায় নেকি।
পরষ্পর পরষ্পরের কাঁধে হাত রেখে দুই মাদকসেবী হাটতে থাকে।
এদের চোখ উদভ্রান্ত কিন্তু মুখে হাসি লেগেই আছে সর্বক্ষণ!
জীবনের কাছে এদের কোন আশা নেই বলে এরা কখনোই হতাশ হয়না!!
রহিমা বেগমের পাশের ঘরের হাসিনা খালার মুরগীর ঝাক থেকে যথাসময়ে দুটো মুরগী উধাও হয়ে গেলো।
বেচারা হাসিনা খালা যখন টের পেলেন, তারস্বরে চেঁচিয়ে নালিশের হুমকী দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার রইলোনা; রহিমা বেগম, শুকুর আলী দুজনের কেউই তখন বাড়িতে নেই, গারমেন্টসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।