বিনা যুদ্ধে নাহি দিব ছাড়,সূচাগ্র মেদিনীর অধিকার.... । দূর্যোধন বসিয়া বসিয়া ইক্ষু চাবাইতেছিলো। বড্ড গরম পড়িয়াছে আজকাল,শরীরে কাপড় রাখাই প্রায়ই দায় হইয়া পড়ে। এমন অবস্থায় অপ্সরা মেনকা প্রভৃতির সুধাও দেখিতে বড়ই বিরক্ত লাগে। আর নাগরিকগুলাও হইয়াছে আজকাল বদের বদ।
কথায় কথায় ভাতারদিগকে ডাকিয়া ডাকিয়া এক একটা হুজ্জত পাকায়।
নাহ,শান্তিমত হসিনিপুর শাসন করাটাই মহা ঝামেলার ব্যাপার হইয়া দাড়াইয়াছে।
রোস,বৈষ্ণিক উষ্ণতা একটু কমুক,পান্ডবকুলকে বুঝায়া দিবো কত তামুকে কত ধ্রুমশলাকা।
এরই মাঝে কোথা হইতে হুড়মুড় করিয়া গওহর শকুনি আসিয়া হাজির হইলো।
নিবিষ্টমনে ইক্ষুতে একখানা কামড় বসাইয়া দূর্যোধন জিজ্ঞেস করিলো,''কিহে মাতুল,এত প্রত্যুষে আপনাকে কখনো তো দেখিনাই,পুরাতন আমাশয় কি আবার দেখা দিলো?''
গওহর শকুনি কিঞ্চিৎ থতমত খাইয়া গেলেন,তিনি অবশ্য বিলক্ষন তাহার এই ভগিনীপুত্রের মুখ নিঃসৃত আচমকা বানী শুনিয়া অভ্যস্ত।
সুতরাং বেজার মুখে বলিলেন,''ভগিনীপুত্র,তুমি কি গতকাল দাড়িপুত্র যুধিষ্ঠিরের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হইয়াছো?''
দূর্যোধন হাস্যমুখে বলিলো,''কেন?জঙ্গলে ওয়াজ মারাইতে গিয়া কি আবার ধাওয়া খাইয়াছে নাকি?''
গওহর শকুনি বলিলো,''উহুঁ,গতকল্য তাহার তোমার পাইক বরকন্দাজদিগকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জতুগৃহ প্রজ্জ্বলন দেখাইয়াছে। '
দূর্যোধন চিন্তায় পড়িয়া গেলো। জিজ্ঞেস করিলো,'' কেন ধর্মপুত্র এত খেপিলো?উহাকে তো শান্তশিষ্ট দাড়ি-বিশিষ্ট বলিয়াই জানিতাম!''
গওহর শকুনি কিন্চিৎ কাছে ঘেষিঁয়া ফিসফিসাইয়া কিছু একটা বলিতে গেলো,কিন্তু দূর্যোধন দুরে ছিটকাইয়া গেলো। বলিলো,''সামনে ঘেষিবেন না মাতুল,দুর হইতেই বলুন... আম্রিকাননের তসবিরখানা বড়ই অরুচিকর। ''
শকুনি বিরক্ত হইয়া দুরত্ব রাখিয়াই বলিলো,''কুরুক্ষেত্র পরবর্তী বিচার ব্যবস্থা নিয়া উহারা বিরক্ত,তদুপরি যুধিষ্ঠিরের স্বর্গে গমনের পূর্বেই তুমি সেখানে গমন করিয়াছো।
ইহাতে ওবামিন্দ্রেরও সায় ছিলো,সুতরাং বুঝিতেই পারিতেছো......''
