সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা প্রথম পর্ব পর্ব দুই
দিন দশেক অসীমের খবর নেই। হরতালের দিন সকাল আটটায় অসীম আসে। আসাদকে নিয়ে দুই বন্ধু বের হয় সালমার পিতার খুঁজে। সে জনতা ব্যাংকে চাকরী করতো। প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে যায়।
ওর বাবার নামটি অদ্ভুদ, একবার শুনলেই মনে রাখার মতো- সৈয়দ হুরমুজ আলী। পার্সোনাল ডিভিশনের এক ভদ্র লোক ঠিকই চিনে ফেললেন। বললেন, কয়েক বছর আগে অবসরে গেছেন। জনতা ব্যাংক গুলশান শাখা হতে। আপনারা গুলশান শাখায় গেলে খোঁজ পেতে পারেন।
ওখান থেকেই অবসরে গেছে। আসাদ আমতা আমতা করে। ওর ড্রেস ভাল নয় বলতেই মতিঝিল ফুটপাথ থেকেই একটি নতুন সার্ট কিনে ফেলে। তবুও যেতে হবে।
গুলশান গিয়ে একটি ঠিকানা পায় বাড্ডার।
ওর অভিযানে নামে ঠিকানা মিলাতে মিলাতে পেয়ে যায় কাঙিক্ষত বাড়ির নাম্বার। নিচতলায় জনতা ব্যাংকের বাড্ডা অফিস। মনে হয় দোতলায় পরিবার থাকে। গেটে নাম লেখা। ওরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে, যাক অবশেষে পাওয়া গেল।
অল্পতেই ওদেও নজওে আসে নিচেই বড় বড় দুটি তালা ঝুলছে। সৈয়দ হরমুজ আলী যে বেশ কিছু দিনই এখানে থাকে না বা থাকবেন না সেটা বুঝা যায়।
অসীম বলে, তোর শ্বশুরের বুদ্ধি দেখছিস; কেউ যাতে জমি দখল করতে না পারে তার জন্য ব্যাংকের নিকট ভাড়া দিয়েছে।
-আমার শ্বশুর বানালি কি হিসাবে?
-দুষ্টুমি করে তোর প্রতিক্রিয়া দেখলাম।
অসীম ব্যাংকের ভিতরে ঢোকে, চলে যায় সরাসরি ম্যানেজারের কক্ষে।
আসাদ ওকে অনুসরণ করে। হরতালের কারণে ব্যাংক অনেকটা ফাঁকা। অসীম সালাম দিয়ে বলে বাড়ির মালিক সৈয়দ সাহেব আমার আত্মীয়। ওনি কোথায় গেছন বলতে পারেন?
ম্যানেজার বললেন, আপনারা কি ইন্ডিয়া থেকে এসেছেন?
অসীম বলে, না না আমাদের বাড়ি বিক্রমপুর।
এ্যানেজার সাহেব অবাক হয়ে বলেন, বলেন কি? এদেশে ওনার কোন আত্মীয় আছেন বলে তো জানি না?
আসাদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে, আসলে ওনি বিক্রমপুরে চাকুরি করার সময় আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন।
আমার আব্বার সাথে ঘণিষ্ঠতা রয়েছে। আব্বা খোঁজ নিতে বলেছেন। এজন্যই আসা। আমরা দুজনেই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স পড়ছি।
ম্যানেজার সাহেব ওদের জব্দ করার মানসিকতা ত্যাগ করে স্বাভাবিক হলেন।
বললেন, ওনিতো সর্বদায়ই তাবলীগে থাকেন। চিল্লা দেয়া হলে বাড়ি এসে দুই একদিন থাকেন আবার চলে যান। আসাদ সালাম দিয়ে ওঠে পড়ে। অস্বস্তি লাগে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তাবলীগে আসা এক মুরুব্বীর সাথে বাংলাদেশের কয়েকজন ওদের কক্ষে আসে।
রফিক ওনাদের অপদস্ত করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমান নাই সেখানে ধর্ম প্রচার না করে বাংলাদেশে কেন? এদেশে মুসলমানতো ৯০% ভাগ। ওনাদের কথা বলার সুযোগই দেয় না। ওনারাও শেষে চলে যেতে বাধ্য হন। তাদের মধ্যে কি সৈয়দ সাহেব ছিলেন? আসাদ মনে করার চেষ্টা করে।
রফিক আরেকদিন শীতের ভোরে তাবলীগ কর্মীদের জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছিল। সেখানে কি সৈয়দ সাহেব ছিলেন? আসাদ লজ্জিত-কুণ্ঠিত হয়ে পড়ে।
অসীম ধক্কা দেয়। কিরে কি ভাবছিস? রিক্সার নীচে যাবি তো।
