সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা
প্রথম দুই পর্ব পড়ুন
তৃতীয় পর্ব
হরগোবিন্দ অসীমের কাছে ধরা খাওয়া মানুষ। বিয়ের এক যুগ পরেও শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে এক রাতে দেখে বউ নাই। খুঁজতে গিয়ে দেশে পূর্বপ্রেমিকের সথে আপত্তিকর অবস্থায়। বড় মেয়েটি তখন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে সিক্সে উঠেছে, ছেলেটি থ্রিতে। হরগোবিন্দ যখন স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছিল তখন অসীমের ঢাকা কলেজের হলে আসে শেষ পরামর্শের জন্য।
অসীম বলেছিল দাদা আপনিতো কতো কিছু করেছেন। পার্থক্য বৌদী তা দেখে নাই। দ্বিতীয় বিয়ে করে কেউ কখনো সুখী হয় না। বৌদী যেহেতু সংসার করতে চায়, এটাকে ভুল হিসাবে ক্ষমা করে সংসার করেন। আর শ্বশুর বাড়িতে বেড়ানো ছেড়ে দেন।
হরগোবিন্দ তাই করেছিল। আজ তার ছেলে মেয়ে দুটি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। সে গর্বিত পিতা। আরেক যায়গাতেও ধরা খাওয়া আছে। হরগোবিন্দ তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে রীতা ফার্মেসীতে ম্যানেজার হিসাবে চাকুরি করে।
একদিন টিউশনী করে ফেরার পথে অসীম দেখে দোকানের সামনে জটলা। পুলিশ, কয়েকজন মাস্তান, সাংবাদিক ও জনতার ভীর। দোকানের সাননে গিয়ে দেখে কাউন্টারের উপর ফেন্সিডিলের বোতল, পেথিড্রিন আর মলমপার্টির মলম। অসীমকে দেখেই সে অস্বস্তি বোধ করে। হরগোবিন্দ বলে, কোন সমস্যা না।
তুই চলে যা, আমি তোর হলে গিয়ে দেখা করবো। রাতেই হলে সে হাজির হয়।
অসীম বিস্মিত হয়। হরগোবিন্দ বলে, দেখ এসব ব্যসাব সবার সাথে যোগাযোগ না করে করা যায় না। থানাকে মাসে ১ লক্ষ করে দিতাম।
এমপি আর কমিশনারের কথায় গত মাসে কম দিছিলাম। তাতে ওসি মাস্তান পাঠিয়ে সিনক্রিয়েট করায়। চাকটিরা ছাড়াও দরকার ছিল। মিডফোর্ডে দুটি ঔষধের দোকান আছে। ওগুলো ঠিক মতো দেখা হচ্ছিল না।
অসীম বলে, দাদা পত্রিকায় এলে সমস্যায় পড়বেন না।
হরগোবিন্দ বলে, ম্যানেজ করেছি। আসলেও সমস্যা নেই। নাম ঠিকানা দিয়েছি অন্য। আর রুমা ফার্মেসীতেতো আর যাচ্ছিও না।
তোর এসব নিয়ে ভাবা লাগবে না। তোর কাছে আসলাম, তোর উপর বিশ্বাস আছে তবুও অনুরোধ করছি এসব বিষয়ে কাউকে কিছু বলিস না।
সেই ধরা থাকার বিষয়টা মাথায় রেখেই অসীম গরগবিন্দকে ফোন করে।
- দাদা আমি অসীম, আপনি কেমন আছেন?
- আমি ভালই আছি। তোর তো কোন খোঁজ খবরই নাই
- দাদা আমার খোঁজ রাখে কে? আপনিতো বিজনেজ ম্যাগনেট, ব্যস্ত থাকেন।
- আমার লোকজেনের অভাব নাই। কাজতো ওরাই করে। তোর জন্য ব্যস্ততার কিছু নাই।
- আপনার মেয়ের গোল্ডেন এ প্লাসের খবর পেয়েছি, ছেলেটিও এইটে ট্যালেন্টপুল। কিছু খাওয়ালেন নাতো।
- কি খাবি? কোথায় খাবি?
