আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ রহস্যপুরুষ

বর্তমানে বিশ্বের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জ (৪০)। তার জন্ম ১৯৭১ সালের ৩ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের টাউন্সভিলে। তবে তরুণ বয়স পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছেন ম্যাগনেটিক আইসল্যান্ডে। তার বাবার নাম জন শিপটন, মা ক্রিস্টিন। অ্যাসাঞ্জের মায়ের জন্ম স্কটল্যান্ডে।

অ্যাসাঞ্জ দাবি করেন, তার দাদা ছিলেন তাইওয়ানি জলদস্যু। পূর্বকথা জুলিয়ানের বয়স যখন এক বছর তখন তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তার মা বিয়ে করেন নাট্য পরিচালক ব্রেট অ্যাসাজকে। ব্রেট তার পরিবারিক উপাধি জুলিয়ানের নামের সঙ্গে যুক্ত করেন। সেই থেকে জুলিয়ান শিপটন থেকে তিনি হলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।

তার সৎবাবা ব্রেট এবং মা ক্রিস্টিন একটি ভ্রাম্যমাণ নাট্য কোম্পানি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পরিভ্রমণ করতেন। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে তার সৎবাবা 'অতি বুদ্ধিমান ছেলে' বলে অভিহিত করেন। ছোটবেলা থেকেই জুলিয়ান 'ন্যায় এবং অন্যায়ে'র ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। তিনি সবসময় নিপীড়িতদের পক্ষ নিতেন বলে ব্রেট জানিয়েছেন। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে অস্ট্রেলিয়ার অন্তত ৩০টি ভিন্ন অঞ্চলে বাস করতে হয়েছে পারিবারিক কারণে।

১৯৭৯ সালে এসে তার মা পুনরায় এক মিউজিশিয়ানকে বিয়ে করেন। সে সময় নিউএজ গ্রুপ নামে পরিচিত 'শান্তিনিকেতন পার্ক অ্যাসোসিয়েশনে'র সদস্য ছিলেন তার দ্বিতীয় সৎবাবা। সেই বাবার সঙ্গে ১৯৮২ সালে তার মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ততদিনে জুলিয়ানের এক সৎভাই জন্ম নিয়েছে। এই ভাই কার কাছে প্রতিপালিত হবে_ এ নিয়ে তার বাবা-মায়ের মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হয়।

একদিন তার মা তার দুই সন্তানসহ নতুন বন্ধুর সঙ্গে শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। পাঁচ বছর তার মা ক্রিস্টিন তার দুই সন্তানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে আত্মগোপন করে থাকেন। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত গুলমাঙ্গার প্রাইমারি স্কুলসহ বহু স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে তাকে অস্ট্রেলিয়ার ৫০টি শহরে এবং ৩৭টি পৃথক স্কুলে পড়াশোনা করতে হয়েছে। অনেক সময় স্কুলে না গিয়ে তাকে বাড়িতেই চালিয়ে যেতে হয়েছে লেখাপড়া।

বসবাস জন্মগতভাবে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও অ্যাসাঞ্জের কোনো দেশেই স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়া ছাড়াও ২০১০ সালের ৩০ মার্চ থেকে তিনি আইসল্যান্ডে বসবাস শুর করেন। ওই বছর অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্য, আইসল্যান্ড, সুইডেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ভ্রমণ করেন। সুইজারল্যান্ডের সরকারি টিভি চ্যানেল 'টিএসআরে' চাকরি করার সময় তিনি সেদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছিলেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেদেশের সরকারকে অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়ার জন্য সতর্ক করে দেন।

অনেক সময় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ 'পোস্ট অফিস বক্স'কে তার ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কর্ম ও ব্যক্তিজীবন ২০০৬ সালে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ 'উইকিলিকস' প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের মধ্যে ওয়েবসাইট উইকিলিকস গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৭ সাল থেকেই অ্যাসাঞ্জ কম্পিউটার হ্যাকিং শুরু করেন। ইরাক এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধের গোপন তারবার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

১৯৮৯ সালে অ্যাসাঞ্জ তার বান্ধবীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। ওই বান্ধবীর ঔরসে তার ছেলে ড্যানিয়েল অ্যাসাঞ্জের জন্ম। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্ক ও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনে অ্যাসাঞ্জ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যৌন কেলেঙ্কারি ২০১০ সালের ২০ আগস্ট সুইডেনের পুলিশ দুই মহিলার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কের কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

তার বিরুদ্ধে সুইডেনের আদালতে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। যদিও অ্যাসাঞ্জ একে 'ভিত্তিহীন' এবং তার বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্র' বলে অভিহিত করেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ অভিযোগে অ্যাসাঞ্জকে ব্রিটেনে গ্রেফতার করা হয়। সুইডেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেদেশে নিয়ে আসার আইনগত উদ্যোগ নেয়; কিন্তু ব্রিটেনের আদালত শর্তসাপেক্ষে অ্যাসাঞ্জকে জামিন মঞ্জুর এবং ব্রিটেন ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

সেই থেকে উইকিলিকসের নির্বাহী সম্পাদক, বিতর্কিত ও আলোচিত ব্যক্তি জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জ ব্রিটেনে গৃহবন্দি হয়ে আছেন। বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক গোপন তারবার্তা ফাঁস করে তার প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে। তার প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সার্ভার পৃথিবীর বহু দেশে অত্যন্ত গোপনীয় সুরক্ষিত স্থানে রাখা আছে। এসব স্থান থেকে মাঝে মধ্যে বিপুলসংখ্যক গোপন নথি প্রকাশ করে তিনি প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছেন। অ্যাসাঞ্জ এবং উইকিলিকস এখন রহস্যের আলো-আঁধারিতে আচ্ছাদিত দুটি রহস্যময় নাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.