এক গ্রামের এক চাষীর মেয়েটি ছিল খুবই সুন্দরী। তাকে দেখে এক সিংহের বিয়ে করার সাধ হল। তাই একদিন চাষীকে গিয়ে সে তার ইচ্ছের কথা জানাল।
চাষী বেচারা পড়ল মহা ফাঁপড়ে। হিংস্র সিংহের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবার কথা সে ভাবতেও পারে না।
কিন্তু সে কথা বললেই তো সিংহ তার ঘাড় মটকাবে।
সিংহকে কি জবাব দেয় এ কথা ভাবতে ভাবতে চাষীর মাথায় বুদ্ধি এসে গেল। সে সিংহকে বলল, তুমি হলে পশুদের রাজা। তোমার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হলে সে হবে রাণী। এতো খুব সুখের কথা।
তবে কিনা একটা কথা – মেয়েতো বড় হয়েছে। তার মতামতটাও শোনা দরকার। সিংহ খুশি হয়ে বলল, তা বেশ তো। বাড়ির ভিতর থেকে তার মতামত টা তুমি জেনে এসো ততক্ষণ আমি এখানে বসছি।
সিংহকে উঠানে বসিয়ে রেখে চাষী গেল বাড়ির ভেতরে।
কিছু সময় পরে ফিরে এসে সিংহকে বলল, মেয়ে তো শুনে মহা খুশি হে। তবে তার একটা শর্ত আছে। সিংহ উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠল, বেশ, বেশ শর্তটা কি শুনি?
চাষী বলল, মেয়ে বলেছে, তোমার নখ আর দাঁতগুলোকে তার বড় ভয়। যদি নখ গুলো উপড়ে ফেল আর দাঁতগুলোকে তুলে ফেলতে রাজি থাক, তাহলে তোমাকে বিয়ে করতে তার কোন আপত্তি নেই। চাষীর মেয়ের রূপ দেখে সিংহ এমনই মুগ্ধ হয়েছিল যে সঙ্গে সঙ্গে শর্তে রাজি হয়ে গেল।
সে বলল এ আর এমন কী বড় কথা। আমি এখুনি দাঁত নখ ফেলে আসছি।
এই বলে সে বনে গিয়ে দাঁত দিয়ে টেনে টেনে এক এক করে প্রথমে চার থাবার সব নখ উপড়ালো। তারপর নানান কায়দায় বহু কষ্টে খসিয়ে ফেলল মুখের সব দাঁত। সে এক রক্তারক্তি কান্ড।
কিন্তু বিয়ের আনন্দে কষ্টকে সিংহ কষ্ট বলে মনেই করল না।
নখ ও দাঁত সাফ করে সিংহ চাষীর কাছে এসে বলল, এবার তোমার মেয়েকে নিয়ে এসো। এই বেলা তাড়াতড়ি বিয়েটা সেরে নেয়া যাক।
বাঃ বাঃ বেশ করেছ, বলতে বলতে চাষী সিংহকে খাতির দেখিয়ে দাওয়ায় বসতে দিল। তারপর মেয়েকে আনতে বাড়ির ভেতর ঢুকল।
শরীরের যন্ত্রণায় এমনিতেই সিংহের নাজেহাল অবস্থা। দু’দন্ড বসেই তার মনে হতে লাগলো অনেক সময়।
চাষী ভেতরে গেছে কিন্তু বাড়ি থেকে আর বেরুনোর নাম করছে না। সিংহ কেবলই উসখুশ করতে থাকে। তবু মনকে সে এই বলে প্রবোধ দেয়, বিয়ের কনেতো তাই সাজিয়ে-গুজিয়ে আনতে সময় লাগছে।
আশায় আশায় তাই সে ধৈর্য ধরে বসে থাকে।
কিছু সময় পরে হাতে একটা বড়সড় মুগুর নিয়ে চাষী এল বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর সেই সাথে মুগুরের দমাদম পিটুনি পড়তে লাগলো সিংহের পিঠে।
দাঁত নেই নখ নেই এখন সিংহ তো অসহায় ছাগলের মত। চাষীকে ঘায়েল করার সব অস্ত্রই সে খুইয়েছে। তাই মুগুরের বেধড়ক পিটুনি খেয়ে বেচারার কেবল ঘন ঘন গর্জন তোলা আর মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া ছাড়া আর কিছু করার উপায় ছিল না।
শেষে প্রাণটা নিয়ে কোন মতে টেনে দিল পিঠ টান।
নীতিকথাঃ কাজ করার আগে তার ভালমন্দ সব দিক বিচার করে দেখতে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।