আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সাধারন ফরিদা আখতার পপি থেকে অসাধারন ‘ববিতা’র গল্প - ঃ

ষাটের দশকের শেষ দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে যশোরের ফরিদা আখতার পপি নামের এক কিশোরীর যার চলচ্চিত্রে নাম রাখা হয় ‘ববিতা’ । স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সর্বপ্রথম পুরস্কার লাভ করার গৌরব অর্জন করেন অভিনেত্রী সেই কিশোরী ফরিদা আখতার পপি অর্থাৎ ববিতা । শুধু প্রথমবারই পুরস্কার পাওয়া নয় এরপর টানা আরও ২ বার মোট একটানা তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করে হ্যাট্রিক করেছিলেন অভিনেত্রী ববিতা । ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস (১৯৫৪ -২০০০)’ এ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা অভিনেত্রী’র এই পর্যায়ে আমরা জানবো কিংবদন্তী অভিনেত্রী ‘ববিতা’র কথা । ষাটের দশকের শেষ দিকে (১৯৬৮) পরিচালক জহির রায়হান এর ‘জ্বলতে সুরুজ কি নীচে’ ছবির মাধ্যমে ববিতার চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু হয় ।

পরিচালক জহির রায়হান ছিলেন ববিতার আপন বড় বোন সুচন্দার স্বামী। সেই দুলাভাই জহির রায়হান এর হাত ধরে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটলেও প্রথম ছবি ‘জ্বলতে সুরুজ কি নীচে’ পরিচালক জহির রায়হান শেষ করতে পারেননি । এরপর নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত (১৯৬৯) ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে ফারুকের বিপরীতে অভিনয় করেন যা ছিল নায়ক ফারুকের প্রথম অভিনীত ছবি। এই ছবিটিও শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি । এরপর আবারো জহির রায়হান এর ‘সংসার’ ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান ।

সেই সুত্রে ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির নাম ‘সংসার’ । টানা ২টি ছবিতে কাজ করেও ছবি মুক্তি না পাওয়ায় ববিতার দুঃখ অবশেষে শেষ হয় জহির রায়হান এর ‘সংসার’ ছবির মাধ্যমে । তবে ‘সংসার’ ছবিতে তিনি নায়ক রাজ্জাক ও নায়িকা সুচন্দার মেয়ের অভিনয় করেন যেখানে টাইটেলে তার নামছিল সুবর্ণা । ১৯৬৯ সালে তিনি নুরুল হক বাচ্চুর পরিচালিত ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই ছবিতেই তিনি সুবর্ণা নাম বদলে ‘ববিতা’ নাম দিয়ে অভিনয় শুরু করেন ।

এভাবেই একজন যশোর থেকে আসা ঢাকা গেণ্ডারিয়ায় পরিবারের সাথে বসবাস করা সেই অতি সাধারন কিশোরী পপি হয়ে উঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী ‘ববিতা’। সেই শুরু বাংলা চলচ্চিত্রে একজন ববিতার পথ চলা দর্শকদের মন জয় করে । স্বাধীনতার পর একে একে মুক্তি পেলো অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী - (১৯৭২) আলোর মিছিল, বাঁদী থেকে বেগম, ডুমুরের ফুল বসুন্ধরা গোলাপী এখন ট্রেনে ,নয়নমনি ,সুন্দরী অনন্ত প্রেম ,লাঠিয়াল ,এক মুঠো ভাত ,আকাঙ্খা, মা। ফকির মজনু শাহ ,সূর্য গ্রহণ , এখনই সময়, কসাই ,জন্ম থেকে জ্বলছি ,বড় বাড়ির মেয়ে , পেনশন সহ সব কালজয়ী ছবি যা দর্শকদের হৃদয়ে গেথে থাকবে সারা জীবন । ১৯৭৮ সালের দিকে বাংলাদেশের মাস্টার মেকার হিসাবে খ্যাত এ জে মিন্টুর প্রথম ছবি ‘ মিন্টু আমার নাম’ দিয়ে শুরু থেকেই মিন্টু’র ছবি দিয়ে পরিচালক মিন্টুর আস্থা অর্জন করেন এবং একটানা মিন্টুর ‘প্রতিজ্ঞা’ ‘প্রতিহিংসা ‘, ‘চ্যালেঞ্জ’ সুপারহিট ছবিগুলোতে অভিনয়ের দক্ষতা রাখেন ।

