সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা পূর্ববর্তী পর্ব পর্ব ৬
স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখা হয় ওয়াসীম সর্দারের সাথে। সম্পর্কে মামা হয়। আসাদের মধ্যে একটি ভয় ঢুকে গেছে। কেউ ডাকলেই মনে হয় স্কুলের কথা জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু কেউ কিছুই বলে না, স্কুল নিয়ে।
তেমন কথা হয় না, কেমন আছো ভাল আছি টাইপের কথা হয়। ওয়াসীম সর্দারের সাথে ৭ বছর আগের একটি ঘটনা মনে পড়ে।
মানিকজোড় যাকে বলে অসীম আসাদের সে রকমের বন্ধু। একজন ঢাকা কলেজে আরেকজন নটরডেম কলেজে পড়তো। অসীম হলে আর আসাদ ম্যাছে।
বহু বছরের মধ্যে ওরাই দুই বন্ধু এই গ্রাম থেকে দেশের সেরা দুটি কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। ওরা একসাথে বাড়ি আসে, একসাথে ঢাকায় যায়, একসাথে গ্রামেও ঘুড়ে বেড়ায়। আবার একসাথেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ভাগ্যকুল জামে মসজিদের পাশ দিয়ে নদীর পাড়ের দিকে যাচ্ছিল। মসজিদের বারান্দা থেকে ওয়াসিম সর্দার ডাক দিলেন, ভাইগনা এদিকে আয়।
ওয়াসিম সর্দার আপন মামা নয়। কি কারণে আসাদ তাকে মামা ডাকে নিজেও জানে না। লোকটাকে পছন্দ করে না। তার মূল পেশা বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, আজান দেয়।
মাঝেমধ্যে ইমামতিও করে। আসাদ এগিয়ে যায়। সালাম দেয়। জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছেন মামা।
ওয়াসিম সর্দার জোড় গলায় বলেন, তুই যে দিনরাত একটা মালাউনের সাথে ঘুরে বেড়াস, আখেরাতে কি জবাব দিবি?
আসাদ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, অসীম শুনে ফেলল কিনা।
বলে, মামা ও ভাল ছাত্র, ওর মতো ভাল ছেলে আর কে আছে এই গ্রামে? মুসলমানরা আর কেউতো সেভাবে পড়ে না।
ওয়াসীম সর্দার আরো জোড় গলায় বলেন, খৃষ্টানগো কলেজে পড়ে ইহুদী নাছাড়া হচ্ছস। নাছাড়াগো সাথে থাকলে তুইও নাছাড়া হবি। আসাদ বুঝতে পারে অসীমকে শোনানোর জন্যই ওয়াসীম সর্দার জোড় গলায় কথা বলছে। অসীমের ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আরো বিব্রত হয়ে পড়ে।
ওরা নদীর দিকে হাটতে থাকে। অনেকক্ষণ পড়ে অসীমই নিরবতা ভাঙ্গে, আসাদ আমরা এসব শুনে অভ্যস্ত। তোর মন খারাপ করার কিছু নাই। বিকেলে হাবীবের সাথে দেখা হলে, ওয়াসীম সর্দারের প্রসঙ্গ উঠাতেই বলে, ওতো হারামজাদা টাইপের লোক। ভারতে অনেকদিন গায়ল করে, হাড়ি পাতিল বিক্রি করেছে।
বছরে একবার দেশে আসতো। এখন বৈদ্যুতিক কাজ করে এবং সাইকেল মেরামতের দোকান দিছে। তবে রসিক মানুষও। আমার সাথে গুড সম্পর্ক। কদিন আগে গান শুনাল।
গলা কাশি দিয়ে হাবীব গান ধরে।
সাধের ভাইগনারে তুই ভাল তোর মামা ভাল না .. ..
গানটি অশ্লিল। রাধা তার প্রেমিক প্রবর কৃষ্ণকে আহবান করে। যৌন তাড়না আর যৌন ক্রিয়ার গান। আর একটি গান শোনায় ঐ যে রাধার ফাঁক দেখা যায়।
এই গানটিও রাধাকৃষ্ণের এবং যথারীতি অশ্লিল মনে হয় আসাদ ও হাবিবের কাছে। আসাদ বলে, আমিতো মনে করেছিলাম উগ্রপন্থী লোক। হাবীব কথা কেড়ে নিয়ে বলে, এখনো উগ্রপন্থীই। তবে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নয়। এখন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ করে।
মিলিরে বিয়া করতে চায়। এখনকার বউর সাথে নাকী কাজ হয় না। আমি জানতে চেয়েছিলাম, কাম না হইলে বছর বছর পোলাপান হচ্ছে কিভাবে? আসলে বাজারের মাইয়া মিলিরে দেখে ওর মাথা খারাপ হইছে। মিলিরতো বাজারে নাং এর কমতি নাই। মনে হয় ওয়াসিম সর্দাররেও কাম দেয়।
সেই প্রাইমারী জীবন থেকেই অসীম আর আসাদ দুই বন্ধু হরিহর আত্মা। একজন আরেকজনকে এগিয়ে দিয়ে আসে, আমার উল্টোটা ঘটে এভাবে অনেকবার ঘটে। অসীমকে বাড়িতে দিয়ে আসাদ বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে ওয়াসিম সর্দার ধরলেন। ভাইগনা তুমি নাকি অসীমদের বাড়িতে ভাত খাও।
আসাদের খুবই রাগ লাগে। জিদ চেপে রেখে বলে, হ্যাঁ খাই, এই তো এখনই খেয়ে আসলাম। নাছোরবান্দা ওয়াসীম সর্দার জিজ্ঞাসা করে, কাছিম কুছিম খাওয়ায় নি আবার?
