আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোমা ও আগুনে মুহূর্তেই ছারখার তিন যুবকের স্বপ্ন

নিম্নবিত্ত পরিবারটিকে আশার আলো দেখাচ্ছিলেন জামাল উদ্দিন (২৮)। তাঁর কাঁধে ভর করেই ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল দুই ভাই ও তিন বোনের টানাটানির সংসার। কিন্তু একটি হাতবোমা মুহূর্তেই ছারখার করে দিয়েছে সব স্বপ্ন। বোমার আঘাতে পঙ্গু হতে বসেছেন জামাল।
চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের আগুনে জামালসহ তিন যুবক এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন।

অন্য দুজন হলেন ট্রাকচালক মো. কামাল উদ্দিন (৩২) ও মো. ইউসুফ (২২)। নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকায় গতকাল সোমবার সকালে হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের ছোড়া হাতবোমায় জামালের ডান পায়ের হাঁটু গুরুতর জখম হয়েছে। আর ভোররাতে সীতাকুণ্ড এলাকায় চলন্ত ট্রাকে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়েছেন কামাল ও ইউসুফ। তিনজনই এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
আগ্রাবাদ এলাকার টেলিকম দোকানি জামালের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে।

তাঁর বড় ভাই অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারেন না। জামালের আয়েই সংসার চলে।
হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে কাতরাতে তিনি বললেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না। তবে আমাদের ওপর কেন এই আক্রমণ?’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জামাল বলেন, একের পর এক বোমার শব্দে ভীত হয়ে তিনি দোকান বন্ধ করছিলেন।

শেষ পর্যায়ে যখন তালা লাগাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়া হয়। বোমাটি তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বিস্ফোরিত হয়। এখন তাঁর চিন্তা একটাই—পা ভালো না হলে অভাবের সংসারের হাল ধরবেন কীভাবে? হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের চিকিৎসক সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জামালের পায়ের আঘাতটি গুরুতর। অবস্থা কী দাঁড়াবে, অস্ত্রোপচার না করা পর্যন্ত তা বলা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে নির্মাণসামগ্রী নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন কামাল ও ইউসুফ।

কামাল ট্রাকের চালক; ইউসুফ তাঁর সহকারী। দুজনের বাড়িই ফেনীর লালপুলে। ট্রাকটি যখন সীতাকুণ্ড সদর পার হচ্ছিল, তখন ভোর সাড়ে চারটা। হঠাৎ কিছু দুর্বৃত্ত ট্রাকের গতিরোধ করে ভেতরে জ্বালানি তেলসহ আগুন ছুড়ে মারে। আগুন দেখে তাঁরা ট্রাক থেকে বের হতে চাইলেও দুর্বৃত্তরা তাঁদের বের হতে দেয়নি।

পরে তারা চলে গেলে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন কামাল ও ইউসুফ।
হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন এই দুই যুবকের শরীরজুড়ে ব্যান্ডেজ। আগুনে দুই চোখ, হাত, বুক, মুখমণ্ডলসহ শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে কামালের। তিনি কথাই বলতে পারছেন না; কেবল যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আর ইউসুফের শরীরের ১৭ শতাংশ পুড়ে গেছে।


ছয় ভাইবোনের মধ্যে ইউসুফ মেজো। ইউসুফকে নিয়ে তাঁর বড় ভাই ইসমাইলের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকেরা এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হয়। ’ হাসপাতালের চিকিৎসক মিসমা ইসলাম বলেন, ‘দুজনের শরীরে পোড়া বেশি।

কামালের পোড়াটা একটু গভীর। তাঁর চোখের অবস্থাও খারাপ। এখনই তাঁদের বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।