দূর্যোধন বুঝিলো,পান্ডবকুল কিছু একটা ঘোঁট পাকাইতে যাইতেছে। ঐদিকে মতিনন্দ অ্যাসাঞ্জকুমারের সহযোগিতায় প্রায়দিনই উল্টাপাল্টা পান্ডুলিপি বিতরন করিতেছে। এইবারও মনে হয় কদলিবেল পুরষ্কারখানা হাতছাড়া হইয়া না যায়,হতচ্ছাড়ার দল!!সুতরাং ডাকো ভগিনী দুঃশাহালা কে।
ভগিনী ঘরে প্রবেশ করিয়াই বলিলেন,''আজ দেখি প্রচন্ড গরম,এ নিশ্চয়ই কুরুক্ষেত্র পরবর্তী বিচার বাধা দিবার জন্য পান্ডবদিগের ছল চাতুরী!'' । দুর্যোধন বুঝিল,এই ভগিনীকে দিয়াই হইবে।
''হুম,কথা ঠিকই বলিয়াছো.... পাঠাইয়াছিলাম নির্বাসনে,কিন্তু ব্যাটারা আর সহ্য করিতে চাহিতেছেনা। ঐদিকে দ্রৌপদী হারামাজাদিও অন্তর্ডালে আর মুখবইয়ে অপপ্রচার চালাইতেছে-এই বলিতেছে যে উহাকে নাকি দুঃশাসন বারবার কাপড় খুলিয়া নিতে চাহিতেছে!এইসব শুনাইয়া সকলের মন দ্রবীভুত করিতেছে মাগি!!'', খিস্তি করিলো দূর্যোধন।
গওহর শকুনি ফিচকে হাসিয়া বলিলো,''কথা তো ঠিকই বলিয়াছে, খালি দুঃশাসনই না,পান্ডবরাও যে নিত্যদিন উহার বস্ত্র খুলিয়া নেয়,তখন ?? ''
দূর্যোধন বলিলো,''খুলার মত কিছু থাকিলে তো খুলিবেই.... এই দ্রোপদীর কারনেই আজ কৌরব আর পান্ডবরা আলাদা হইলো,এখন শাড়ি খুলিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিবেনা তো কি ইয়ে করিবে?''
দুঃশহালা দাঁত বাহির করিয়া কথোপকথন শুনিতেছিলো। চশমাখানি ঠিক করিয়া নিয়া বলিলো, ''আমি কি জঙলে ভ্রাম্যমান বিচারালয় পাঠাইয়া উহাদিগকে ঠ্যাঙাইয়া আসিবো ? অথবা দ্রৌপদীর শাড়িখানা ..... ''
দূর্যোধন রোষকশায়িত নয়নে তাহার দিকে দৃষ্টিপাত করিলো।
গওহর শকুনির মুখখানা শয়তানি হাসিতে উজ্জ্বল হইলো।
বলিলো,''ভগিনীপুত্র,উপায় পাইয়াছি। আইসো,কানে-মুখে বলিবো ''
দূর্যোধন বিরসমুখে কান আগাইয়া দিলো। কিয়ৎক্ষন পরে তাহার মুখও উজ্জ্বল হইয়া উঠিলো।
পরবর্তী প্রত্যুষে হসিনিপুরের সকলে নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়া দেখিলো রাস্তাঘাটের সর্বত্র কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়া ''তথ্য আদান-প্রদান আইন ২১১'' সাটাঁইয়া দেওয়া হইয়াছে ,
-------------তথ্য আদান প্রদান আইন ২১১------------
১.কোন শাখামৃগ কুরু অথবা পান্ডুদের সংবাদ আদান প্রদান করিতে পারিবেন না।
২.কোনো আসরে গিয়া দূর্যোধনের সমালোচনা করা যাইবেনা।
৪.হসিনিপুরের আদর্শ ও লক্ষ্যের সমালোচনা করা যাইবেনা।
৪.বন্ধুপ্রতিম রাজ্যের রাজাদের নিয়া সমালোচনা করা যাইবেনা।
৫.বস্ত্রহরণ অথবা বস্ত্রপ্রদান অথবা বস্ত্র সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা যাইবেনা।
৬.মেনকা মল্লিকা কমলিকাদের চুম্মাচাট্টি উপভোগ করা যাইবেনা।
৭. ......
৮. .......
--------------------------------------------------------------------
একইসাথে চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।