- দাদা সাকুরায় আসতে পারলে ভাল হতো।
- মিডফোর্ড থেকে সাকুরায় যাওয়া যায়নি। এখন সাকুরার যুগ নয়। তুই আমার এখানে চলে আয়।
অসীম হরগবিন্দর অফিসে গেলে, সে কাকে যেন ফোন করে বলে, আমার এক ছোটভাইকে নিয়ে আসতেছি।
অসীম অবাক হয় মিডফোর্ড এলকায় এতো অভিজাত এ্যাপার্টমেন্ট দেখে। অস্টম তলায় গিয়ে দরোজার সামনে দাড়ালেই গেট খোলে এক সুন্দরী তরুণী দাদা বলে জরিয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। হরগোবিন্দ অসীমকে দেখিয়ে বলে আজ আমাকে নয় ওকে খুশি কর। অসীমের বুঝতে অসুবিধা হয় না এটা উচ্চবৃত্তের পতিতালয়। অসীম বলে কিন্তু দাদা আপনার সাথে আমার নিরিবিলি কথা বলা দরকার।
হরগোবিন্দ সেই ব্যাবস্থাই করে। অসীমের কাছে জানতে চায় কি খাবি?
অসীম বলে, আমি যেহেতু কম্যুনিস্ট, আপনি ভদকার কথাই বলেন।
ভদকায় চুমুক দিয়ে অসীম বলে, দাদা আপনার জেঠাতো বোন দোলা দির কথা আমার জানা দরকার। প্রেগন্যান্ট হলে আপনিইতো এ্যাবর্সনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন?
- তা করেছিলাম।
- ও প্রেগন্যান্টতো আপনার দারাই হয়েছিল।
- আরে না। এটা করেছিল ঠাকুর মশাই মানে মৃনাল ভট্টাচার্য।
- ঠাকুর মশাইর সাথে তো শুনেছিলাম মিলির বিধাব মায়ের সম্পর্কের কথা।
- অনেকের সাথেই ওনার সম্পর্ক ছিল। ওনার বউতো ছিল চিররুগ্ন।
বহু বছর যাবৎ রুগে ভোগছে।
- কিন্তু মেয়েগুলোতো ডাসা ডাসা।
- একটা এখানেও আছে। ডাকবো নি। বলে হরগোবিন্দ মুচকি হাসে।
- না দাদা। আপনি দোলার কথা বলেন। ও ইন্ডিয়াতে মা হতে গিয়ে মারা গেছে শুনেছি।
- গিয়েতো দেখিনি। তাইতো শুনেছি।
- দাদা আমি যৌনরোগের উপর একটি পেপার তৈরি করছি। দোলাকে নিয়ে এক্সপেরিম্যান্ট করবো। ওর যেহেতু অনেকের সাথে সম্পর্ক ছিল। ওর কি কোন যৌন রোগ ছিল? সিফিলিস?
- বলতে পারি না। দোলার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল ঠাকুর মশাইয়ের আগে।
আমিতো প্রটেকশন ব্যবহার করতাম। ঠাকুরের বিভিন্ন কু-অভ্যাস ছিল। ওনার কাছ থেকে দোলার মধ্যে কোন জীবাণু আসতেও পারে।
অসীম বুঝে নেয়, দাদার কাছ থেকে তেমন কিছু যানা যাবে না। ভদকায়ও কাজ শুরু করেছে।
ঠাকুরের মেয়ের কথা মনে পড়াতে, বলে অঞ্জলীকে এখানে কে এনেছে দাদা?
- তুই যে কারণে এখানে, দোলাও সেই কারণেই এখানে। ওর বাবা দোলাকে প্রেগন্যান্ট করেছিল, আমি ওকে করেছি। শোধবাদ হয়েছে। তয় দুই ক্ষেত্রেই সাফের ব্যবস্থা আমিই করেছি। আমার প্রতিশোধ স্পৃহা মারাত্মক।
তুই জানিস না তোর বৌদীর সাথে আর এক বিছানায় থাকিনি। আর ওই হারামজাদাকে যাবজ্জীবন জেলের ভাত খাওয়াচ্ছি। আমি ভালই আছি এই স্বর্গে।
অসীমের মাথা ঠিক মতো কাজ করছে না। তবুও জানতে চায়, ঠাকুর মশাইর সিফিলিস ছিল কি না?
হরগোবিন্দ বুঝে ফেলে অসীমের বিষয়।
সে বলে, দেখ এসব নিয়ে গ্রামের মানুষ হাতুড়ে ডাক্তারদের স্মরণাপন্ন হয়। ওনিতো স্বীকারও করবে না। তোর অবস্থাতো ভাল মনে হচ্ছে না। অঞ্জলিকে ডাকি ওর সাথে থেকে যা। আর সকালে অফিসে আসিস।
ভাল ডাক্তটার দেখিয়ে ঔষধের ব্যবস্থা করে দিব। সিফিলিস কোন রোগ হল? এইডস তো না।
অসীম না বলতে চেয়েছিল। কিন্তু পারলো না কিছু গুছিয়ে বলতে। বুঝে গেল এবার সেও ধরা খেল হরগোবিন্দর কাছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।