বাদী থেকে বেগম , লাঠিয়াল , নয়নমণি একটানা তিনটি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্রের শ্রেস্থ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন এবং বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন । গ্রামীণ,শহুরে চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন অথবা পোশাকী সব ধরনের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। তৎকালীন সময়ে তিনি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে শহরের মেয়েদের ভীষণ প্রভাবিত করেন। নগরজীবনের আভিজাত্য তার অভিনয়ে ধরা পড়েছিল।

সত্তর দশকের প্রথমার্ধে রুচিশীল, সামাজিক সিনেমা মানেই ছিল ববিতা। টাকা আনা পাই’ সিনেমাটা ছিল তাঁর জন্য টার্নিং পয়েন্ট যা পরিচালনা করেছিলেন জহির রায়হান। এরপর তিনি নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’ সিনেমাতে অভিনয় করেন যা ছিল সুপারহিট সিনেমা। ববিতার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি অশনি সংকেত । ভারতীয় ক্যামেরাম্যান নিমাই ঘোষ স্বাধীনতার পর ঢাকাতে এফডিসিতে এসে তার প্রায় ১৫০ থেক ২০০ ছবি তুলে নিয়ে যান।

ওনাকে সত্যজিত রায় ছবি তুলতে পাঠিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পর তাদের বাসায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে চিঠি আসে প্রাথমিক মনোনয়ণের কথা জানিয়ে। সুচন্দা এবং ববিতা তখন ভারতে যান সত্যজিৎ রায়ের সাথে দেখা করতে। সত্যজিত রায় তাকে দেখে অনেক লাজুক ভেবেছিলেন। তাই ইন্দ্রপুরের স্টুডিওতে তিনি তাঁকে আবার তাকে পরীক্ষা করেন।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সত্য সত্যজিত রায় বলেনঃ”আই অ্যাম সো হ্যাপি,আমি অনঙ্গ বউ আজকে পেয়ে গেছি। আমি ভাবতেও পারিনি এই মেয়েটি সেদিনের সেই মেয়েটি। আজকে এই মেয়ে সম্পূর্ন অন্য মেয়ে। এই আমার অনঙ্গ বউ। ‘ববিতাও অনেক চাপের মুখে ছিলেন তাঁকে নেয়া হয় কিনা।

ববিতা বলেনঃ “একজন অল্পবয়সী বাঙ্গালী যা করে-ভেতরে ভেতরে অনেক মানত-টানত করে শেষে জানলাম, আই ওয়াজ সিলেক্টেড ফর দেয়ার মুভি। ” (ফজলে এলাহী পাপ্পুর রচিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস (১৯৫৪-২০০০) ‘এর পাণ্ডুলিপি থেকে আংশিক প্রকাশিত) — • সংসার - (১৯৬৮) • শেষ পর্যন্ত - (১৯৬৯) • অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২) • আলোর মিছিল • বাঁদী থেকে বেগম • ডুমুরের ফুল • বসুন্ধরা • গোলাপী এখন ট্রেনে • নয়নমনি • সুন্দরী • অনন্ত প্রেম • লাঠিয়াল • এক মুঠো ভাত • আকাঙ্খা • মা • ফকির মজনু শাহ • সূর্য গ্রহণ • এখনই সময় • কসাই • জন্ম থেকে জ্বলছি • বড় বাড়ির মেয়ে • পেনশন • দহন • চন্ডীদাস ও রজকিনী • দিপু নাম্বার টু • অশনি সংকেত (১৯৭৩) • রামের সুমতি (১৯৮৫) • নিশান • মন্টু আমার নাম • নাগ-নাগিনী • দোস্তী • প্রতিজ্ঞা • বাগদাদের চোর • লাভ ইন সিঙ্গাপুর • প্রতিহিংসা • নাগ পূর্ণিমা • চ্যালেঞ্জ • হাইজ্যাক • মায়ের জন্য পাগল • টাকা আনা পাই • স্বরলিপি • তিনকন্যা • লটারী • শ্বশুরবাড়ি • মিস লংকা • জীবন পরীক্ষা • জীবন সংসার • লাইলি মজনু • সাক্ষী (ফজলে এলাহী পাপ্পুর রচিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস (১৯৫৪-২০০০) ‘এর পাণ্ডুলিপি থেকে আংশিক প্রকাশিত) তথ্য সুত্র ঃ উইকিপিডিয়া, যুগান্তর (২০১১), সাপ্তাহিক চিত্রালি (১৯৯১) একটি http://www.radiobg24.com এর নিবেদন । ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.