আসাদ বলে, কাকরাইল মসজিদে গেলে মনে হয় খোঁজ জানা যাবে।
অসীম বলে, ধুর! গিয়ে শুনলি কক্সবাজার গেছে। তুই কি কক্সবাজার ছুটবি? বরং ম্যানেজার সাহেবের নাম্বার নিয়ে এসে ফোন করে জানা। অবশ্য এতেও সমস্যা আছে। তুই ১ সপ্তাহ পরপর ফোন করলি। একদিন শুনলি গত পরশু এসেছিল গতকাল চলে গেছে।
আরেকটি কাজ করতে পারিস। গেটের ভিতর ডাক বাক্স আছে। চিঠি লিখলি। ঠিকানা দিলি। কাকরাইলের কাছেই থাকিস, ওনি তোর হলেই চলে আসতে পারে।
পরামর্শটা আসাদের মনে ধরে।
অনেকক্ষণ হাটার পরে আসাদ বলে, অসীম আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আমার শরীরে সিফিলিসের জীবাণূ ছিল। কার কাছ থেকে আসলো? শধুমাত্র দুটি পথ- এক সালমা। ওর মধ্যে যদি থাকতো জানা যাবে ওদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমেই। আর দ্বিতীয় পথ হল ঐ মাদ্রাসার শিক্ষদের বা ছাত্রদের মধ্যে এই রোগটা কতটা তা থেকে।
সালমাই সহজ সমাধান। কিন্তু সালমা দেশে কিনা তাওতো জানি না।
অসীম বলে, তুই মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেল। শরীরে বিভিন্ন জীবাণু প্রবেশ করে। এমনিতে ভাল না হলে ঔষধ খাই।
এটাকেও এরকমই ভাবসনা কেন? দেখ আমরা তখন সিক্স সেভেনে পড়ি। আমাদের পাড়াটা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। অন্যরা তেমন পড়তোও না। একমাসের কীত্তনের সময় আমাদের বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে পলান্তি খেলা শুরু হয়। জোড়ায় জোড়ায় জোড়ায় আত্মগোপনে গিয়ে...
আসাদের মাথায় চট করে ধরা পড়ে।
অসীমদের পাড়ায় কীত্তন দেখতে গিয়ে পলান্তি খেলতে গিয়েছিল। আসাদ আত্মগোপন করেছিল দোলাদিদের ঘরে। দোলাদি বলে খিল আটকে দে কেউ বুঝতে পারবে না। আসাদ খিল আটকে দেয়। দোলাদি বলে, চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়।
আসাদ তাই করেছিল। দোলাদিকে সর্বদায়ই ভয়ের চোখে দেখতো আসাদ। দেখতে যেমন স্বাস্থ্যবতী দর্শনও ভয়াল। দোলাদি চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আসাদ ভয়ে গুটিয়ে যাওয়াতে দিদি সফল হতে পারেনি।
আসাদ অসীমকে বলে, দোলাদি এখন কোথায় থাকে জানিস?
-কেন?
-তোদের ওই পলান্তি খেলায় আমি দোলাদির হাতে ধরা পড়েছিলাম।
-বলিস কি? তাহলে দোলাদিই নাটের গুরু।
-তুই কিভাবে নিশ্চিত হলি। আমিও সিফিলিসে আক্্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ওই ডাক্তারের কাছে গেলাম।
দোলাদির বিষয়টি ডাক্তারকে বলিনি। তোর বিষয়টিতো সে জানেই। সে বলেছিল এটা ছোঁয়াচে রোগ। তোর কাছ থেকেই এসেছে বলে ভেবে নিয়েছি। দোলাদি আমাকেও ফাঁদে ফেলেছিল।
-বলিস কি? তোরও সিফিলিস!
- দোলাদির সাথে হরগবিন্দদার সম্পর্ক ছিল বলে আমাকে জানিয়েছিল। সে তখনই একটি ঔষধের দোকান চালাতো। সম্ভবত দোলাদি প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়েছিল। হরগবিন্দদা বিহিতও করেছিল। ওরা চাচাতো ভাইবোন বলে ব্যাপারটা নিয়ে হইচই হয়নি।
-এখন কোথায় আছে?
-ভারত চলে গিয়েছিল। শুনেছি প্রথম সন্তান হওয়ার সময়ই মারা যায়।
-দোলাদির সিফিলিস ছিল কিনা এটা জানা গেলেও এই সমস্যার সমাধান হয়। একটি পথ অবশ্য আছে; সেটা হল হরগবিন্দ দা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।