আসাদের রাগ এবার প্রকাশ পায়। কঠিনভাবে বলে, বাজারের মাইয়াগো লগে আকাম কুকাম করার চেয়ে কাছিম খাওয়া বেশি খারাপ না।
ওয়াসীম সর্দার হেসে ফেলে।
আসাদের মনে হয় লোকটি ব্যক্তিত্ব আসলেই নাই। আসাদ একটু লজ্জা পায়। ওয়াসীম সর্দার বলে, ভাইগনা কি রাগ করলা নি? তোমার বাবা নামকরা আলেম। তোমার মেঝোভাইও আলেম। সেই জন্যই বলা।
আসাদ মনে করার চেষ্টা করে সকালে এই লোকটি তাকে তুই তুই করে বলেছে এখন বলছে তুমি তুমি। কিছুটা এগিয়ে গেলে ওয়াসীম সর্দার ডাকে, ভাইগনা শুনে যাও। শোনলাম তুমি নাকী লট্টরড্রাম কলেজে পড়।
আসাদ বলে, হ্যাঁ পড়তাম কলেজের নাম নটর ডেম কলেজ। ওখান থেকে পাশ করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি পড়ি।
এবার ওয়াসীম সর্দার পকেট থেকে ২৫ পয়সা বের করে বলল, ভাইগনা একটা বিড়ি কিনে দিয়ে যাওতো। আসাদ বুঝতে পারে ওকে ছোট করার জন্য এ কাজটি করছে। আসাদ একটি বিড়ি কিনে দেয়। ওয়াসীম সর্দার ভাবে তুমি যত বড়ই হও বলতে পারুম ওকে দিয়ে বিড়ি কিনিয়ে খেয়েছি।
পরের মাসে বাড়ি এসে শুনে ওয়সীম সর্দার বৈদ্যুতিক তার চুরি করে ধরা খেয়েছে।
কদিন আগে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়, কয়েক সপ্তাহ আগে গ্রামে সদ্য লাগানো বৈদ্যুতিক তার চুরি অভিযোগে। বেদম মারপিট করেছে। এখন জেলে আছে। পিতার থানা হাজত, জেল, অসুস্থতার সুযোগে ওয়াসীম সর্দারের বড় মেয়েটি তার সহকারী জালালের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে গ্রামে ফিরে এসেছে। শ্বশুর বাড়ির হাল ধরেছে।
গ্রামের লোকেরা বলছে, সর্দারের স্ত্রীই ওদের পালিয়ে বিয়ে করতে সহায়তা করেছে। সে ভেবেছিল তার আত্মীয় স্বজনরা এই বিয়ে মেনে নিবে না। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য নিজস্ব লোক দরকার। এতে দোকানও চালু থাকবে।
ওয়াসিম সর্দার কিছু বলে না।
হাফ ছেড়ে বাঁচে আসাদ।
রাতে আসে গ্রামের সিনিয়র আলম ভাই। আসাদ ভয় পেয়ে যায়। কি জবাব দিবে। কেউতো আসাদকে বিশ্বাস করবে না।
আলম ভাই তাকে বলে, শুনলাম তুমি স্কুলে ভালই পড়াও। আমিতো এমএ পরীক্ষা দিবো। তুমি আমার মাদ্রাসায় আমার পরিবর্তে মাস খানেক ক্লাশ করালে আমার জন্য বিরাট উপকার হয়। আসাদ হাফ ছেড়ে বাঁচে। ও কাল সকালেই হয়তো ঢাকা ফিরে যেতো।
কোথায় উঠবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল। আসাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ চলে আসে। এটাই সেই মাদ্রাসা যেখানে ছাত্রাবস্থায় আসাদ ধর্ষিত হয়েছিল। আসাদকে জানতে হবে, এই মাদ্রাসা থেকে তার মধ্যে সিফিলিসের জীবাণূ প্রবেশ করেছে কিনা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।